হিংসা বা ঈর্ষা এমন একটি আত্মিক ব্যাধি, যা ধীরে ধীরে একজন মানুষের অন্তরকে জ্বালিয়ে দেয় এবং আমল নষ্ট করে দেয়। ইসলামে হিংসাকে অত্যন্ত ক্ষতিকর ও পাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ব্লগ পোস্টে আমরা জানব – হিংসা নিয়ে হাদিস, কোরআনের আয়াত, এবং ইসলামিক মনীষীদের বাণী, যা আমাদের হিংসা থেকে বাঁচতে সাহায্য করবে।
এখানে আপনি পাবেন:
হিংসা নিয়ে কোরআনের আয়াত
১. সূরা আল ফালাক (১১৩:৫)
قُلْ أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ … وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ إِذَا حَسَدَ
“বলুন, আমি আশ্রয় চাই হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।”
— (সূরা ফালাক, আয়াত ৫)
এই আয়াতে আল্লাহ আমাদের নির্দেশ দেন, যেন আমরা হিংসুকের ক্ষতি থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই।
২. সূরা আল বাকারা (২:১০৯)
“অনেক আহলে কিতাব তোমাদের ঈমানের পর অবিশ্বাসে ফিরিয়ে দিতে চায়, নিজেদের অন্তরের হিংসা-বশত।”
হিংসা কেবল মানুষের প্রতি ক্ষতির আগ্রহ নয়, বরং ঈমান পর্যন্ত ধ্বংস করতে পারে।
৩. সূরা আন নিসা (৪:৫৪)
“তারা কি লোকদের প্রতি হিংসা করে, আল্লাহ তাদের যা দিয়েছেন তাতে?”
হিংসা হচ্ছে আল্লাহর ভাগ করে দেওয়া নিয়ামতকে অপছন্দ করা — এটি সরাসরি ঈমানের পরিপন্থী।
হিংসা নিয়ে হাদিস
১. সহীহ বুখারী, হাদিস: ৬০৬৫
“তোমরা একে অপরকে হিংসা করো না… বরং সবাই আল্লাহর বান্দা ও ভাই ভাই হয়ে যাও।”
এখানে ইসলাম ভ্রাতৃত্ব ও একতা বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে, হিংসা যেন সম্পর্ক নষ্ট না করে।
২. আবু দাউদ: ৪৯০৩
“হিংসা নেক আমলগুলোকে নষ্ট করে দেয়, যেমন আগুন কাঠকে পোড়ায়।”
যে যত ভালো কাজই করুক, যদি অন্তরে হিংসা থাকে, তার সওয়াব মুছে যেতে পারে।
৩. তাবারানী হাদীস
“একজন মুসলমানের অন্তরে ঈমান ও হিংসা একসাথে থাকতে পারে না।”
হিংসা ও ঈমান একে অপরের পরিপন্থী — একজন প্রকৃত মুসলমান হিংসামুক্ত থাকে।
হিংসা নিয়ে ইসলামিক উক্তি
“হিংসা এমন এক আগুন, যা আগে নিজের হৃদয় পোড়ায়, তারপর চারপাশ।”
“হিংসুক মানুষ কখনোই তৃপ্ত হতে পারে না, কারণ সে অন্যের সুখে কষ্ট পায়।”
“হিংসা একজন মুমিনের আত্মাকে অন্ধকারে ডুবিয়ে দেয়।”
“যার অন্তর শুদ্ধ, তার মুখে প্রশংসা; আর যার অন্তরে হিংসা, তার মুখে কুৎসা।”
“হিংসা বন্ধ হলে সমাজে শান্তি ফিরে আসবে।”
হিংসা নিয়ে ইসলামিক স্ট্যাটাস
📿 হিংসা ঈমান ধ্বংস করে, যেমন আগুন কাঠকে জ্বালিয়ে ফেলে। — হাদীস
🕊️ হিংসা নয়, ভাইয়ে ভাইয়ে ভালোবাসা গড়ো — এটাই ইসলামের শিক্ষা।
✨ যে হৃদয়ে হিংসা বাস করে, সেখানে আল্লাহর নূর ঢুকতে পারে না।
🔥 হিংসুক নিজেই নিজের আগুনে জ্বলে, অন্যের সুখ দেখে কষ্টে মরে।
🕋 আল্লাহর দেওয়া ভাগ্যে সন্তুষ্ট না হয়ে হিংসা করা, শয়তানের পথ।
🌿 যার অন্তর আল্লাহর জিকিরে ভরা, তার মধ্যে হিংসার ঠাঁই নেই।
💔 তোমার হিংসা অন্যের ক্ষতি করে না, বরং তোমার আখিরাত নষ্ট করে।
📖 সূরা ফালাকের শেষ আয়াতে — হিংসুকের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে।
🌙 হিংসা মানুষের আমলগুলোকে ধ্বংস করে দেয়, অথচ মানুষ তা বুঝতেও পারে না।
🤲 হিংসা দূর করো, প্রশংসা শিখো — তবেই অন্তর হবে ঈমানের আলোয় আলোকিত।
হিংসা নিয়ে ইসলামিক ক্যাপশন
📿 “হিংসা আগুনের মতো—যা আগে নিজের আমল পুড়িয়ে দেয়।” 🔥
🕋 “যে হিংসা করে, সে আল্লাহর ভাগ্যে সন্তুষ্ট নয়।”
✨ “অন্যের রিজিক দেখে হিংসা করো না, আল্লাহ তোমার জন্য যা ঠিক, সেটাই দেবেন।”
🌙 “হিংসা অন্তরের অন্ধকার; আল্লাহর নূরের পথ তা নয়।”
🤲 “প্রশংসা করো, হিংসা নয়—এটাই মুমিনের চরিত্র।”
📖 “সূরা ফালাকে শিখে নাও, কারণ হিংসুকের অনিষ্ট থেকে কেবল আল্লাহই রক্ষা করতে পারেন।”
🕊️ “যার অন্তর আল্লাহর জিকিরে পূর্ণ, তার মুখে হিংসার জায়গা হয় না।”
🌸 “অন্যের আলো দেখে ঈর্ষা নয়, বরং নিজে আলোকিত হওয়ার চেষ্টা করো।”
💔 “হিংসা মাফ চাইবার আগেই আমল ধ্বংস করে দেয়!”
🕌 “ঈমান ও হিংসা এক হৃদয়ে একসাথে টিকতে পারে না – হাদীস।”
হিংসা থেকে বাঁচার উপায় (ইসলামিক নির্দেশনা)
✅ সবসময় আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের জন্য শোকর আদায় করা
✅ অন্যের ভালো দেখে প্রশংসা করা ও দোয়া করা
✅ হিংসা হলে সাথে সাথে ইস্তেগফার পড়া
✅ সূরা ফালাক ও সূরা নাস নিয়মিত পাঠ করা
✅ অন্তরের রোগ হিসেবে হিংসা চিহ্নিত করে তা দূর করতে চেষ্টা করা
উপসংহার
হিংসা কেবল অন্যকে ক্ষতি করে না, বরং নিজের আমল, শান্তি এবং দুনিয়া-আখিরাত দুই জগতেই ক্ষতির কারণ হয়। তাই ইসলামে হিংসা থেকে বাঁচতে কোরআন ও হাদীসে বারবার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। আসুন, আমরা হিংসা পরিহার করে শান্তিপূর্ণ, ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সমাজ গঠনে অবদান রাখি।

