ভালোবাসা তখনই পূর্ণতা পায়, যখন তা দুই হৃদয়ের সংযোগে গাঁথা হয়। কিন্তু অনেক ভালোবাসা থেকে যায় একতরফা, অবহেলার ছায়ায় ঢাকা পড়ে যায় তার মমতা। অবহেলিত ভালোবাসার চিঠি সেই সব হৃদয়ের গল্প বলে, যারা ভালোবেসেছিল নিঃস্বার্থভাবে, কিন্তু পেয়েছিল শুধু দূরত্ব, অনুশোচনা আর নীরব প্রতিক্রিয়া। এই চিঠিটি সেই অবহেলিত ভালোবাসার এক মর্মস্পর্শী নিঃসৃতি, যা হয়তো কাউকে কখনো বলা হয়নি – কেবল শব্দের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে।
এখানে আপনি পাবেন:
অবহেলিত ভালোবাসার চিঠি
চিঠি: ১
প্রিয় তুমি,
জানি, এই চিঠি তোমার কাছে হয়তো আর কোনো মানে রাখে না। হয়তো তুমি এখন অন্য কোনো জগতে, অন্য কারো সঙ্গে সুখে আছো। তবুও কিছু কথা বুকের ভেতর জমে আছে, যা আর চাপা রাখতে পারছি না।
আমি ভালোবেসেছিলাম নিঃস্বার্থভাবে, কোনো শর্ত ছাড়াই। তোমার একটুকরো হাসি আমার দিন উজ্জ্বল করে দিত। তোমার চোখে একবার তাকাতে পারা ছিল আমার দিনের শ্রেষ্ঠ উপহার। কিন্তু আমি কখনো বুঝিনি, এই ভালোবাসার ওজন শুধু আমিই বইবো – তুমি নয়।
তুমি আমার অনুভূতির প্রতি বরাবরই নিরব ছিলে। আমি যখন কষ্টে ভেঙে পড়ছিলাম, তুমি তখন ব্যস্ত ছিলে কারো সঙ্গে হাসতে। আমি যখন তোমার জন্য অপেক্ষা করতাম, তুমি হয়তো ভুলেই যেতে। আর আমি তো কিছু বলিনি কখনও – ভয় ছিল হারানোর, ছিল তোমার অবহেলা আরও বাড়বে।
তোমার কাছে আমি কখনোই ‘বিশেষ কেউ’ হতে পারিনি, কিন্তু তুমি আমার কাছে ছিলে পুরো পৃথিবী। আজ এতদিন পর এই চিঠিতে শুধু এটুকুই বলতে চাই – ভালোবাসা এখনো রয়ে গেছে, কিন্তু মানুষটা আর তোমার মতো অবহেলা করতে পারবে না।
যদি কোনোদিন আমার কথা মনে পড়ে, জানবে – কেউ একসময় সত্যিকারের ভালোবেসেছিল তোমায়, নিঃশব্দে।
ভালো থেকো,
– এক অবহেলিত প্রেমিক/প্রেমিকা
চিঠি: ২
প্রিয়,
লিখছি অনেক কষ্ট নিয়ে। জানি, হয়তো তোমার কাছে আমি এখন খুব সাধারণ একজন মানুষ, যার কথা শুনলে বিরক্তি লাগে, যার মেসেজে আর উত্তরের তাড়া নেই। কিন্তু জানো, আজও আমি তোমাকেই ভালোবাসি… সেই আগের মতো, একটুও কম নয়।
তোমার সেই চেনা অবহেলা এখন আমার চেনা অভ্যেস হয়ে গেছে।
তুমি আগের মতো খোঁজ নিও না, কথা বলো না, আমায় দরকারও মনে করো না—তবুও আমি তোমার প্রতীক্ষায় থাকি। তুমি ব্যস্ত, সেটাও বুঝি… কিন্তু আমি তো চাই না অনেক কিছু। শুধু একটু “তুমি কেমন আছো?”—এই কথাটাই শুনতে মন চায়।
তুমি কি জানো, ভালোবাসা যখন একতরফা হয়ে পড়ে, তখন সেটা কেমন লাগে?
একজন যখন প্রতিদিন ভাবছে, “তুমি খেয়েছো কিনা”, “তুমি হাসছো কিনা”,
আর অন্যজন একবারও মনে রাখে না তার কথা—সেটাই কি ভালোবাসা?
তবুও আমি অভিমান করতে পারি না, কারণ আমি জানি, অভিমান করার অধিকারও হয়তো আমি হারিয়ে ফেলেছি।
তুমি চাইলে আমায় ভুলে যেতে পারো, কিন্তু আমি তো পারি না। কারণ আমি শুধু তোমাকে ভালোবেসে ফেলিনি, তোমাকে আমার জীবনের অংশ বানিয়ে ফেলেছি।
আমি আজও অপেক্ষা করি—তুমি একদিন এসে বলবে, “তুই অনেক কষ্ট পেয়েছিস, আমি জানি… কিন্তু আমি তোকে ছাড়া কিছুই না।”
হয়তো সেই দিন কখনো আসবে না, কিন্তু আমার ভালোবাসা আজীবন তোমারই থাকবে—চুপচাপ, নিরব, নিঃশব্দ।
ভালোবাসা দিয়ে,
অবহেলিত তবু এখনো তোমার…
______
ব্যর্থ প্রেমের শেষ চিঠি
প্রিয়তমা,
আজ লিখছি শেষবারের মতো। জানি, হয়তো তুমি পড়বে না… অথবা পড়ে হাসবে—“আবারও লিখেছে।”
কিন্তু বিশ্বাস করো, আজকের চিঠিটা কোনো অভিযোগ নয়। আজকের প্রতিটি শব্দ শুধু বিদায়ের কষ্ট দিয়ে গড়া।
তোমাকে প্রথম যখন ভালোবেসেছিলাম, তখন কল্পনাও করিনি একদিন এইভাবে চলে যেতে হবে। ভেবেছিলাম, তুমিই হবে আমার সবকিছু—আমার সকাল, আমার রাত, আমার স্বপ্ন, আমার ঠিকানা।
কিন্তু তুমি ধীরে ধীরে বদলে গেলে।
তোমার চোখে আমার জন্য আর আলাদা কোনো চাহনি ছিল না।
তোমার মেসেজে আর আগের মতো অপেক্ষার উত্তাপ ছিল না।
আমরা ছিলাম দু’জন, কিন্তু মনটা ছিল একা।
হয়তো আমার ভালোবাসা যথেষ্ট ছিল না, হয়তো আমি তোমার উপযুক্ত ছিলাম না।
কিন্তু আমি জানি, আমার অনুভব ছিল নিখাঁদ। আমি তোমাকে ভালোবেসেছি কোনো শর্ত ছাড়াই—এটাই আমার অহংকার।
আজ আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। নিজেকে আর ভুল আশা দিয়ে জাগিয়ে রাখতে পারছি না। তাই বিদায় নিচ্ছি—চিরতরের মতো।
না, কষ্ট নেই এমন বলছি না। বুকটা ভেঙে যাচ্ছে। চোখের পানি থামাতে পারছি না।
তবুও, এটাই সঠিক। তুমি সুখে থাকো, এটা চাই।
তুমি নতুন কারো জীবনে সুখ খুঁজে পাও, এটা চাই।
আমি দূরে থেকে তোমার জন্য দোয়া করব—যতদিন বাঁচি।
আর আমি? আমি তোমার স্মৃতির মাঝে বাঁচব—একটা অচেনা ছায়ার মতো।
ভালো থেকো…
চিরবিদায়ে,
তোমার এক সময়কার ‘আমার’—______
উপসংহার
অবহেলিত ভালোবাসার চিঠি শুধু আবেগের প্রকাশ নয়, এটি একজন মানুষের নিঃস্বার্থ অনুভবের দলিল। যারা এমন পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে গেছেন, তাদের হৃদয় এই চিঠির প্রতিটি শব্দে প্রতিধ্বনিত হবে। ভালোবাসা কখনো সময় বা গুরুত্ব চায় না, চায় শুধু সম্মান আর অনুভব। যদি আপনি ভালোবাসার নাম করে কাউকে অবহেলা করেন, একবার ভাবুন – আপনি হয়তো কারো ভেতর এক চিরস্থায়ী শূন্যতা তৈরি করে দিচ্ছেন।

