যৌতুক — একটি শব্দ, কিন্তু এর ভিতরে লুকিয়ে থাকে অজস্র চোখের জল, ভাঙা স্বপ্ন আর অসংখ্য মেয়ের অপমানিত আত্মা। আজও অনেক পরিবারে মেয়ের বিয়ের মান নির্ধারিত হয় কত টাকা বা কতটা মালপত্র দিয়ে দেওয়া যাবে, সেটার উপর ভিত্তি করে।
সমাজ যতই আধুনিক হোক, এই লোভনীয় মানসিকতা এখনো অনেক পরিবারে “প্রথা” নামেই বেঁচে আছে। অথচ বিষয়টি কেবল অন্যায় নয়, এটি নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে চরম নিন্দনীয়।
একটা মেয়েকে জীবনসঙ্গিনী হিসেবে গ্রহণ করার আগে যদি টাকার হিসাব লাগে, তাহলে সে বিয়ে নয় — বরং ব্যবসার মত একটা চুক্তি হয়ে যায়। এই কারণেই যৌতুকবিরোধী সচেতনতা ও কথাবার্তা এখন সময়ের দাবি। এই লেখায় আমরা তুলে ধরছি কিছু প্রাসঙ্গিক ও শক্তিশালী “যৌতুক নিয়ে উক্তি”,
যা শুধু প্রতিবাদ নয়, নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণাও হয়ে উঠতে পারে।
এখানে আপনি পাবেন:
যৌতুক নিয়ে উক্তি
“যে বউয়ের সঙ্গে বাকি জীবন কাটাবে, তার হাত ধরার আগে যদি টাকার হিসাব লাগে — সেটা প্রেম নয়, লোভ।”
“যৌতুক চাওয়া মানে নিজের যোগ্যতা শূন্য প্রমাণ করা।”
“যে মেয়ে একা একটি ঘরকে পরিবার বানাতে পারে, তার সঙ্গে টাকা চাইলে তা অপমানই নয়, পাপও বটে।”
“যৌতুক হলো বিয়ের নামে বৈধ ডাকাতি।” — হুমায়ূন আহমেদ
“যে পুরুষ যৌতুক চায়, সে ভালো স্বামী হতে পারে না।” — কাজী নজরুল ইসলাম
“যৌতুক প্রথা সমাজের ক্যানসার, যা ধীরে ধীরে সবকিছু গ্রাস করছে।” — ড. মুহাম্মদ ইউনুস
“যৌতুক মানে হলো মেয়ের সম্মান বিক্রি।” — শামসুর রাহমান
“যেখানে যৌতুক আছে, সেখানে ভালোবাসা নেই।” — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“যৌতুক গ্রহণ মানে নিজের পুরুষত্বকে লাঞ্ছিত করা।” — মহাত্মা গান্ধী
“যে সমাজে যৌতুক চলে, সেখানে মানবিকতা থাকে না।” — আব্রাহাম লিংকন
“যৌতুক নামের এই অভিশাপ মেয়েদের স্বপ্নকে কবর দেয়।” — সেলিনা হোসেন
“যৌতুক শুধু পরিবারকে নয়, পুরো জাতিকে ধ্বংস করে।” — নেলসন ম্যান্ডেলা
“মেয়ের বাবা-মাকে কাঁদিয়ে সুখী হওয়া কোনো মানুষের কাজ নয়।” — জসীম উদ্দীন
“বিয়ে ভালোবাসার বন্ধন, ব্যবসার চুক্তি নয় — তাই যৌতুকের নামে দর কষাকষি বন্ধ হোক।”
“যৌতুক চেয়ে নয়, যোগ্যতা দিয়ে বর হোন — সম্মান আপনাতেই আসবে।”
“যৌতুক নেয়া পুরুষের সম্মান সমাজের চোখে শেষ, যদিও সে নিজেকে বোঝে রাজা।”
“যে বিয়ে শুরু হয় লোভ দিয়ে, তা শেষ হয় অশান্তি দিয়ে।”
“একটা মেয়ে যদি তোমার ঘরে আসে, তাকে গ্রহণ করো হৃদয় দিয়ে — টাকার পরিমাণ দিয়ে নয়।”
“যৌতুকের নামে মেয়ের বাবার মাথা নিচু করানো, আসলে নিজের মূল্য নিজেই কমিয়ে নেওয়া।”
“বিয়ে পবিত্র সম্পর্ক, আর যৌতুক সেই সম্পর্কের সবচেয়ে বড় কলঙ্ক।”
“যৌতুক নিতে না বলা মানে শুধু প্রতিবাদ নয়, এটি নতুন প্রজন্মের সম্মানের ভিত্তি।”
“যে ছেলে নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকে, সে কখনোই যৌতুক চায় না — চায় একজন জীবনসঙ্গী।”
যৌতুক নিয়ে কিছু কথা
যৌতুক নিয়ে বিয়ে হয় না, সেটা হয় একটা দাসত্বের চুক্তি।
একটা মেয়ের জীবনের মূল্য কখনোই টাকায় পরিমাপ করা যায় না।
যে ছেলে যৌতুক ছাড়া বিয়ে করতে পারে না, সে স্বাবলম্বী নয়, সে পরনির্ভর।
যৌতুক শুধু টাকার লেনদেন নয় — এটি আত্মসম্মান, ভালোবাসা আর বিশ্বাসের অপমান।
যে পরিবার যৌতুক চায়, সেখানে কনে নয় — পণ্য চাওয়া হয়।
বিয়েতে যদি টাকা-সামগ্রীর দরকষাকষি চলে, তাহলে সেখানে সম্পর্ক নয়, লোভ গড়ে ওঠে।
যৌতুকপ্রথা সমাজকে ভিতর থেকে নষ্ট করছে, আর আমরা সেটাকে সংস্কৃতি ভেবে আঁকড়ে ধরে আছি।
বিয়ের আসর পবিত্র হওয়া উচিত, হিসাবের খাতা নয়।
যৌতুক মানে কন্যার পিতা চোখ নামিয়ে কথা বলবে — এমন সমাজের চোখে পানি থাকা উচিত।
যৌতুকবিহীন বিয়েই প্রকৃত সম্মানের প্রতিচ্ছবি — আসুন আমরা সেই উদাহরণ গড়ি।
উপসংহার
যৌতুক প্রথা শুধু একটি পরিবার নয়, পুরো সমাজকে নীরবে বিষিয়ে তুলছে।
একটি মেয়ে বা তার পরিবারের কাছ থেকে অর্থ বা উপহার দাবি করার মানেই হলো সেই সম্পর্কের ভিতরেই লোভ ঢুকিয়ে দেওয়া। এভাবে শুরু হওয়া সংসারে শান্তি আসে না, আসে অসম্মান, হতাশা আর অপমান। একজন সচেতন মানুষ হিসেবে আমাদের উচিত — এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো, মুখ তুলে বলা: “আমি যৌতুক নেব না, আর কাউকে নিতে দেব না।”
এই উক্তিগুলো কেবল বাক্য নয়, এগুলো একটি সামাজিক আন্দোলনের শুরু হতে পারে।
আপনার একটি পোস্ট, একটি প্রতিবাদ বা একটি সিদ্ধান্ত হয়তো বদলে দিতে পারে বহু নারীর ভবিষ্যৎ।
আসুন, আমরা বিয়ে নামক পবিত্র সম্পর্ককে ব্যবসা নয়, ভালোবাসার জায়গা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি।

