আয়না দেখার দোয়া

আমরা প্রতিদিনই আয়নায় নিজেদের দেখি, কিন্তু খুব কম মানুষই জানেন যে এই সময়ে একটি সুন্দর দোয়া পড়া সুন্নত। ইসলাম জীবনের প্রতিটি কাজের জন্যই সুন্দর আদব ও দোয়া শিক্ষা দিয়েছে। আয়না দেখার সময় দোয়া পড়লে আল্লাহ আমাদের চেহারা ও চরিত্র উভয়কেই সুন্দর রাখার তাওফিক দেন।

রাসূলুল্লাহ ﷺ আয়না দেখার সময় একটি দোয়া পড়তেন, যা শুধু বাহ্যিক সৌন্দর্য নয়, বরং আভ্যন্তরীণ চরিত্রের উন্নতির জন্যও।


আয়না দেখার দোয়া

আরবি:
اللَّهُمَّ كَمَا حَسَّنْتَ خَلْقِي فَحَسِّنْ خُلُقِي

বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা কামা হাস্সানতা খালকি ফা হাসসিন খুলুকি।

অর্থ:
হে আল্লাহ! যেমন আপনি আমার চেহারাকে সুন্দর করেছেন, তেমনি আমার চরিত্রকেও সুন্দর করে দিন।

রেফারেন্স:
সহিহ ইবনে হিব্বান: হাদিস ৯৬০, তাবারানি — আল-মুজামুল আওসাত: ৬১৯৫


পড়ার নিয়ম

  1. আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখার সময় দোয়াটি পড়া।
  2. অর্থ মনে রেখে আন্তরিকভাবে দোয়া করা।
  3. সম্ভব হলে ধীরে ধীরে ও মনোযোগ দিয়ে পড়া।

দোয়ার তাৎপর্য

  • বাহ্যিক সৌন্দর্যের মতো অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যের জন্যও দোয়া করা।
  • অহংকার ও গর্ব থেকে বাঁচা।
  • আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ।

আয়না ব্যবহারের ইসলামি আদব

  1. অহংকার বা আত্মপ্রশংসা না করা।
  2. সৌন্দর্য দেখে গুনাহের কাজে ব্যবহার না করা।
  3. আয়না পরিষ্কার রাখা।
  4. দোয়া পড়ে চেহারা ও চরিত্র দুটোই সুন্দর রাখার চেষ্টা করা।

আয়না দেখার দোয়ার উপকারিতা

  • চরিত্র ও আচরণ সুন্দর হওয়ার প্রেরণা দেয়।
  • আল্লাহর কাছে দোয়ার মাধ্যমে বাহ্যিক সৌন্দর্য রক্ষা হয়।
  • অন্তরের অহংকার কমে যায়।
  • জীবনে বিনয়ী থাকার শিক্ষা দেয়।

সাধারণ প্রশ্নোত্তর

আয়না ছাড়া অন্য কিছুর প্রতিবিম্ব দেখার সময়ও কি দোয়া পড়া যাবে?

হ্যাঁ, যেমন পানি বা গ্লাসে নিজের মুখ দেখলেও দোয়া পড়া যাবে।

দোয়া কি বাংলায় পড়া যাবে?

অর্থ মনে রেখে বাংলায় পড়া যাবে, তবে আরবিতে পড়া উত্তম।

আয়না দেখার দোয়া কি ফরজ?

না, এটি সুন্নত, তবে পালন করলে সওয়াব পাওয়া যাবে।


উপসংহার

আয়না দেখার দোয়া একটি ছোট কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ সুন্নত, যা বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি চরিত্রের সৌন্দর্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।

আজ থেকেই আয়না দেখার সময় এই দোয়া পড়া শুরু করুন এবং আপনার পরিবার ও বন্ধুদেরও শেখান, যাতে তারা বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারে।

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুরআন-হাদীসভিত্তিক দোয়া, আমল ও ইসলামিক জীবনদর্শন নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সান্নিধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ সূত্রভিত্তিক দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা প্রতিটি দোয়া দলিলসমৃদ্ধ, বাস্তবভিত্তিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপিত, যেন পাঠক সহজেই আমলে নিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন – “প্রত্যেক হৃদয়ের একমাত্র পরিপূর্ণ প্রশান্তি হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে”। তাই তাঁর প্রতিটি লেখা এই লক্ষ্যে নিবেদিত যে, পাঠক যেন দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকৃত হন। লেখার বিষয়: ইসলামিক দোয়া, আমল, ফজিলত, কুরআনিক আয়াতভিত্তিক দোয়া, হাদীস থেকে সংগৃহীত দোয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া।

Leave a Comment