যানবাহনে ওঠার দোয়া: ভ্রমণ সুরক্ষার আমল

মানুষ দৈনন্দিন জীবনে নানাভাবে ভ্রমণ করে—হোক তা গাড়ি, বাস, ট্রেন, নৌকা বা বিমান। ভ্রমণ শুধু শারীরিক নয়, বরং নিরাপত্তা ও কল্যাণের বিষয়ও জড়িত। ইসলামে ভ্রমণের শুরুতে আল্লাহর স্মরণ ও দোয়া পড়ার নির্দেশনা আছে, যাতে যাত্রা নিরাপদ হয় এবং বরকত লাভ হয়।

রাসূলুল্লাহ ﷺ ভ্রমণে যানবাহনে ওঠার সময় একটি দোয়া পড়তেন, যা সহিহ হাদিসে বর্ণিত আছে।


যানবাহনে ওঠার দোয়া

আরবি:
بِسْمِ اللَّهِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ، سُبْحَانَ الَّذِي سَخَّرَ لَنَا هَذَا وَمَا كُنَّا لَهُ مُقْرِنِينَ، وَإِنَّا إِلَى رَبِّنَا لَمُنْقَلِبُونَ، الْحَمْدُ لِلَّهِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ، الْحَمْدُ لِلَّهِ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، سُبْحَانَكَ إِنِّي ظَلَمْتُ نَفْسِي فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

বাংলা উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, সুবহানাল্লাধি সাখখারা লানা হাযা, ওয়া মা কুন্না লাহু মুকরিনীন, ওয়া ইন্না ইলা রব্বিনা লামুনকলিবুন। আলহামদু লিল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার। সুবহানাকা ইন্নি যালামতু নাফসি ফাগফিরলি, ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয জুনুবা ইল্লা আনতা।

অর্থ:
আল্লাহর নামে (যাত্রা শুরু করছি)। সব প্রশংসা আল্লাহর, যিনি আমাদের জন্য এটিকে অনুগত করে দিয়েছেন, যদিও আমরা নিজেরা এটি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম ছিলাম না। আর নিশ্চয়ই আমরা আমাদের প্রভুর কাছেই ফিরে যাব। সব প্রশংসা আল্লাহর, আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ। হে আল্লাহ! আপনি পবিত্র, আমি আমার নিজের প্রতি জুলুম করেছি, তাই আমাকে ক্ষমা করুন, কারণ আপনার ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।

রেফারেন্স:
সূরা যুখরুফ: ১৩–১৪, সহিহ মুসলিম: হাদিস ১৩৪২


দোয়ার তাৎপর্য

  • আল্লাহর অনুগ্রহ স্বীকার — আমরা যে যানবাহন ব্যবহার করছি তা আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে আনা একটি নেয়ামত।
  • নিরাপত্তা প্রার্থনা — যাত্রার সময় বিপদ থেকে সুরক্ষা চাওয়া।
  • আখিরাতের স্মরণ — দোয়ার মধ্যে আল্লাহর কাছে ফেরার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেয়।
  • ক্ষমা প্রার্থনা — নিজের ভুল ও গুনাহ মাফ চাওয়া।

যানবাহনে ওঠার সুন্নতি আদব

  1. ডান পা আগে তোলা — যানবাহনে ওঠার সময় ডান পা আগে তোলা সুন্নত।
  2. দোয়া পড়া — ওঠার সাথে সাথে উপরোক্ত দোয়া পড়া।
  3. বিসমিল্লাহ বলা — যাত্রা শুরু করার আগে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা।
  4. অতিরিক্ত কথা বা হাসাহাসি না করা — ভ্রমণের শুরুতে আল্লাহর স্মরণ রাখা।

যানবাহনে ওঠার দোয়ার উপকারিতা

  • যাত্রার সময় মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি।
  • দুর্ঘটনা ও বিপদ থেকে সুরক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয়।
  • যাত্রাকে ইবাদতে পরিণত করা।
  • আধ্যাত্মিকভাবে যাত্রার বরকত বৃদ্ধি।

ঘর থেকে বের হওয়ার দোয়া — সহিহ হাদিস, অর্থ ও উপকারিতা

সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

আধুনিক যানবাহনে এই দোয়া পড়া যাবে কি?

হ্যাঁ, এই দোয়া যেকোনো যানবাহনের জন্য প্রযোজ্য—গাড়ি, ট্রেন, নৌকা বা বিমান।

যদি দোয়া মুখস্থ না থাকে?

বাংলায় অর্থ মনে রেখে পড়া যাবে, তবে মুখস্থ করা উত্তম।

যাত্রা শুরু করার পর দোয়া পড়া যাবে কি?

উত্তম হলো ওঠার সাথে সাথে পড়া, তবে পরে পড়লেও সওয়াব পাওয়া যাবে।


উপসংহার

যানবাহনে ওঠার দোয়া একটি ছোট কিন্তু বরকতময় আমল। এটি যাত্রাকে শুধু নিরাপদ করে না, বরং আল্লাহর নেয়ামত স্মরণ করিয়ে দেয় এবং আখিরাতের কথা মনে করিয়ে দেয়।

আজ থেকেই যানবাহনে ওঠার সময় এই দোয়া পড়া শুরু করুন এবং আপনার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদেরও শেখান, যাতে তারাও আল্লাহর এই সুরক্ষার অংশীদার হতে পারে।

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুরআন-হাদীসভিত্তিক দোয়া, আমল ও ইসলামিক জীবনদর্শন নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সান্নিধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ সূত্রভিত্তিক দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা প্রতিটি দোয়া দলিলসমৃদ্ধ, বাস্তবভিত্তিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপিত, যেন পাঠক সহজেই আমলে নিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন – “প্রত্যেক হৃদয়ের একমাত্র পরিপূর্ণ প্রশান্তি হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে”। তাই তাঁর প্রতিটি লেখা এই লক্ষ্যে নিবেদিত যে, পাঠক যেন দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকৃত হন। লেখার বিষয়: ইসলামিক দোয়া, আমল, ফজিলত, কুরআনিক আয়াতভিত্তিক দোয়া, হাদীস থেকে সংগৃহীত দোয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া।

Leave a Comment