রাত বারোটার পর শহর যখন ঘুমিয়ে পড়ে, তখন কিছু মানুষ জেগে থাকে। তারা ঘুমায় না, কারণ তাদের হৃদয়ে কেউ ঘুমায় না। তারা কারো জন্য অপেক্ষা করে। অপেক্ষার একেকটা মুহূর্ত যেন শতাব্দীর সমান দীর্ঘ। চোখের সামনে স্মৃতিগুলো বারবার ফিরে আসে, আর হৃদয়ে একটাই প্রশ্ন বাজে — সে কি কখনো ফিরবে?
এখানে আপনি পাবেন:
এক কাপ চায়ের অপেক্ষা — প্রথম গল্প
নাম ছিল অনি, আর মেয়েটির নাম তিশা। চা-স্টলের পাশে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কথা বলতো ওরা। ভালোবাসা জন্ম নিয়েছিল খুব সাধারণ এক মুহূর্তে — “এক কাপ চা খাবে?” এই একটুকু বাক্য থেকে।
তিশা প্রতিদিন সন্ধ্যাবেলা আসতো, আর অনি অপেক্ষা করতো। কখনো হাতে ফুল, কখনো বই, আবার কখনো একখানা চিরকুট—সেই দিনগুলো যেন স্বপ্ন।
একদিন তিশা বললো,
“আজ একটু জরুরি কাজ আছে, কাল দেখা হবে।”
কাল আর আসেনি।
দিন কেটেছে, মাস পেরিয়েছে, বছর চলে গেছে।
অনি এখনো সেই চা-স্টলের পাশে বসে থাকে, হাতে দুটো কাপ—একটা তার নিজের জন্য, আরেকটা তিশার জন্য। কেউ বলে পাগল, কেউ বলে গল্প, কিন্তু সে জানে—তিশা বলেছিল, “কাল দেখা হবে।”
তুমি ফিরবে বলে — দ্বিতীয় গল্প
রিয়া আর আয়ান দুজনই ছোটবেলার বন্ধু। ক্লাস নাইনের সময় থেকে ওদের বন্ধুত্ব, ধীরে ধীরে ভালোবাসায় রূপ নেয়। কলেজ শেষে চাকরি, ব্যস্ততা, জীবনের দৌড়ের মাঝে হারিয়ে যেতে থাকে সময়।
তবু রিয়া প্রতিদিন সন্ধ্যায় ফোন করত, বলতো—”তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”
একদিন আয়ান বললো,
“একটু সময় দাও, জীবনে কিছু সেট করতে হবে। তারপর আমরা একসঙ্গে হবো।”
রিয়া অপেক্ষা করতে লাগল…
১ বছর
২ বছর
৩ বছর…
শেষবার রিয়ার জন্মদিনে শুধু একটা মেসেজ এসেছিল—“হ্যাপি বার্থডে, আশা করি ভালো আছো।”
তারপর… নীরবতা।
রিয়া এখনো প্রতিটা জন্মদিনে ফোনটা হাতের পাশে নিয়ে ঘুমায়।
হয়তো আবার মেসেজ আসবে ভেবে…
হয়তো আবার “তুমি ফিরবে” বলে কেউ ভালোবাসবে…
একটি স্টেশন আর একটুকরো অপেক্ষা — তৃতীয় গল্প
পুরোনো একটি ট্রেন স্টেশন। সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে একটি লোকাল ট্রেন থামে সেখানে।
এক বৃদ্ধ মানুষ প্রতিদিন একটা বেঞ্চে এসে বসেন, পরনে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি, হাতে একটা চিঠি।
লোকজন বলে, তার ছেলে বাইরে গিয়েছিল পড়াশোনা করতে। বলেছিল, “বাবা, ফিরে এসে তোমায় নিয়ে যাবো।”
আজ ২২ বছর কেটে গেছে।
তিনি এখনো সেই চিঠিটা হাতে করে স্টেশনে আসেন।
“ছেলের কথা রাখা তো বাকি রয়ে গেছে,” — বলেন তিনি শান্ত গলায়।
স্টেশনের কাক, ট্রেনের সিটি, বাতির ঝাপসা আলো — সব কিছু মিলে একটুকরো কষ্টের গল্প হয়ে গেছে।
অপেক্ষার গভীরতা বুঝে কেবল সেই, যে কখনো কাউকে হারিয়ে ফেলে
অপেক্ষা এমন এক অনুভূতি, যার ভাষা নেই।
কারো চুলের গন্ধ, কারো হাসি, কারো বলে যাওয়া শেষ বাক্য — সবই একেকটা কারণ হয়ে দাঁড়ায় অপেক্ষার।
অনেকে ফিরে আসে, অনেকেই নয়।
তবে যারা সত্যিকারের ভালোবাসে, তারা জানে, অপেক্ষা করা মানে বেঁচে থাকা।
প্রতিদিনের সূর্যোদয় শুধু একটা আশার আলো বয়ে আনে —
হয়তো আজ সে ফিরে আসবে…
শেষ কথা
অপেক্ষা নিয়ে কষ্টের গল্প আমাদের জীবনকে তছনছ করে দেয়, আবার সেই অপেক্ষা আমাদের ভালোবাসাকেও অমর করে তোলে।
এই গল্পগুলো কাল্পনিক হলেও এমন হাজারো বাস্তব হৃদয় আছে, যারা আজও কারো জন্য চুপিচুপি অপেক্ষা করছে। হয়তো আপনি, হয়তো আমি, হয়তো সে।
আপনার যদি এমন কোনো গল্প থাকে, যা আপনি কাউকে বলতে পারেননি, তাহলে আপনি চাইলে আমায় জানাতে পারেন। আমি সেটাকে ভাষা দিতে পারি।

