জ্বর একটি সাধারণ অসুস্থতা হলেও এটি শরীরের দুর্বলতা ও অস্বস্তি বাড়িয়ে দেয়। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে যে, রোগ-ব্যাধি দূর করতে শুধু চিকিৎসার ওপর নির্ভর না করে আল্লাহর কাছেও সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। সহিহ হাদিসে এমন কিছু দোয়া রয়েছে যা পড়ে জ্বর কমানোর জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা যায়।
রাসূলুল্লাহ ﷺ সাহাবিদের বিভিন্ন অসুস্থতার সময় বিশেষ দোয়া শিখিয়েছেন, যা জ্বর কমানোর ক্ষেত্রেও উপকারী।
এখানে আপনি পাবেন:
জ্বর কমানোর দোয়া (সহিহ হাদিস থেকে)
১. রোগ ও জ্বরের জন্য সাধারণ দোয়া
আরবি:
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ، أَذْهِبِ الْبَاسَ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা রাব্বান-নাস, আযহিবিল বা’স, ইশফি আন্তাশ শাফি, লা শিফা’ ইল্লা শিফাউক, শিফা’আন লা ইউগাদিরু সাকামা।
অর্থ:
হে আল্লাহ! মানুষের রব! কষ্ট দূর করুন, আরোগ্য দান করুন। আপনি আরোগ্যদাতা, আপনার আরোগ্য ছাড়া কোনো আরোগ্য নেই। এমন আরোগ্য দিন যা কোনো রোগ অবশিষ্ট রাখবে না।
রেফারেন্স:
সহিহ বুখারি: হাদিস ৫৭৪৩, সহিহ মুসলিম: হাদিস ২১৯১
২. জ্বরের জন্য বিশেষ দোয়া
সহিহ হাদিসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:
“তোমাদের কেউ যখন জ্বরে আক্রান্ত হয়, তখন যেন সে ঠাণ্ডা পানিতে তিন রাত তার শরীরে স্নান করে জ্বর দূর করার চেষ্টা করে।” (মুসলিম: ২২০৪)
যদিও এটি সরাসরি দোয়া নয়, বরং জ্বরের চিকিৎসা-সংক্রান্ত সুন্নত নির্দেশনা। তবে দোয়া ও চিকিৎসা একসাথে করলে উপকার পাওয়া যায়।
পড়ার নিয়ম
- অসুস্থ ব্যক্তির মাথা বা শরীরে হাত রেখে দোয়াটি পড়া।
- নিজেও নিজের জন্য পড়তে পারেন।
- মনোযোগ ও আন্তরিকতার সাথে অর্থ মনে রেখে পড়া।
জ্বর কমানোর জন্য সুন্নত অনুযায়ী করণীয়
- দোয়া পড়া — উপরের সহিহ হাদিসের দোয়া পড়া।
- ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার — সহিহ হাদিস অনুযায়ী স্নান বা শরীর মুছে দেওয়া।
- ইস্তিগফার — গুনাহ ক্ষমা চাওয়া, কারণ রোগ অনেক সময় গুনাহ মাফের মাধ্যম।
- হালাল খাবার গ্রহণ — অসুস্থ অবস্থায় হালাল ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
দোয়ার উপকারিতা
- জ্বর ও রোগের কষ্ট কমে যায়।
- মনোবল বৃদ্ধি পায়।
- আল্লাহর ওপর ভরসা ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি লাভ হয়।
- রোগ থেকে আরোগ্য লাভের সাথে সওয়াবও পাওয়া যায়।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর
দোয়া কি চিকিৎসার বিকল্প?
না, দোয়া চিকিৎসার বিকল্প নয়, বরং চিকিৎসার সাথে দোয়া করলে উপকার দ্বিগুণ হয়।
জ্বরের সময় কতবার দোয়া পড়া উচিত?
সীমাহীনভাবে পড়া যাবে, তবে প্রতিবার মনোযোগ সহকারে পড়া উত্তম।
অন্যের জন্য দোয়া করলে কি উপকার হয়?
হ্যাঁ, অন্যের জন্য দোয়া করলে ফেরেশতারা দোয়া করার ব্যক্তির জন্যও একই দোয়া করে।
উপসংহার
জ্বরের মতো সাধারণ অসুস্থতার সময়ও সহিহ হাদিসের দোয়া পড়া সুন্নত ও বরকতময়। চিকিৎসার পাশাপাশি দোয়া করলে রোগ থেকে আরোগ্য লাভ সহজ হয় এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ হয়।
আজ থেকেই জ্বরের সময় এই দোয়া পড়ার অভ্যাস করুন এবং আপনার পরিবার ও বন্ধুদেরও শেখান, যাতে তারা অসুস্থতার সময় আল্লাহর সাহায্য পেতে পারে।

