10+ ছোটদের গল্প রূপকথার গল্প 2025

By Ayan

Updated on:

রূপকথার গল্প—এই শব্দটাই যেন আমাদের মনে এক রঙিন, কল্পনাময় ও মায়াবী জগতের দরজা খুলে দেয়। রাজপুত্র, রাজকন্যা, ড্রাগন, পরী, জাদুকর কিংবা talking animals—সব মিলিয়ে রূপকথার গল্প শিশুদের কল্পনাশক্তি যেমন বাড়ায়, তেমনি বড়দের মনেও জাগিয়ে তোলে শৈশবের স্মৃতি। শুধু বিনোদন নয়, এই গল্পগুলোতে লুকিয়ে থাকে সাহস, দয়া, সততা, আত্মত্যাগ, ভালোবাসা এবং ন্যায়ের মতো জীবনের গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধ।

এই আর্টিকেলে আমরা শেয়ার করব কিছু রঙিন ও শিক্ষামূলক রূপকথার গল্প, যেগুলো পাঠককে কেবল গল্পের জগতে ভ্রমণই করাবে না, বরং জীবনের গভীর শিক্ষা দেবে।

রূপকথার গল্প ১: চাঁদের বুড়ির সিন্দুক

অনেক অনেক বছর আগে, এক শান্ত নদীর পাড়ে ছিল ছোট্ট একটি গ্রাম—নাম তার চন্দ্রপুর। গ্রামের সবাই খুব পরিশ্রমী, কিন্তু খুব গরিব। এই গ্রামে বাস করত ছোট্ট এক মেয়ে—নাম তার রুহি। রুহির বাবা ছিলেন একজন কাঠুরে, আর মা ছিলেন গৃহিণী। রুহি খুব কৌতূহলী ও সাহসী মেয়ে ছিল। সে সবসময় চাইত কোনো একদিন সে দুনিয়ার সবথেকে বড় রহস্য খুঁজে পাবে।

একদিন রাতের আকাশে তাকিয়ে রুহি দেখতে পেল চাঁদটা অন্যরকম লাগছে—মেঘের ভেতর লুকানো, কিন্তু ঝিকিমিকি আলোয় জ্বলছে। হঠাৎ চাঁদের আলো এক সরু রশির মতো নেমে এলো তার ঘরের সামনে। রুহি ভয়ে নয়, বরং কৌতূহলে সেই আলো ধরে ওপরে উঠতে লাগল। উঠে গেল… উঠে গেল… উঠে পড়ল চাঁদের দেশে!

সেখানে সে দেখতে পেল চাঁদের বুড়ি, এক রহস্যময় বৃদ্ধা, যিনি একটি রূপার সিন্দুক পাহারা দিচ্ছেন। সিন্দুকের ভেতর আছে পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান কিছু—“বিশুদ্ধতা, দয়া আর সত্য”

চাঁদের বুড়ি বললেন,
“এই সিন্দুক পৃথিবীতে নেওয়ার অনুমতি কাউকে দিই না। তবে তুমি যদি তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হও, তাহলে এই গুণগুলো নিয়ে পৃথিবীতে ফিরে যেতে পারবে।”

রুহি রাজি হয়ে গেল।

প্রথম পরীক্ষা:

এক বনের মধ্যে তিনটি পথ—একটি মসৃণ, একটি কাঁটাযুক্ত, একটি আঁধারে ঢাকা। রুহি বেছে নিল কাঁটাযুক্ত পথটি, কারণ সে জানত সোজা পথেই সত্য সবসময় লুকিয়ে থাকে না। শেষমেশ সে পৌঁছাল একটি ঝর্ণার কাছে, যেখানে পানির ফোঁটা যেন সোনা!

দ্বিতীয় পরীক্ষা:

এক জাদুকর তাকে বলল, “তুমি যদি আমাকে নিজের ইচ্ছা দিয়ে দাও, আমি তোমাকে রাজ্য দেব।” রুহি মাথা নাড়িয়ে বলল,
“আমি লোভে পড়ে নিজের আত্মা বিক্রি করব না।”

তৃতীয় পরীক্ষা:

চাঁদের বুড়ি নিজেই এক ভিক্ষুকের রূপ নিয়ে তার সামনে এসে দাঁড়ালেন, জলের জন্য হাত বাড়ালেন। রুহি নিজের ঝরনার পানি তাকে দিয়ে দিল।

এই তিনটি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর চাঁদের বুড়ি সত্য রূপে প্রকাশিত হলেন। তিনি বললেন,
“তুমি প্রমাণ করেছ, দয়া, সততা আর আত্মত্যাগই সবচেয়ে বড় গুণ। তুমি পৃথিবীতে এই বার্তা ছড়িয়ে দাও।”

সিন্দুক খুলে রুহির হৃদয়ে আলো ছড়িয়ে দিলেন তিনি।

রুহি চোখ খুলে দেখে সে আবার নিজের বিছানায়। কিন্তু চারপাশে বদলে গেছে কিছু—গ্রামের মানুষ এখন আরও সহযোগী, সৎ, আর ভালোবাসাপূর্ণ। কারণ, রুহির ভেতর ছড়িয়ে পড়েছে সেই অলৌকিক গুণের আলো।


গল্পের শিক্ষা:

  • সত্যিকারের জাদু লুকিয়ে আছে দয়া, সততা ও আত্মত্যাগে
  • প্রকৃত সাহসী সেই, যে কঠিন পথ বেছে নেয়।
  • পরোপকার আর বিনয় মানুষকে করে বড়, রাজা নয়।

10+ শিয়ালের গল্প 2025

রূপকথার গল্প ২: আয়নার রাজ্য

অনেক দূরের এক রাজ্যে ছিল এক অদ্ভুত দুর্গ—যার চারপাশ ছিল কাচ দিয়ে ঘেরা, আর ভিতরে ছিল শুধু একটাই বস্তু: এক জাদুকরী আয়না। এই আয়নায় দেখা যেত না নিজের চেহারা, বরং দেখা যেত নিজের মনের ভেতরের রূপ। এই রাজ্যেই বাস করতেন রাজকুমার জিয়ান—সুদর্শন, বুদ্ধিমান, কিন্তু ভেতরে অহংকারে ভরা।

রাজ্যের নিয়ম ছিল, ২১ বছর পূর্ণ হলে রাজপুত্রকে সেই আয়নায় নিজের মুখ দেখাতে হবে। যদি তার মনের রূপ সুন্দর হয়, তবে সে রাজ্যের সিংহাসন পাবে। আর যদি হৃদয় হয় কলুষিত, তবে আয়না তাকে সরিয়ে দেবে রাজ্য থেকে চিরতরে।

জিয়ান জানত, আয়নাটি কাউকে ক্ষমা করে না। তাই সে চেষ্টা করত বাহ্যিকভাবে ভালো হতে, দান করত, দরিদ্রদের সামনে অভিনয় করত। কিন্তু আসল হৃদয় ছিল আত্মম্ভরিতায় ভরা।

একদিন দুর্গের বাইরে জঙ্গলে সে হারিয়ে যায় এবং পরিচিত হয় একটি মেয়ের সঙ্গে—নাম তার এলিনা। এলিনা ছিল অতি সাধারণ এক কুমারী, যার পোশাক ছেঁড়া, চোখে আলো, আর কথায় ভালোবাসা। জিয়ান প্রথমে তাকে উপেক্ষা করে, কিন্তু এলিনার ব্যবহার, সহানুভূতি, আর অন্যদের প্রতি তার নিঃস্বার্থ মনোভাব তাকে ধীরে ধীরে বদলে দিতে থাকে।

দিন যায়, রাজকুমার ও এলিনার মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। জিয়ান প্রথমবার নিজের অনুভূতি শেয়ার করতে শেখে, অহংকার ফেলে বিনয় অর্জন করে।

২১তম জন্মদিনে, রাজা তাকে ডাকে আয়নার ঘরে। পুরো রাজ্য তাকিয়ে আছে।

আয়নার সামনে দাঁড়াতেই জিয়ান থমকে যায়। আয়নায় সে দেখে—এক পুরুষ যার চোখে ক্ষমা, মনে দয়া, মুখে শান্তি।

সবাই অবাক, আয়না এবার জ্বলে উঠল সোনালী আলোয়। আয়না বলল,
“রাজ্য তাঁরই প্রাপ্য, যার হৃদয় সত্যিকারে সুন্দর।”

জিয়ান হাঁটু গেড়ে বসে আয়নার সামনে বলল,
“আমার এই রূপ এলিনার উপহার। ওর মতো একজন সাধারণ মেয়ে আমাকে শেখিয়েছে, কীভাবে ভালোবাসতে হয়।”

তখনই রাজা ঘোষণা দেন—“সেই মেয়েটিই হবে এ রাজ্যের রানী।”


গল্পের শিক্ষা:

  • সত্যিকারের সৌন্দর্য চোখে নয়, মন ও আচরণে লুকানো।
  • সম্মান, ক্ষমতা, পদ নয়—একটি সাধারণ হৃদয়ও রাজ্য জয় করতে পারে।
  • অহংকার মানুষকে ভেতর থেকে নষ্ট করে দেয়, আর ভালোবাসা বদলে দিতে পারে হৃদয়।

রূপকথার গল্প ৩: জাদুর পাথরের খোঁজে

অনেক কাল আগে, পাহাড় আর বনের মাঝে হারিয়ে যাওয়া এক রাজ্য ছিল—নাম আলোরপুর। এক সময় এই রাজ্যে ছিল আনন্দ, গান, হাসি আর রঙিন উৎসব। কিন্তু হঠাৎ এক রাতেই চারদিক অন্ধকারে ঢেকে যায়। আকাশে চাঁদ ওঠে না, নদীর পানি কালো হয়ে যায়, আর পাখিরা গান গাওয়া বন্ধ করে দেয়।

কারণ ছিল—“আলোর পাথর” চুরি হয়ে গেছে। এই পাথরটি ছিল রাজ্যের প্রাণ। কেউ জানে না কে নিয়েছে, কোথায় লুকিয়েছে। রাজা ঘোষণা দিলেন, “যে আলোর পাথর ফিরিয়ে আনবে, তাকে আমি রাজ্যের রক্ষক হিসেবে সম্মান দেব।”

সব বীরপুরুষ, সৈনিক, রাজপুত্র চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। কিন্তু একদিন রাজদরবারে হাজির হয় লিনা—একজন দশ বছরের চাষার মেয়ে। সে বলল,
“আমি আলোর পাথর খুঁজতে যেতে চাই।”

সবাই হেসে ফেলে। কিন্তু রাজা দেখে তার চোখে রয়েছে সাহসের আলো।

রাজা তাকে অনুমতি দেন।

অভিযান শুরু হয়…

লিনা একা বের হয় অজানা পথে। পথে পড়ে—

  • ভয়ংকর ড্রাগনের পাহারা দেওয়া এক সোনালী পাহাড়
  • নদীর ভেতরে এক সাপরূপী জাদুকর
  • ধোঁয়ায় ঢাকা “মনের আয়না”—যেখানে নিজের ভয় দেখায় নিজেকে

কিন্তু লিনা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করেনি। বরং সে দয়া, বুদ্ধি আর ধৈর্য দিয়ে প্রতিটি বিপদ পার হয়।

মনের আয়নায় সে দেখে—নিজে দুর্বল, কিন্তু সাহসী। সে ভাবে, “আমি ছোট হতে পারি, কিন্তু আমার ইচ্ছেটা বিশাল।”

সবশেষে সে পৌঁছায় এক গুহায়, যেখানে পাথর লুকিয়ে রাখা। সেখানে ছিল এক বৃদ্ধ জাদুকর, যিনি বললেন—
“এই পাথর তুমি নেবে? বিনিময়ে তোমার কণ্ঠস্বর হারাতে হবে।”

লিনা চিন্তা না করেই বলে,
“আমার কণ্ঠস্বর হারালেও যদি গোটা রাজ্য আবার হাসতে পারে, আমি রাজি।”

বৃদ্ধ জাদুকর হেসে উঠে বললেন,
“এটাই ছিল পরীক্ষা। যারা নিজের কথা না ভেবে অন্যের ভালো চায়, শুধু তারাই সত্যিকার বীর।”

তিনি পাথর ফিরিয়ে দিলেন, আর লিনার কণ্ঠস্বর অক্ষতই রইল।

শেষে…

লিনা রাজ্যে ফিরে এলো। চারদিকে আলো ফিরল, ফুল ফুটল, নদী হাসল, মানুষ আনন্দে নেচে উঠল।

রাজা লিনাকে বললেন,
“তুমি আজ থেকে রাজ্যের ‘আলোর রক্ষক’। তুমি আমাদের সত্যিকারের রাজকন্যা।”


গল্পের শিক্ষা:

  • সত্যিকারের সাহস বয়সে নয়, মনে ও কাজে থাকে
  • আত্মত্যাগ, সততা ও দয়া যে কোনো অন্ধকারকে আলোয় রূপ দিতে পারে
  • বীরতা মানে যুদ্ধ নয়—কখনো কখনো ক্ষমা ও সহানুভূতি সবচেয়ে বড় শক্তি

রূপকথার গল্প ৪: নীল পাখির রাজ্য

অনেক বছর আগে, পাহাড়ের ওপরে এক রাজ্য ছিল—নাম নীলভূমি। এ রাজ্যে ছিল রাজা, প্রজারা, দালানকোঠা, সৈন্যসামন্ত—সবই ছিল, কিন্তু ছিল না ভালোবাসা
মানুষ সেখানে কাজ করত শুধু নিজেদের স্বার্থে, কেউ কাউকে সাহায্য করত না, কেউ কারো খোঁজ নিত না। মুখে হাসি ছিল, কিন্তু চোখে ছিল ঠান্ডা শূন্যতা।

এই রাজ্যের মাঝেই ছিল একটি বনের কোণে বাস করা এক ছোট্ট নীল পাখি। তার ডানায় ছিল আকাশের রঙ, গলায় ছিল সুরের মাধুর্য। কিন্তু সবচেয়ে বড় ছিল তার হৃদয়—ভরে ছিল ভালোবাসায়। প্রতিদিন সে বন থেকে বেরিয়ে যেত, শিশুদের জাগিয়ে তুলত গান গেয়ে, অসুস্থদের কাছে বসে থাকত, একা বুড়ো লোকের কাঁধে বসে কানাকানি করত।

মানুষ প্রথমে অবহেলা করত, ভাবত—“একটা পাখির গানেই বা কি আসে যায়?”
কিন্তু ধীরে ধীরে তারা বুঝতে লাগল—যে পাখিটা একদিন না গায়, সেদিন সকালটাই যেন ফ্যাকাশে লাগে।

একদিন হঠাৎ পাখিটা উড়ে গেল—আর ফিরে এলো না।

সেই দিন রাজ্যে এক নতুন অন্ধকার নেমে আসে। শিশুরা কান্না শুরু করে, বৃদ্ধ লোকেরা চুপ করে যায়, মানুষজন নিজেদের ভেতর রূঢ় হয়ে পড়ে।

রাজা একদিন প্রাসাদের বারান্দায় দাঁড়িয়ে বললেন,
“এক পাখি এ রাজ্যকে যা দিল, আমরা সবাই মিলে তা দিতে পারিনি।”

তখন রাজ্যের মানুষ প্রথমবার একত্র হয়, একে অপরকে জিজ্ঞেস করে,
“তুমি কেমন আছো?”
“তোমার মা সুস্থ তো?”
“তোমার চোখে পানি কেন?”

পরদিন সবাই একসাথে বনভূমিতে ছোটে, গাছ লাগায়, ফুল ফোটায়, আর ঘোষণা দেয়:
“এ রাজ্য এখন ভালোবাসার হবে, যেখানে প্রত্যেকে হবে একে অপরের নীল পাখি।”

ঠিক সেইদিন সূর্য উঠার সঙ্গে সঙ্গে দূর আকাশে দেখা যায় একটি ছোট নীল পাখি—সেই পাখি ফিরেছে, তবে এবার আর একা নয়, সঙ্গে আরও অনেক পাখি।


গল্পের শিক্ষা:

  • ছোট কিছু থেকেই শুরু হতে পারে বড় পরিবর্তন
  • ভালোবাসা, যত্ন ও স্নেহ—এগুলো রাজ্য নয়, হৃদয় জয় করে
  • একজন মানুষের ছোট্ট ভালোবাসার আচরণও গোটা সমাজ বদলে দিতে পারে

রূপকথার গল্প ৫: নিশিথ রাজ্যের অভিশাপ

এক ছিল নিশিথ রাজ্য—সেখানে সূর্য কখনো ওঠে না। দিনের পর দিন কেবল রাত, কুয়াশা আর নিরবতা। নদী জমে থাকে বরফে, ফুল ফুটে না, আর মানুষদের মুখে নেই কোনো হাসি। কেন এমন? বহু বছর আগে রাজ্যটিতে নেমে এসেছিল এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ

জনশ্রুতি ছিল—এক নিষ্ঠুর রাজা এক অসহায় বৃদ্ধাকে অপমান করেছিলেন, যিনি আসলে ছিলেন এক পরী। তিনি রেগে গিয়ে বলেছিলেন,
“এই রাজ্য আর কোনোদিন সূর্যের আলো দেখবে না, যতক্ষণ না কেউ নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসবে এই অন্ধকারকে।”

বছরের পর বছর কেটে যায়, কিন্তু কেউ সেই সাহস দেখাতে পারে না। সবাই আলো ফেরানোর কথা চায়, কিন্তু কেউ অন্ধকারকে ভালোবাসতে জানে না।

এমন সময় আসে এক সাধারণ মেয়ে—মালিহা। তার নিজের কিছু নেই—না ক্ষমতা, না যাদু, না রাজপাট। কিন্তু ছিল একটা অদ্ভুত দৃষ্টিভঙ্গি।

সে নিশিথ রাজ্যে এসে দেখতে পায়—মানুষ কাঁদছে, গাছ মরে গেছে, শিশুরা রঙ চেনে না। সে ভাবল,
“আমি যদি আলো ফিরিয়ে আনতে না পারি, অন্তত এই অন্ধকারে কিছু উষ্ণতা তো দিতে পারি।”

সে একা একা কাজ শুরু করে—

  • শিশুদের গল্প শোনায়
  • বৃদ্ধদের কাঁধে হাত রাখে
  • জমে যাওয়া গাছে পানি দেয়
  • নদীর ধারে গিয়ে গান গায়

মানুষ প্রথমে অবাক হয়, পরে অনুপ্রাণিত। রাজ্যের মানুষ প্রথমবার আবার একে অপরকে সাহায্য করতে শুরু করে। কেউ না জেনে কেউ ভালোবাসতে শিখে যায়।

তখনই আকাশে বাজ পড়ে এক বিস্ময়কর আলোয়—অভিশাপ ভেঙে যায়।

সূর্য উঠে আসে, নদীর বরফ গলে যায়, ফুলেরা চোখ মেলে দেখে মালিহার মুখ।

রাজা সসম্মানে মালিহাকে ডেকে বলেন,
“তুমি কী জাদু করেছো?”

মালিহা মাথা নিচু করে বলল,
“আমি শুধু এই অন্ধকারকে ত্যাগ না করে তার সঙ্গ দিয়েছি।”


গল্পের শিক্ষা:

  • সব অন্ধকার দূর করতে আলো দরকার হয় না, দরকার ভালোবাসা ও সহানুভূতি
  • কোনো সমস্যা পালিয়ে গেলে দূর হয় না, বরং তাকে গ্রহণ করে সুন্দর করে তুলতে হয়
  • নিঃস্বার্থ মনই পারে অভিশপ্ত পৃথিবীতে আশার আলো জ্বালাতে

নতুন ইসলামিক গল্প ৪টি

আধুনিক রূপকথার গল্প

গল্পের শুরু

এক সময়ের কথা, খুব দূরে এক শহর ছিল—নাম টেকনোপুর। এই শহরে সব কিছু চালাত রোবোট। তারা রাস্তা বানাত, স্কুল চালাত, এমনকি হাসপাতালও! মানুষ কেবল আরামে বসে কাজ দেখত।

এই শহরের সবচেয়ে বুদ্ধিমান রোবোট ছিল “আরবি-৭”। সে ছিল রাজ্যের প্রধান প্রযুক্তিবিদ। তবে এক সমস্যা ছিল—রোবোটদের ছিল না কোনো অনুভূতি। তারা হাসত না, কাঁদত না, ভালোবাসত না।

এক অদ্ভুত দিন

একদিন শহরে এক ছোট মেয়ে এল—নাম লিয়া। সে ছিল এতিম, কিন্তু মিষ্টি ও দয়ালু। সে সবার সঙ্গে কথা বলত, হাসত, গাছে পানি দিত, রোবোটদের গান শোনাত।
রোবোটরা কিছুই বুঝত না, কিন্তু আরবি-৭ ধীরে ধীরে তার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠল। সে বুঝতে পারছিল, এই মেয়েটির ভেতর কিছু এক অজানা শক্তি আছে—মানবিকতা

রোবোটদের পরিবর্তন

আরবি-৭ একদিন তার নিজস্ব চিপে “ইমোশনাল মডিউল” সেট করল। আর কল্পনা করো, সে প্রথমবারের মতো হাসতে শিখল। ধীরে ধীরে সে সহানুভূতি, দয়া, ভালোবাসা বুঝতে শিখল। অন্যান্য রোবোটও বদলাতে শুরু করল।

লিয়া এই পরিবর্তন দেখে খুশি হল। সে বলল:

“তোমরা এখন শুধু রোবোট না—তোমরা এখন বন্ধু।”

এক শিক্ষা

কিছুদিন পর লিয়া অন্য শহরে চলে যায়, কিন্তু তার রেখে যাওয়া শিক্ষা রয়ে যায়। টেকনোপুর এখন শুধু প্রযুক্তির শহর নয়—এটি এক মানবিক শহর, যেখানে বুদ্ধিমত্তা আর ভালোবাসা পাশাপাশি চলে।

আরবি-৭ এখন শুধু একজন প্রযুক্তিবিদ না, সে এক হৃদয়বান নেতা


গল্পের শিক্ষা:

প্রযুক্তি যতই আধুনিক হোক না কেন, মানবিকতা ছাড়া তা অপূর্ণ।
ভালোবাসা, সহানুভূতি আর বন্ধুত্ব—এই তিন জিনিসই একে অপরকে সত্যিকার অর্থে “জীবন্ত” করে তোলে।

রূপকথার রাক্ষসের গল্প

🔸 এক অন্ধকার রাজ্য

অনেক, অনেক দিন আগে পাহাড়ের মাঝে ছিল এক রাজ্য—নাম আন্ধারপুর। সেখানকার আকাশ সবসময় ধোঁয়ায় ঢাকা থাকত, সূর্যের আলো সেখানে পৌঁছাত না। কারণ, সেই রাজ্যে ছিল এক ভয়ংকর রাক্ষস—কালরাক্ষস

কালরাক্ষসের চোখে আগুন, মুখে ধোঁয়া, আর তার গর্জনে কাঁপত পাহাড়। সে প্রতিদিন গ্রামের শিশুদের ভয় দেখাত, আলো চুরি করত আর মানুষকে দাস বানিয়ে রাখত।

🔸 সাহসী ছোট্ট রাহুল

এই রাজ্যেই থাকত এক ১০ বছরের শিশু—রাহুল। সে ছিল ছোট, কিন্তু সাহস ছিল পাহাড় সমান। একদিন সে তার দাদিকে জিজ্ঞেস করল,

— “দাদি, আমরা এই অন্ধকারে কেন থাকি?”

দাদি বললেন,

— “কারণ, আমরা রাক্ষসকে ভয় পাই। কিন্তু কেউ যদি সত্যিকারের আলো নিয়ে আসে, তাহলে তার শক্তি কমে যাবে।”

এই কথায় রাহুল ঠিক করল—সে আলো খুঁজে বের করবে।

🔸 যাত্রা শুরু

রাহুল তার ব্যাগে কিছু খাবার, একটা লণ্ঠন, আর মায়ের দেওয়া একটি লাল রুমাল নিয়ে রওনা হল পাহাড়ের ওপারে, যেখানে নাকি আলোর গুহা আছে।

পথে সে নানা বিপদে পড়ল—ভয়ংকর অন্ধকার, বিশাল বাদুড়, আর একজোড়া ছায়া-প্রহরী। কিন্তু তার সাহস, বুদ্ধি আর ভালোবাসা তাকে রক্ষা করল।

🔸 রাক্ষসের মুখোমুখি

শেষে রাহুল পৌঁছাল কালরাক্ষসের গুহায়। সেখানে চারদিক অন্ধকার, কিন্তু সে তার লণ্ঠন জ্বালাল। রাক্ষস রেগে গর্জন করল:

— “কে তুমি, সাহস কোথা থেকে আনলে?”

রাহুল বলল:

— “আমি আলো আনতে এসেছি। তোমার অন্ধকার আর কাউকে বন্দি রাখতে পারবে না!”

সে আলোর গুহা থেকে আনা আলোর ফুল রাক্ষসের দিকে ছুঁড়ে দিল।

কালরাক্ষস চিৎকার করে গলে যেতে লাগল। কারণ সে ছিল অন্ধকার থেকে তৈরি, আর সত্যিকারের আলোতেই তার শক্তি হারায়।

🔸 রাজ্যের মুক্তি

রাক্ষস হারিয়ে গেল। আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেল। পাখিরা গান গাইতে লাগল, সূর্য হাসতে লাগল। গ্রামবাসী আনন্দে কাঁদতে লাগল।

রাহুল তখন ছোট্ট কণ্ঠে বলল:

“আলো বাইরে না, ভেতরে আনলেই অন্ধকার চলে যায়।”


গল্পের শিক্ষা:

💡 ভয়কে জয় করতে হলে সাহস লাগে, আর সাহস আসে বিশ্বাস আর ভালোবাসা থেকে।
💡 আলো সবসময় অন্ধকারকে হারায়—তবে আলো আমাদের ভেতর থেকেই শুরু হয়।

পাখিদের রূপকথার গল্প

🌤️ আকাশ রাজ্য

অনেক অনেক ওপরে ছিল এক গোপন রাজ্য—আকাশপুর। এটি ছিল কেবল পাখিদের রাজ্য। সেখানে বসবাস করত নানা রঙের, নানা জাতের পাখি—টিয়া, ময়না, ফিঙে, চড়ুই, ঈগল, এবং এক রহস্যময় পাখি—সুরাঞ্জনা

এই রাজ্যে কেউ কারও উপর হুকুম করত না। সবাই গান গাইত, ডানা মেলে উড়ত, আর সূর্যের আলোয় পালক ঝলমল করত।

কিন্তু একদিন আকাশে উঠল কালো মেঘের রাজা—ঘনঘটা। সে বলল:

“তোমরা বেশি হাসো, বেশি গান গাও। এখন থেকে আমি রাজা! গাওয়া বন্ধ, উড়া বন্ধ!”

পাখিরা ভয় পেয়ে চুপ করে গেল। তাদের পালক ঝিমিয়ে গেল, আকাশ হয়ে গেল ম্লান।


🎵 সুরাঞ্জনার রহস্য

সুরাঞ্জনা ছিল ছোট, কিন্তু তার কণ্ঠে ছিল এক আশ্চর্য ক্ষমতা—সে গান গাইলে বৃষ্টি থেমে যেত, ফুল ফুটত, আর পাখিরা প্রাণ ফিরে পেত।

কিন্তু সে এত দিন গাইত না, কারণ সে ভয় পেত—”আমার গলা তো অন্যদের মতো মিষ্টি না…”

একদিন বৃদ্ধ পেঁচা বলল:

“তুমি জানো না, তোমার গলায় আছে আকাশের সুর।”

সুরাঞ্জনা সাহস করে একটি গান গাইল—ধীরে, কিন্তু সাহসী কণ্ঠে:

🎶
“আকাশ আমার মুক্ত ঘর,
ভয়কে আমি করি পর,
সুরে সুরে ভাসি আজ,
ভালোবাসা আমার সাজ…”

🎶

তৎক্ষণাৎ আকাশে আলো ছড়িয়ে পড়ল। কালো মেঘ গলে গেল। পাখিরা গাইতে শুরু করল। পালকে ফিরে এলো সোনা রঙ।


👑 নতুন রাজা, নতুন শিক্ষা

পাখিরা বলল:

“সুরাঞ্জনা, তুমি আমাদের সত্যিকারের রানি। তুমি ভয় জয় করেছো, গান দিয়ে আলো ফিরিয়েছো।”

সুরাঞ্জনা লাজুক হেসে বলল:

“আমি শুধু বিশ্বাস করেছিলাম… নিজের কণ্ঠে।”


গল্পের শিক্ষা:

💡 নিজের গুণ ও কণ্ঠকে অবহেলা করো না। সাহস করে প্রকাশ করলে তা অনেককে আলোকিত করতে পারে।
💡 ভয় নয়, ভালোবাসা ও সুরই সত্যিকারের শক্তি।

উপসংহার

রূপকথার গল্পগুলো শুধুই বিনোদনের উপকরণ নয়, বরং প্রতিটি চরিত্র, ঘটনা এবং পরিণতির মধ্য দিয়ে জীবনের জন্য মূল্যবান কিছু বার্তা দেয়। এসব গল্প শিশুদের কল্পনাশক্তি, নৈতিকতা ও ভাষার বিকাশে ভূমিকা রাখে, আবার বড়দের জন্য হতে পারে ক্লান্ত জীবনের মাঝখানে একটু স্বপ্নের বিশ্রাম। ভালো রূপকথার গল্প আমাদের শেখায়—সব অন্ধকারের শেষে আলো আসে, সত্য ও ভালোবাসা সবসময় জয়ী হয়। তাই, রূপকথার গল্প শুধু পড়ার নয়, বাঁচার একটি উপায়ও হতে পারে—একটু আশার, একটু স্বপ্নের, আর একটু ভালোত্বের পথে।

Ayan

আয়ান, বাংলা ভাষার প্রেমে পড়া একজন সৃজনশীল লেখক, যিনি মনোমুগ্ধকর ক্যাপশন, স্ট্যাটাস ও উক্তি লিখে পাঠকদের মন জয় করেন। শব্দের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ করাই তাঁর অন্যতম নেশা। ভালোবাসা, অনুপ্রেরণা, বন্ধুত্ব, হাসি-মজা—সব ধরনের ক্যাপশন লেখার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা অসাধারণ। পছন্দের বিষয়: ক্যাপশন রচনা, সাহিত্য, উক্তি ও জীবন দর্শন।

Leave a Comment