হৈমন্তী গল্পের সেরা উক্তি

By Ayan

Published on:

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালজয়ী গল্প “হৈমন্তী” বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য রত্ন। এই গল্প শুধু নারী জীবনের করুণ চিত্রই নয়, বরং তৎকালীন সমাজব্যবস্থার কঠোর রূপ, কুসংস্কার, নারীর আত্মমর্যাদা এবং বৈবাহিক জীবনের বাস্তবতা ফুটিয়ে তুলেছে অপূর্বভাবে। “হৈমন্তী” গল্পের প্রতিটি বাক্যে লুকিয়ে আছে গভীর জীবনবোধ, তীক্ষ্ণ সামাজিক বার্তা এবং মানবিক আবেদন। এই গল্পে এমন কিছু উক্তি আছে যা পাঠকের হৃদয়কে নাড়া দেয় এবং চিন্তাভাবনায় গভীর রেখাপাত করে। আজ আমরা নিয়ে এসেছি “হৈমন্তী” গল্পের সেরা উক্তিসমূহ, যেগুলো পাঠকদের মাঝে আলোড়ন তুলেছে যুগে যুগে।

১. “তাঁহার শরীর ছিল দুর্বল, মন ছিল দুর্বলতর।”
👉 সমাজের চোখে নারীর মূল্যায়ন কেবল শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতার পরিপ্রেক্ষিতে।

২. “স্ত্রীলোকের শিক্ষার ফলেই তাহার দুঃখ হয়েছে— তাহার মনটা বুঝি শক্ত হইয়া গিয়াছিল।”
👉 শিক্ষিত নারীকে সমাজ কীভাবে সন্দেহের চোখে দেখতো, তা বোঝানো হয়েছে।

৩. “আমি তাহাকে ভালবাসিতাম, কারণ তাহাকে লইয়া লজ্জা পাইতাম না।”
👉 ভালোবাসার প্রকৃত রূপ— যেখানে ভালোবাসা আসে সম্মান ও গৌরবের সঙ্গে।

৪. “তাহার মৃত্যুতে আমাদের দোষ ছিল না, তাহার দোষ ছিল— তাহার শরীর ছিল দুর্বল।”
👉 সমাজ কীভাবে নিজের অপরাধ চাপা দিতে নারীর শরীর বা দুর্বলতাকে দায়ী করে।

৫. “তাহার দোষ ছিল— সে বেশি লেখাপড়া জানত।”
👉 বিদ্যাবতী নারী কীভাবে সমাজে অবাঞ্ছিত হয়ে ওঠে, এই ব্যঙ্গ-উক্তি তারই দৃষ্টান্ত।

৬. “সে চুপ করিয়া রহিল, এবং একদিন সমস্ত চিরতরে চুপ করিয়া গেল।”
👉 নারীর চিরাচরিত নীরবতা ও আত্মাহুতির করুণ চিত্র।

৭. “পিতৃগৃহে অনেক দুঃখ ছিল, কিন্তু পতিগৃহে ছিল অপমান।”
👉 নারীর জীবনে কোনো ঠিকানা নেই— যেখানে দুঃখ নেই, সেখানেই অপমান।

৮. “সেই গৃহে সে অতিথির মত থাকিত, নিজের স্থান বুঝিবার সময় পাইল না।”
👉 স্ত্রীর নিজ ঘরে নিজের পরিচয় হারানোর বেদনা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রেমের উক্তি ও ক্যাপশন

৯. “সে তাহার স্বামীর কাছে বাঁচিবার অধিকার চাহে নাই, মৃত্যুর অনুমতি চাহে নাই— সে চুপ করিয়া মরিয়া গেল।”
👉 এক অসহায় স্ত্রীর শেষ প্রতিবাদ— চুপচাপ চলে যাওয়া।

১০. “সমাজ নারীর আত্মমর্যাদা গ্রহণে এখনো প্রস্তুত নয়।” (ব্যাখ্যামূলক সারাংশ)
👉 পুরো গল্পের অন্তর্নিহিত বার্তা— নারী স্বাতন্ত্র্য ও মর্যাদার জন্য সমাজে এখনো জায়গা সংকীর্ণ।

“হৈমন্তী” গল্পের উক্তিগুলো আজও আমাদের সমাজে এক বাস্তব আয়না হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই অমর সৃষ্টির প্রতিটি বাক্য যেন সমাজের জড়তা, কুসংস্কার এবং নারীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্যের প্রতিবাদ। এসব উক্তি কেবল সাহিত্যরসিকদের জন্য নয়, সমাজ সচেতন মানুষের মনেও আলোড়ন তোলে। শিক্ষিত নারীকে গ্রহণ করার মতো মনোভাব এখনো গড়ে ওঠেনি অনেকখানি— “হৈমন্তী” যেন সেই চিরন্তন সত্যকে সামনে নিয়ে আসে। এই গল্প এবং তার উক্তিগুলো নতুন প্রজন্মের কাছে শিক্ষণীয় বার্তা হয়ে থাকবে চিরকাল।

Ayan

আয়ান, বাংলা ভাষার প্রেমে পড়া একজন সৃজনশীল লেখক, যিনি মনোমুগ্ধকর ক্যাপশন, স্ট্যাটাস ও উক্তি লিখে পাঠকদের মন জয় করেন। শব্দের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ করাই তাঁর অন্যতম নেশা। ভালোবাসা, অনুপ্রেরণা, বন্ধুত্ব, হাসি-মজা—সব ধরনের ক্যাপশন লেখার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা অসাধারণ। পছন্দের বিষয়: ক্যাপশন রচনা, সাহিত্য, উক্তি ও জীবন দর্শন।

Leave a Comment