কাউকে পছন্দ হলে তাকে হালাল ভাবে পাওয়ার দোয়া

মানুষের হৃদয়ে কারো প্রতি ভালো লাগা বা ভালোবাসা জন্ম নেওয়া স্বাভাবিক ব্যাপার। এটি আল্লাহ প্রদত্ত একটি আবেগ, যা মানুষকে সম্পর্কের দিকে টানে। কিন্তু ইসলাম এই আবেগকে শৃঙ্খলার মাধ্যমে পরিচালনা করতে শিখিয়েছে। কাউকে পছন্দ হলে হালাল উপায়ে তাকে পাওয়ার চেষ্টা করা উচিত। ইসলাম যিনার দরজা বন্ধ করে দিয়েছে, কিন্তু বৈধ (হালাল) সম্পর্কের দরজা খুলে রেখেছে—আর তা হলো বৈধ বিবাহ।


পছন্দের মানুষকে হালালভাবে পাওয়ার জন্য কুরআন থেকে একটি দোয়া

رَبِّ إِنِّي لِمَا أَنزَلْتَ إِلَيَّ مِنْ خَيْرٍ فَقِيرٌ
(সূরা কাসাস: ২৪)

উচ্চারণ:
রব্বি ইন্নি লিমা আনযালতা ইলাইয়্যা মিন খাইরিন ফাকীর

অর্থ:
হে আমার প্রভু! আপনি আমার প্রতি যেই কল্যাণ অবতীর্ণ করবেন, আমি তার মুখাপেক্ষী।

এই দোয়াটি হজরত মূসা (আ.) এর দোয়া। তিনি যখন বিপদের মধ্যে পড়েছিলেন, তখন এই দোয়া করেছিলেন। এরপর আল্লাহ তাঁকে সহধর্মিণী ও নিরাপদ আশ্রয় দান করেন। কেউ যদি আল্লাহর ওপর ভরসা করে এই দোয়াটি নিয়মিত পড়ে, ইনশাআল্লাহ তিনি হালাল রাস্তায় ভালোবাসা লাভ করবেন।


পছন্দের মানুষকে হালালভাবে পাওয়ার জন্য আরও একটি দোয়া

اللَّهُمَّ اجْمَعْ بَيْنِي وَبَيْنَ (ফুলনাম) فِي خَيْرٍ
(নামটি নিজের মনে রেখে বা দুআয় উল্লেখ করে পড়বেন)

উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইজমা’ বাইনি ওয়া বাইনা (নাম) ফি খাইর

অর্থ:
হে আল্লাহ! আমার ও (অমুক ব্যক্তির) মধ্যে কল্যাণের মাধ্যমে মিলন ঘটিয়ে দিন।

এই দোয়া তখনই করা উচিত যখন আপনি মনে করেন আপনি তার সঙ্গে হালাল সম্পর্ক গড়তে প্রস্তুত এবং আপনার নিয়ত সঠিক।


হালাল ভালোবাসা পাওয়ার ইসলামি করণীয়

১. নিয়ত ঠিক রাখুন – সম্পর্ক শুধু চেহারা বা আবেগের জন্য নয়, বরং দ্বীনি ও দায়িত্বশীল জীবনসঙ্গী খোঁজার নিয়ত থাকতে হবে
২. নামাজ ও দোয়ায় মনোযোগ দিন – যিনি সত্যিকারে আল্লাহর কাছে চায়, তিনি কখনো ব্যর্থ হন না
৩. পরিবারের মাধ্যমে প্রস্তাব দিন – গোপনে প্রেম নয়, সম্মানের সাথে পরিবার জড়িত করুন
৪. অপেক্ষা করুন এবং সবর করুন – কখনো কখনো তাৎক্ষণিক ফল না এলেও, ধৈর্যই পরবর্তীতে শান্তির দ্বার খুলে দেয়
৫. হারাম সম্পর্ক এড়িয়ে চলুন – গোপন যোগাযোগ, চ্যাট বা দেখা-সাক্ষাৎ থেকে বিরত থাকুন; কারণ তা হালাল পথকে কঠিন করে তোলে


যদি পছন্দের মানুষকে না পাওয়া যায়?

আল্লাহ সব জানেন, আমরা জানি না। কেউ যদি হালাল পথে চেষ্টা করে, দোয়া করে, কিন্তু তারপরও সেই মানুষকে না পায়, তাহলে মনে রাখতে হবে – আল্লাহ কোনো না কোনো কারণে তাকে সরিয়ে রেখেছেন। হয়তো তার মধ্যে এমন কিছু আছে যা ভবিষ্যতে কষ্টের কারণ হতো।

এ অবস্থায় করণীয়:

  • আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসা রাখা
  • আত্মসম্মান বজায় রেখে নিজের জীবনে এগিয়ে যাওয়া
  • বিশ্বাস রাখা, আল্লাহ ভালো কিছুই নির্ধারণ করেন

ইসলামিক রোমান্টিক স্ট্যাটাস

উপসংহার

ভালোবাসা গোপন নয়, বরং পবিত্র হওয়া উচিত। কাউকে পছন্দ হলে আল্লাহর কাছে দোয়া করুন, হারাম সম্পর্কে জড়াবেন না। যে সম্পর্ক দোয়া ও ইজ্জতের সাথে শুরু হয়, তা-ই বরকতময় হয়। আপনার চাওয়া যদি হালাল হয়, আর আপনি যদি ধৈর্যধারণ করেন, তবে আল্লাহ তা আপনাকে হয়তো দুনিয়ায় দেবেন, আর না দিলেও পরকালে উত্তম প্রতিদান দেবেন।

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুরআন-হাদীসভিত্তিক দোয়া, আমল ও ইসলামিক জীবনদর্শন নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সান্নিধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ সূত্রভিত্তিক দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা প্রতিটি দোয়া দলিলসমৃদ্ধ, বাস্তবভিত্তিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপিত, যেন পাঠক সহজেই আমলে নিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন – “প্রত্যেক হৃদয়ের একমাত্র পরিপূর্ণ প্রশান্তি হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে”। তাই তাঁর প্রতিটি লেখা এই লক্ষ্যে নিবেদিত যে, পাঠক যেন দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকৃত হন। লেখার বিষয়: ইসলামিক দোয়া, আমল, ফজিলত, কুরআনিক আয়াতভিত্তিক দোয়া, হাদীস থেকে সংগৃহীত দোয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া।

Leave a Comment