গাছ — এই ছোট্ট শব্দটার মধ্যেই যেন লুকিয়ে আছে জীবনের পুরো মানে।
আমার কাছে গাছ কেবল প্রকৃতির কোনো নীরব অংশ নয়; বরং তারা আমার জীবনের একান্ত, নিবিড় সঙ্গী।
ছোটবেলায় যখন গ্রামের বাড়ির উঠোনে দাড়িয়ে বড় বড় আমগাছের দিকে তাকিয়ে থাকতাম, মনে হতো — আকাশের সাথে যেন তারা কথা বলছে। ঝিরঝির বাতাসে পাতাগুলোর নড়াচড়া, পাখির কলকাকলি — এসব যেন প্রকৃতির নিঃশব্দ সুর। তখন থেকেই আমি গাছকে ভালোবাসতে শিখেছি, বিনিময়ে কিছু চাওয়া ছাড়াই।
গাছের নিচে দাঁড়ালে আজও মনে হয়, পৃথিবীর সমস্ত উত্তাপ, সমস্ত ক্লান্তি মিলিয়ে যাচ্ছে। ওরা যেন বলে — “ভয় পেয়ো না, আমি আছি, তোমার পাশে আছি।”
প্রচণ্ড গরমের দিনে যখন রাস্তায় ছায়া খুঁজি, বা কোনো পার্কে সবুজের মাঝখানে বসি — তখন বুঝি গাছ না থাকলে জীবনটা কতটা শূন্য হত।
গাছ আমাকে নিঃশব্দে শিখিয়েছে কিভাবে ধৈর্য ধরতে হয়। বছরের পর বছর দাঁড়িয়ে থেকে, ঝড়-ঝঞ্ঝা সহ্য করে কিভাবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয় — এটা গাছের থেকেই শিখেছি। তারা রাগ করে না, অভিযোগ করে না; কেবল দিয়ে যায় — বাতাস দেয়, ছায়া দেয়, জীবন দেয়।
আমি যখন গাছের কাছে দাঁড়াই, মনে হয় আমি প্রকৃতির সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুর সামনে দাঁড়িয়ে আছি। ওরা আমার ক্লান্তি টেনে নেয়, মন ভালো করে দেয় — কোনো বিনিময়ের আশায় নয়, নিঃস্বার্থভাবে।
আমার ইচ্ছে, আমি যেখানে যাবো, যেখানে থাকবো, সেখানেই কিছু গাছ লাগাবো। যেন আমার চলে যাওয়ার পরেও এই পৃথিবীতে আমার ভালোবাসার স্মৃতি থেকে যায়।
গাছ মানে আমার কাছে শুধু পরিবেশ রক্ষা নয়, গাছ মানে — জীবনকে আরও গভীরভাবে অনুভব করা। গাছ মানে — শান্তি, প্রেম আর অস্তিত্বের ছায়াঘেরা প্রতিচ্ছবি।

