ইতিহাস সাক্ষী—যেখানে ন্যায়ের পরিবর্তে অন্যায় রাজত্ব করেছে, সেখানে মানুষের কণ্ঠরোধ, স্বাধীনতার মৃত্যু আর সমাজে অন্ধকারের আধিপত্য এসেছে। এক অত্যাচারী শাসক যখন নিজের ক্ষমতাকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে, তখন মানুষ কেবল দুর্ভোগে পড়ে না, বরং সভ্যতা ধ্বংসের মুখে পড়ে যায়। সত্যিকারের শাসন মানে সেবা, কিন্তু অত্যাচারী শাসন মানে দমন।
নিচে এমন কিছু হৃদয়স্পর্শী উক্তি তুলে ধরা হলো, যা অত্যাচারী শাসকদের মুখোশ উন্মোচন করে এবং সচেতনতার বার্তা দেয়।
এখানে আপনি পাবেন:
অত্যাচারী শাসক নিয়ে উক্তি
“একজন অত্যাচারীর সবচেয়ে বড় ভয় – তার নিজের জনগণ।” — জর্জ অরওয়েল
“অত্যাচারীরা কখনোই স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছাড়ে না, জনগণকে তাদের বাধ্য করতে হয়।” — মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র
“যেখানে আইন শেষ হয়, সেখান থেকেই অত্যাচার শুরু হয়।” — জন লক
“নিপীড়কের চেয়ে ভয়ংকর সে জনগণ, যারা নিপীড়ন মেনে নেয়।” — ফ্রেডেরিক ডগলাস
“একজন শাসক যখন নিজের স্বার্থে শাসন করে, তখন সে রাজা নয়—অত্যাচারী।” — অ্যারিস্টটল
“অন্যায় শাসন মেনে নেওয়া মানেই তাতে অংশগ্রহণ করা।” — মহাত্মা গান্ধী
“নিরবতা হচ্ছে অত্যাচারীর পক্ষে সম্মতি প্রকাশ।” — এলি উইজেল
“অত্যাচার যত দীর্ঘ হয়, প্রতিরোধ তত শক্তিশালী হয়।” — নেলসন ম্যান্ডেলা
“একজন অত্যাচারী যত বেশি শক্তিশালী দেখায়, সে তত বেশি ভীতু।” — চার্লস চ্যাপলিন
“মানুষ যতদিন না প্রতিবাদ করতে শেখে, ততদিন শাসক অত্যাচার করতেই থাকে।” — এডমন্ড বার্ক
“ক্ষমতা দুর্নীতিকে টানে, আর একচ্ছত্র ক্ষমতা নিঃশেষে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তোলে।” — লর্ড অ্যাক্টন
“সাধারণ মানুষ যখন ভয় পায়, তখন তা শাসকের বিজয়। আর শাসক যখন মানুষকে ভয় পায়, তখন তা স্বাধীনতার সূচনা।” — বেনজামিন ফ্র্যাঙ্কলিন
“অত্যাচার শুধু অস্ত্র দিয়ে হয় না, হয় নীরবতা দিয়েও।” — মার্গারেট অ্যাটউড
“কোনো জাতির সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য, যখন তারা অত্যাচারী শাসকের অধীনে দীর্ঘদিন চুপ থাকে।” — ভলতেয়ার
“অন্যায় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ শুধু অধিকার নয়, দায়িত্বও।” — থমাস জেফারসন
“যে শাসক নিজের কণ্ঠস্বর ছাড়া অন্য কোনো আওয়াজ সহ্য করতে পারে না, সে কখনোই মানুষের বন্ধু নয়—সে হচ্ছে স্বাধীনতার সবচেয়ে বড় শত্রু।”
“যে শাসকের শাসনে অন্যায় বাড়ে, তার পতন অনিবার্য।” – হযরত আলী (রা.)
“আমি অত্যাচারীর খড়্গ ভেঙে করব দুঃখ-পীড়িতের মুক্তি!” – কাজী নজরুল ইসলাম
“অত্যাচারের সামনে মাথা নত করা মানেই অন্যায়কে স্বীকৃতি দেওয়া।” – মহাত্মা গান্ধী
“যখনই সরকার জনগণের অধিকার ধ্বংস করে, তখন জনগণের বিদ্রোহই ন্যায্য।” – টমাস জেফারসন
“যখন মিথ্যা সত্য হয়ে দাঁড়ায়, তখন সত্য বলা হয়ে যায় বিপ্লব।” – জর্জ অরওয়েল
“অত্যাচারী শাসক কখনো রাতের অন্ধকারে আসে না, সে আসে দিনের আলোয়—আইনের মুখোশ পরে, ন্যায়ের নামে অন্যায় করে।”
“একটি দেশের মানুষ যতই শিক্ষিত হোক, যদি শাসক নীতিহীন হয়, তাহলে সেই জাতি কখনো মুক্ত হতে পারে না।”
“যে শাসক ভয় দেখিয়ে শাসন করে, সে জানে—ভালোবাসা দিয়ে সে কখনোই হৃদয় জয় করতে পারবে না।”
“অত্যাচারী শাসকের সবচেয়ে বড় অস্ত্র হলো—ভয় ও মিথ্যা। আর তার পতনের সবচেয়ে বড় কারণ—সত্যের কণ্ঠরোধ করা।”
“একজন ন্যায়বান শাসক দেশের ভবিষ্যৎ গড়ে, আর একজন অত্যাচারী শাসক দেশটাকেই ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেয়।”
“অন্যায়ের উপর দাঁড়ানো সিংহাসন যত শক্তই হোক, তা চিরস্থায়ী নয়—মানুষের অভিশাপ একদিন তা ভেঙে দেয়।”
“যে শাসক জনগণের কণ্ঠকে দমন করে, একদিন সেই কণ্ঠই আগুন হয়ে ফিরে আসে তার সিংহাসনের নিচে।”
“শাসক তখনই অত্যাচারী হয়ে ওঠে, যখন সে জনগণকে নিজের অধীনস্থ মনে করে, সেবার পরিবর্তে শাসনের নামে শোষণ করে।”
“ভয় দেখিয়ে শ্রদ্ধা আদায় যায় না, যায় শুধু আতঙ্ক ছড়িয়ে—এটাই অত্যাচারী শাসকের সবচেয়ে বড় ভুল।”
ষড়যন্ত্র নিয়ে উক্তি
অত্যাচারী শাসক নিয়ে কোরআনের আয়াত
নিচে অত্যাচারী শাসক (ظالم বা জালিম) ও তাদের পরিণতি নিয়ে কোরআনের ১০টি আয়াত তুলে ধরা হলো। এই আয়াতগুলোতে জালিম শাসক ও জুলুমকারীদের প্রতি আল্লাহর হুঁশিয়ারি, শাস্তি এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার বার্তা রয়েছে:
সূরা ইব্রাহিম (১৪:৪২)“আর আল্লাহকে কখনোই ভাবিও না তিনি জালিমদের কাজ সম্পর্কে গাফিল। তিনি তো তাদেরকে এক নির্দিষ্ট দিনের জন্য মুলতবি রেখেছেন—যেদিন চক্ষুগুলো বিস্ফারিত হয়ে যাবে।”
সূরা হজ (২২:৪৫)“অতএব, কত শহর রয়েছে আমি তাকে ধ্বংস করে দিয়েছি, যখন তার অধিবাসীরা ছিল জালিম (অত্যাচারী)। এখন সেগুলোর ছাদ ভেঙে পড়ে আছে, কূপগুলো পরিত্যক্ত আর মহলসমূহ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।”
সূরা আনআম (৬:৪৭)“বল, তোমরা কি ভেবেছ, যদি আল্লাহর শাস্তি তোমাদের ওপর হঠাৎ বা প্রকাশ্যে এসে পড়ে, তবে জালিম সম্প্রদায় ব্যতীত আর কে ধ্বংস হবে?”
সূরা ইউনুস (১০:১৩)“আমরা পূর্ববর্তী বহু জাতিকে ধ্বংস করেছি, যখন তারা ছিল জালিম। তাদের কাছে রসূলগণ স্পষ্ট নিদর্শনসহ এসেছিলেন, কিন্তু তারা বিশ্বাস করেনি। এভাবেই আমি অপরাধী জাতিকে শাস্তি দিয়ে থাকি।”
সূরা হুদ (১১:১০২)“তোমার প্রতিপালকের শাস্তি যদি কোনো জালিম জনপদের ওপর এসে পড়ে, তবে তা অত্যন্ত কষ্টদায়ক ও কঠোর হয়ে থাকে।”
সূরা কাহফ (১৮:৫৯)“এইসব জনপদ ধ্বংস করেছি আমি, যখন তারা ছিল জালিম। আর আমি ধ্বংসের জন্য নির্ধারিত সময় দিয়েছিলাম।”
সূরা বনী ইসরাঈল (১৭:১৬)“আর যখন আমি কোনো জনপদকে ধ্বংস করতে চাই, তখন তাদের সম্পদশালী নেতাদেরকে আদেশ করি। কিন্তু তারা সেখানে সীমালঙ্ঘন করে, ফলে সে দেশের ওপর শাস্তির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয় এবং আমি তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেই।”
সূরা গাশিয়া (৮৮:২৩-২৪)“আর যে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অস্বীকার করে, আল্লাহ তাকে সবচেয়ে বড় শাস্তি দেবেন।”
সূরা আশ-শোয়ারা (২৬:১৩০-১৩৫)“আর যখন তোমরা কাউকে ধরে ধর্ষণ করো, তখন অত্যাচার করো। অতএব, আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনুগত্য করো।”
সূরা বাকারা (২:২৫৭)“… আর যারা কুফরি করে, তাদের সাহায্যকারী হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে অন্ধকারে বের করে নিয়ে যায়। তারা দোজখবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।”
ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে উক্তি ৩০টি
অত্যাচারী শাসক নিয়ে কবিতা
নিচে অত্যাচারী শাসককে কেন্দ্র করে ৫টি ছোট কবিতা (ছন্দযুক্ত ও ভাবসম্পন্ন) দেওয়া হলো। আপনি চাইলে এগুলো নিজের মত করে পরিবর্তন করে নিতে পারেন।
১. “লোভী সিংহাসন”
সিংহাসনে বসে রাজা, নয়নে জ্বলে লোভ,
প্রজার দুঃখ দেখেও তার, হয়নি আজও ক্ষোভ।
রক্ত ঝরে রাস্তায়, কান্না ভাসে ঢেউ,
তবু রাজা হাসে শুধু, মনে নেই কেউ।
২. “আঁধারের রাজত্ব”
তাঁর কথায় উঠে সূর্য, তাঁর ইচ্ছায় রাত,
নিরীহ কণ্ঠ রুদ্ধ করে, বোঝায় শক্তির হাল।
আলো চাইলে দেয় অন্ধকার, ভালোবাসা চায় শত্রুতা,
এ রাজ্যে শুধুই তার আইন, শুধুই তার কথা।
৩. “একনায়কের দেশ”
শাসক বলেন, “আমি ঠিক”, বাকিরা সব ভুল,
প্রতিবাদে কারাগার, প্রশ্নে চলে শূল।
স্বপ্ন যেন নিষিদ্ধ গ্রন্থ, সাহসে লাগে দাম,
একনায়কের দাস সবাই, হারিয়ে গেছে নাম।
৪. “চোখে চোখ রাখো”
চোখে চোখ রাখো শাসক, ভয়কে মুখো মুখি,
তোমার রাজ্য কাঁপবে আজ, প্রজার রক্তে ধুই।
তলোয়ারে নয়, কলমে হবে, অন্যায়ের প্রতিকার,
একদিন সব শাসন ভাঙে, উঠে দাঁড়ায় সত্যের কার।
৫. “অত্যাচারের ছায়া”
পৃথিবী জুড়ে ছায়া নামে, শাসক যখন খল,
প্রাণের দামে কেনে ক্ষমতা, চুরি করে বল।
তবু মনে রেখো ইতিহাসে, থাকে না কেহ চির,
অত্যাচারী হারায় শেষে, ন্যায়ের বাজে বাঁশি।
এই উক্তিগুলো আপনি বক্তৃতা, প্রবন্ধ, সমাজ সচেতনতামূলক পোস্ট, বা প্রতিরোধমূলক সাহিত্যচর্চায় ব্যবহার করতে পারেন।
FAQ: অত্যাচারী শাসক নিয়ে উক্তি
অত্যাচারী শাসক কাকে বলা হয়?
যে শাসক জনগণের অধিকার হরণ করে, অন্যায়ভাবে শাসন করে এবং নিজ স্বার্থে আইন ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে, তাকে অত্যাচারী শাসক বলা হয়।
কেন অত্যাচারী শাসক নিয়ে উক্তি গুরুত্বপূর্ণ?
এই উক্তিগুলো মানুষের মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তুলতে সাহায্য করে এবং ন্যায়বিচারের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।
কোন কোন মনীষীর অত্যাচারী শাসক নিয়ে বিখ্যাত উক্তি আছে?
হযরত আলী (রা.), কাজী নজরুল ইসলাম, মহাত্মা গান্ধী, টমাস জেফারসন, জর্জ অরওয়েল প্রমুখ অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে শক্তিশালী উক্তি করেছেন।
ইসলামে অত্যাচারী শাসক সম্পর্কে কী বলা হয়েছে?
ইসলামে বলা হয়েছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের পক্ষে কথা বলা একটি বড় ইবাদত। হাদীসে এসেছে, “সর্বোৎকৃষ্ট জিহাদ হলো অত্যাচারী শাসকের সামনে সত্য কথা বলা।”
বাংলা সাহিত্যে অত্যাচারী শাসকের চিত্র কোথায় দেখা যায়?
কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা যেমন “বিদ্রোহী”, “দুর্দিনের যাত্রী”-তে এবং শরৎচন্দ্র বা মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসে সমাজের দমননীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ দেখা যায়।

