ঘুম থেকে ওঠার দোয়া — সহিহ হাদিস, অর্থ ও উপকারিতা

ঘুম মানুষের জীবনের একটি অপরিহার্য অংশ। আল্লাহ তাআলা ঘুমকে বান্দার জন্য বিশ্রাম ও শক্তি পুনরুদ্ধারের মাধ্যম বানিয়েছেন। ঘুমের সময় মানুষ মৃত্যুর মতো এক অবস্থা অতিক্রম করে, যেখানে আত্মা আল্লাহর কাছে চলে যায় এবং পুনরায় ফেরত আসে। তাই ঘুম থেকে ওঠা আসলে নতুন জীবন পাওয়ার মতো এক বড় নেয়ামত।

ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে প্রতিটি কাজের শুরু ও শেষ আল্লাহর স্মরণে করতে। ঘুম থেকে ওঠা নতুন দিনের সূচনা, আর এই সময়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের যে দোয়া শিখিয়েছেন, তা শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নয়—বরং আখিরাতের স্মরণ ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসার প্রকাশ।


ঘুম থেকে ওঠার দোয়া

আরবি:
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا وَإِلَيْهِ النُّشُورُ

বাংলা উচ্চারণ:
আলহামদু লিল্লাহিল্লাধি আহইয়ানা বা’দা মা আমাতানা, ওয়া ইলাইহিন নুশূর।

অর্থ:
সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি আমাদের মৃত্যুর মতো অবস্থা থেকে জীবিত করলেন, এবং তাঁর কাছেই আমাদের ফিরে যেতে হবে।

রেফারেন্স:
সহিহ বুখারি: হাদিস ৬৩১২


দোয়ার তাৎপর্য ও শিক্ষা

  1. আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা — প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠা একটি নতুন দিনের সূচনা, যা আল্লাহর এক বড় নেয়ামত।
  2. মৃত্যুর অনুরূপ অবস্থা থেকে ফেরা — ঘুমকে “ভাই-মৃত্যু” বলা হয়, কারণ এতে আত্মা সাময়িকভাবে আল্লাহর কাছে যায়।
  3. আখিরাতের স্মরণ — “ওয়া ইলাইহিন নুশূর” অংশ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে একদিন প্রকৃত মৃত্যুর পর আমরা আল্লাহর কাছেই ফিরে যাব।
  4. দিনের সূচনা বরকতময় করা — আল্লাহর প্রশংসা দিয়ে দিনের শুরু মানসিক শান্তি ও আধ্যাত্মিক শক্তি আনে।

ঘুম থেকে ওঠার পর সুন্নতি আমল

১. দোয়া পড়া

ঘুম ভাঙার সাথে সাথে এই দোয়া পড়া রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সুন্নত।

২. ওযু করা

দিনের প্রথম ইবাদতের জন্য পবিত্রতা অর্জন করা।

৩. মিসওয়াক ব্যবহার

দাঁত পরিষ্কার রাখা স্বাস্থ্যকর ও আধ্যাত্মিক সুন্নত।

৪. ফজরের নামাজ আদায়

দিনের প্রথম ইবাদত হিসেবে ফজরের নামাজ পড়া বরকত আনে।

৫. সকালের যিকির ও দোয়া

সকালবেলার আজকার পড়ে আল্লাহর সুরক্ষা লাভ করা।


ঘুম থেকে ওঠার দোয়ার উপকারিতা

  • আল্লাহর সাথে সম্পর্ক দৃঢ় হয়।
  • মানসিক প্রশান্তি ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে দিন শুরু হয়।
  • আখিরাতের প্রস্তুতি মনে করিয়ে দেয়।
  • সওয়াব অর্জন হয় সুন্নত পালন করার মাধ্যমে।

ইসলামি দৃষ্টিতে ঘুম ও জাগরণ

আল্লাহ তাআলা কুরআনে বলেন—
“তিনিই তোমাদেরকে রাতে মৃত্যু (ঘুম) দেন এবং দিনে যা করো তা জানেন, তারপর দিনের বেলায় তোমাদেরকে জীবিত করেন।”
সূরা আনআ’আম: ৬০

রাসূলুল্লাহ ﷺ ঘুম ও জাগরণ উভয়কেই আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে গণ্য করতেন এবং প্রতিবার জাগ্রত হয়ে দোয়া পড়তেন।


সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

দোয়া কি বাংলায় পড়া যাবে?

আরবিতে পড়া উত্তম, তবে অর্থ মনে রেখে বাংলায় পড়লেও আল্লাহ কবুল করবেন।

যদি ঘুম থেকে ওঠার পর দোয়া পড়তে ভুলে যাই?

মনে পড়লেই পড়া উচিত, নিয়মিত চর্চায় অভ্যাস হয়ে যাবে।

শিশুদের কি শেখানো যাবে?

অবশ্যই, ছোটবেলা থেকেই শেখালে সহজে অভ্যাসে পরিণত হবে।


উপসংহার

ঘুম থেকে ওঠার দোয়া একটি সহজ কিন্তু বরকতময় আমল। এটি শুধু নতুন দিনের জন্য আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ নয়, বরং মৃত্যুর পর পুনরুত্থানের স্মরণ করিয়ে দেয়। প্রতিদিন সকালে এই দোয়া পড়ে দিনের শুরু করলে আল্লাহর রহমত, সুরক্ষা এবং বরকত লাভ হয়।

আজ থেকেই ঘুম থেকে ওঠার দোয়া পড়া শুরু করুন এবং আপনার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদেরও শেখান, যাতে তারাও আল্লাহর এই বরকতময় সুন্নতের অংশীদার হতে পারে।

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুরআন-হাদীসভিত্তিক দোয়া, আমল ও ইসলামিক জীবনদর্শন নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সান্নিধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ সূত্রভিত্তিক দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা প্রতিটি দোয়া দলিলসমৃদ্ধ, বাস্তবভিত্তিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপিত, যেন পাঠক সহজেই আমলে নিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন – “প্রত্যেক হৃদয়ের একমাত্র পরিপূর্ণ প্রশান্তি হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে”। তাই তাঁর প্রতিটি লেখা এই লক্ষ্যে নিবেদিত যে, পাঠক যেন দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকৃত হন। লেখার বিষয়: ইসলামিক দোয়া, আমল, ফজিলত, কুরআনিক আয়াতভিত্তিক দোয়া, হাদীস থেকে সংগৃহীত দোয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া।

Leave a Comment