আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় ভাই ও বোনেরা জীবনের এই কঠিন সময়ে যখন মনে হয় সব দরজা বন্ধ, যখন অন্ধকার মনে ঘনিয়ে আসে, তখন শুধু একজনেরই কাছে ফিরে যাওয়া যায় – আল্লাহর কাছে। আজকের এই পোস্টে আমরা ডিপ্রেশন নিয়ে কিছু ইসলামিক স্ট্যাটাস শেয়ার করব, যেগুলো আপনার ভাঙা হৃদয়ে সান্ত্বনার পরশ বুলিয়ে দেবে।
প্রিয় পাঠক, মনে রাখবেন, আপনার যন্ত্রণা আল্লাহ জানেন। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে” (সুরা আল-ইনশিরাহ: ৫)। চলুন, দেখে নিই সেই সান্ত্বনাময় বাণীগুলো…
এখানে আপনি পাবেন:
ডিপ্রেশন নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস
“যখন মনে হয় পৃথিবীটা অন্ধকার, তখন সুরা আদ-দুহা পড়ুন – ‘তোমার রব তোমাকে ছেড়ে যাননি এবং অসন্তুষ্টও হননি… নিশ্চয়ই পরবর্তী জীবন পূর্ববর্তী জীবনের চেয়ে তোমার জন্য উত্তম হবে'”
“ডিপ্রেশন আসলে শয়তানের একটি অস্ত্র। সে চায় আপনাকে আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ করতে। কিন্তু আপনি কি জানেন? আল্লাহ বলেন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজেদের উপর অত্যধিক জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না'” (সুরা আজ-জুমার: ৫৩)
“মনে রাখবেন, প্রতিটি পরীক্ষাই আপনার ঈমানকে শক্তিশালী করছে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘মুমিনের অবস্থা আশ্চর্যজনক! তার সবকিছুই ভালো – যদি সে সুখ পায়, শুকরিয়া আদায় করে, আর যদি কষ্ট পায়, ধৈর্য ধারণ করে'”
“আপনার কান্না আল্লাহর কাছে পৌঁছায়। তিনি বলেন, ‘আমি আমার বান্দার ধারণার কাছেও নেই, আমি তার সাথে থাকি যখন সে আমাকে স্মরণ করে'” (হাদিসে কুদসি)
“ডিপ্রেশনের সময় বেশি বেশি ইস্তিগফার পড়ুন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ তার সব দুঃখ-কষ্ট দূর করবেন, সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করবেন'”
“যখন সবকিছু ভেঙে পড়ে, তখন সুরা আল-বাকারার শেষ দুই আয়াত পড়ুন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘এই দুই আয়াত যে রাতে পড়বে, তা তার জন্য যথেষ্ট হবে'”
“আপনার ব্যথা আল্লাহর কাছে মূল্যবান। তিনি বলেন, ‘আমি আমার বান্দাকে যখন ভালোবাসি, তখন তাকে পরীক্ষা করি'” (হাদিসে কুদসি)। এই পরীক্ষা আপনার মর্যাদা বাড়াচ্ছে!
“ডিপ্রেশনের সময় নামাজে দীর্ঘ সিজদা করুন। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘বান্দা সিজদায় থাকা অবস্থায় আল্লাহর সবচেয়ে নিকটবর্তী হয়'”
“আপনি একা নন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের সাথে আছি, আমি দেখছি এবং শুনছি'” (সুরা ত্বহা: ৪৬)। তিনি আপনার প্রতিটি কষ্টের সাক্ষী!
“সবচেয়ে কঠিন সময়ে সুরা ইউসুফ পড়ুন। এই সুরায় আছে সবচেয়ে সুন্দর সান্ত্বনা – ইউসুফ (আ.)-এর জীবনী, যিনি একের পর এক বিপদেও আল্লাহর উপর ভরসা রেখেছিলেন”
“আপনার দুঃখ সাদাকায় পরিণত হতে পারে। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘মুসলিমের উপর যে কষ্ট, রোগ বা দুঃখ আসে, তা তার গুনাহের কাফফারা হয়ে যায়'”
“ডিপ্রেশন থেকে বের হওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হল অন্যের সাহায্য করা। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার দুঃখ দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার দুঃখ দূর করবেন'”
“আপনার হতাশা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা হোক। দাউদ (আ.) বলেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আমার দুঃখ-কষ্ট শুধু তোমার কাছেই নিয়ে আসি'” (সুরা ইউসুফ: ৮৬)
“মনে রাখবেন, এই কষ্ট চিরস্থায়ী নয়। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই কষ্টের পর স্বস্তি আছে'” (সুরা আল-ইনশিরাহ: ৫)। আপনার সুদিন আসবেই!”
“আপনার জীবনের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায়ও আল্লাহর ইচ্ছায় লিখিত। তিনি বলেন, ‘তোমাদের উপর যা বিপদ আসে, তা তোমাদের হাতের কামাই'” (সুরা আশ-শুরা: ৩০)। কিন্তু এর পরেই আছে ক্ষমা ও পুরস্কার!”
ডিপ্রেশন নিয়ে কোরআনের আয়াত
কোরআনে সরাসরি “ডিপ্রেশন” শব্দটি ব্যবহার হয়নি, তবে দুঃখ, ভয়, হতাশা, দুশ্চিন্তা ইত্যাদি মানসিক অবস্থা নিয়ে অনেক আয়াত আছে। আল্লাহ মানুষকে সান্ত্বনা দিয়েছেন, ধৈর্য ধরতে বলেছেন এবং আশা না হারাতে উপদেশ দিয়েছেন। নিচে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আয়াত তুলে ধরা হলো:
১. দুঃখ ও ভয় দূর করার জন্য
“নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণেই অন্তরসমূহ প্রশান্তি লাভ করে।”
(সূরা আর-রা’দ ১৩:২৮)
২. বিপদে ধৈর্য ধারণ করার জন্য
“তোমরা অবশ্যই ভয়, ক্ষুধা, ধন-সম্পদ, প্রাণ ও ফল-ফসলের ক্ষতি দ্বারা পরীক্ষা করা হবে। আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।”
(সূরা আল-বাকারা ২:১৫৫)
৩. হতাশা থেকে বাঁচার জন্য
“আর আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই কাফির সম্প্রদায় ছাড়া আর কেউ আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয় না।”
(সূরা ইউসুফ ১২:৮৭)
৪. দুশ্চিন্তায় পড়লে
“যে আল্লাহকে ভয় করে, তিনি তার জন্য বের হওয়ার পথ করে দেবেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিজিক দিবেন যা সে কল্পনাও করতে পারে না।”
(সূরা আত-তালাক ৬৫:২-৩)
৫. দুঃখ-কষ্টে প্রার্থনা
“আমার সাথে দোয়া করলে আমি অবশ্যই তার ডাকে সাড়া দেই।”
(সূরা আল-বাকারা ২:১৮৬)
প্রিয় পাঠক, আপনার এই কষ্ট আল্লাহর একটি বিশেষ পরিকল্পনা। হয়তো তিনি আপনাকে এর মাধ্যমে উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করতে চান। ধৈর্য্য ধারণ করুন, আল্লাহ আপনার সাথে আছেন!
যদি এই স্ট্যাটাসগুলো আপনার হৃদয় স্পর্শ করে, তাহলে শেয়ার করে অন্যকেও সান্ত্বনা দিন। কারো না কারো আজ এই কথাগুলো খুব প্রয়োজন!
ওয়াসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

