কাজী নজরুল ইসলাম এর সেরা ৩৫টি উক্তি

By Ayan

Published on:

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কাজী নজরুল ইসলাম এক অনন্য নাম। “বিদ্রোহী কবি” নামে খ্যাত এই মহৎ কবি, সাহিত্যিক ও সংগীতকার তাঁর শক্তিশালী লেখনী ও সুরেলা কণ্ঠে বাঙালির স্বাধীনতা, প্রেম, সাম্য ও মানবতার চেতনা জাগিয়ে তুলেছেন। তাঁর কবিতা, গান ও প্রবন্ধে রয়েছে বৈপ্লবিক মনোভাব, অসাম্প্রদায়িকতা এবং জীবনের গভীর দর্শন।

নজরুল ইসলামের উক্তিগুলো শুধু সাহিত্যিক সৌন্দর্যের উদাহরণই নয়, বরং জীবন, প্রেম, মানবতা ও সমাজ নিয়ে গভীর ভাবনার প্রতিফলন। তাই তাঁর লেখা থেকে নেওয়া প্রতিটি লাইন আমাদের চিন্তাকে আলোড়িত করে, অনুপ্রেরণা দেয় এবং জীবনের পথে সঠিক দিশা খুঁজে নিতে সাহায্য করে।

এই লেখায় আমরা তুলে ধরেছি কাজী নজরুল ইসলামের ৩৫টি অনুপ্রেরণামূলক উক্তি ও তাদের উৎস, যা আপনাকে শুধু সাহিত্যিক আনন্দই দেবে না, বরং জীবনের নানা পর্যায়ে দিশারীর মতো পথ দেখাবে।

কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি

“সর্বসহা কন্যা মোর! সর্বহারা মাতা! শূন্য নাহি রহে কভূ মাতা ও বিধাতা!”— উৎস: কাব্যগ্রন্থ সর্বহারা, কবিতা ‘মা’

“আমরা সবাই পাপী; আপন পাপের বাটখারা দিয়ে; অন্যের পাপ মাপি!!”— উৎস: প্রবন্ধ ‘মানুষ’

“কামনা আর প্রেম দুটি হচ্ছে সম্পূর্ণ আলাদা। কামনা একটা প্রবল সাময়িক উত্তেজনা মাত্র আর প্রেম হচ্ছে ধীর প্রশান্ত ও চিরন্তন।”— উৎস: প্রবন্ধ ‘প্রেম ও কামনা’

“তোমারে যে চাহিয়াছে ভুলে একদিন, সে জানে তোমারে ভোলা কি কঠিন।”— উৎস: গান ‘তোমারে ভোলা যে কঠিন’

“কপালে সুখ লেখা না থাকলে সে কপাল পাথরে ঠুকেও লাভ নেই। এতে কপাল যথেষ্টই ফোলে, কিন্তু ভাগ্য কখনো খোলে না।”— উৎস: প্রবন্ধ ‘কপাল’

“মৃত্যুর যন্ত্রণার চেয়ে বিরহের যন্ত্রণা যে কতটা কঠিন, কতটা ভয়ানক তা একমাত্র ভুক্তভোগীই অনুভব করতে পারে।”— উৎস: উপন্যাস মৃত্যুক্ষুধা

“ভালোবাসার কোন অর্থ বা পরিমাণ নেই।”— উৎস: প্রবন্ধ ‘ভালোবাসা’

“নিপীড়নের শৃঙ্খল কখনও স্বাধীনতার চেতনাকে বেঁধে রাখতে পারে না।”— উৎস: কবিতা ‘বিদ্রোহী’

“কোনকালে একা হয়নিকো জয়ী, পূরুষের তরবারী; প্রেরণা দিয়েছে, শক্তি দিয়াছে, বিজয়ালক্ষী নারী।”— উৎস: কবিতা ‘নারী’

“যুগের ধর্ম এই- পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই।”— উৎস: কবিতা ‘বিদ্রোহী’

“সত্য যদি হয় ধ্রুব, তোর কর্মে যদি না রয় ছল, ধর্ম দুগ্ধে না রয় জল, সত্যের জয় হবেই হবে আজ নয় কাল মিলবেই ফল।”— উৎস: কবিতা ‘সত্য’

“হিংসাই শুধু দেখেছ এ চোখে, দেখ নাই আর কিছু, সমূখে শুধু রহিলে তাকায়ে, চেয়ে দেখিলেনা পিছু।”— উৎস: কবিতা ‘হিংসা’

“বিদ্রোহী মানে কাউকে না মানা নয়। যা বুঝিনা তা মাথা উঁচু করে বুঝি না বলা।”— উৎস: প্রবন্ধ ‘বিদ্রোহের ভাষা’

“আমি এই দেশে, এই সমাজে জন্মেছি বলেই শুধু এই দেশের, এই সমাজেরই নই, আমি সকল দেশের সকল মানুষের।”— উৎস: প্রবন্ধ ‘মানুষ’

“ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যারা জীবনের জয়গান, আজ অলক্ষ্যে দাঁড়ায়েছে তারা, দিবে কোন বলিদান?”— উৎস: কবিতা ‘ফাঁসি’

“আমি কণ্ঠহীনদের কণ্ঠস্বর, আশাহীনদের আশা।”— উৎস: প্রবন্ধ ‘আমার ভাষা’

“আকাশ আমার ছাদ, পৃথিবী আমার বিছানা এবং স্বাধীনতা আমার ধর্ম।”— উৎস: প্রবন্ধ ‘স্বাধীনতা’

“যদি আমার কোনো বাড়ি বা পরিবার না থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত আমার কলমে কালি থাকে, ততক্ষণ আমার সবকিছু আছে।”— উৎস: প্রবন্ধ ‘আমার কলম’

“পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর, বিধির বিধান সত্য হোক।”— উৎস: কবিতা ‘পুঁথির বিধান’

“অসুন্দর পৃথিবীকে সুন্দর করতে, সর্ব নির্যাতন থেকে মুক্ত করতেই মানুষের জন্ম।”— উৎস: প্রবন্ধ ‘মানুষের জন্ম’

“গাহি সাম্যের গান, মানুষের চেয়ে বড়ো কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।”— উৎস: কবিতা ‘সাম্যবাদী’

“মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মন্দির-কাবা নাই।”— উৎস: কবিতা ‘কাবার পানে’

“হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান, তুমি মোরে দিয়েছ খ্রিস্টের সম্মান।”— উৎস: কবিতা ‘দারিদ্র্য’

“তোমার মমতা-মানিক আলোকে চিনিনু… মাতা তুমি লাঞ্ছিতা বিশ্ব-জননী…”— উৎস: কবিতা ‘নারী’

“বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।”— উৎস: কবিতা ‘নারী’

১০০+ হুমায়ূন আহমেদ এর উক্তি – ভালোবাসা, জীবন ও কষ্টের কথা

প্রকৃতি নিয়ে কাজী নজরুল ইসলাম এর উক্তি

“হয়তো তোমার পাব দেখা, যেখানে ঐ নত আকাশ চুমছে বনের সবুজ রেখা।”— এখানে নজরুল প্রকৃতির স্নিগ্ধ সৌন্দর্য ও আকাশ-প্রকৃতির মিলনকে রোমান্টিক ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন।

“শাস্ত্র না ঘেটে ডুব দাও সখা সত্য সিন্ধু জলে।”— এই উক্তিতে প্রকৃতিকে জ্ঞানের প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে; সরাসরি অভিজ্ঞতা লাভের আহ্বান জানানো হয়েছে।

“খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে বিরাট শিশু আনমনে। প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা নিরজনে প্রভু নিরজনে।”— প্রকৃতির সৃষ্টি ও ধ্বংসকে কবি শিশুর খেলার সাথে তুলনা করে গভীর দার্শনিক অর্থ প্রকাশ করেছেন।

“মোর ফুলবনে ছিল যত ফুল ভরি ডালি…”— এখানে ফুলের মাধ্যমে সৌন্দর্য ও সতেজতার প্রতীকী রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন, যা প্রকৃতির প্রতি তাঁর ভালোবাসা প্রকাশ করে।

“যত ফুল ততো ভুল কণ্টক জাগে। মাটির পৃথিবী তাই এতো ভালো লাগে।”— কবি প্রকৃতির বৈপরীত্য ও বাস্তবতাকে স্বীকার করেছেন; সৌন্দর্যের সাথে কষ্টও আসে, তবুও পৃথিবীকে ভালো লাগে।

“বসন্ত এলো এলো এলো রে পঞ্চম স্বরে কোকিল কুহরে মুহু মুহু…”— বসন্তের আগমনী সুর ও কোকিলের ডাকের মাধ্যমে প্রকৃতির উল্লাসমুখর রূপ তুলে ধরা হয়েছে।

“বসন্ত মুখর আজি দক্ষিণ সমীরণে মর্মর গুঞ্জনে বনে…”— দক্ষিণ সমীরণ ও বনের মর্মর ধ্বনি বসন্তের আবহকে জীবন্ত করে তুলেছে এই চরণে।

“নুড়ি হাজার বছর ঝরণায় ডুবে থেকেও রস পায় না।”— প্রকৃতির সাথে সম্পর্কের জন্য শুধু উপস্থিতি যথেষ্ট নয়; সত্যিকারের সৌন্দর্য উপলব্ধির জন্য মন খোলা থাকা জরুরি—এটাই এই উক্তির মর্ম।

“শিউলি ফুল ঝরে পড়ে শিশির ভেজা প্রভাতে, যেন প্রকৃতির স্নিগ্ধতম চুম্বন।”— এখানে শিউলি ফুলের পতনকে কবি এক রোমান্টিক প্রাকৃতিক চিত্র হিসেবে এঁকেছেন।

“বর্ষার ভরা নদী যেমন উচ্ছ্বসিত, তেমনি মনও ভরে ওঠে প্রকৃতির সৌন্দর্যে।”— বর্ষার নদীকে আবেগের সাথে তুলনা করে প্রকৃতির প্রভাব মানুষের মনে কেমন উচ্ছ্বাস আনে তা ফুটিয়ে তুলেছেন।

উপসংহার

কাজী নজরুল ইসলামের রচনাবলি ও উক্তি শুধু বাংলা সাহিত্যেই নয়, বিশ্ব সাহিত্যের ভাণ্ডারেও সমান মূল্যবান। তাঁর প্রতিটি কথা স্বাধীনতা, ন্যায়, প্রেম এবং মানবতার বার্তা বহন করে। যে কোনো যুগে, যে কোনো প্রজন্মের মানুষ তাঁর লেখায় খুঁজে পায় সাহস, শক্তি এবং জীবনের প্রকৃত অর্থ।

আমরা আশা করি এই টি ৩৫উক্তি ও তাদের উৎস আপনার মনকে প্রেরণা দেবে এবং চিন্তার পরিধি আরও প্রসারিত করবে। জীবনের প্রতিটি ধাপে এই উক্তিগুলো আপনাকে স্মরণ করিয়ে দেবে—সত্য, ন্যায় ও মানবতা সর্বদা বিজয়ী হয়

আপনি যদি নজরুল ইসলামের কবিতা, গান বা প্রবন্ধ সম্পর্কে আরও জানতে চান, তবে তাঁর রচনাবলী পড়ুন এবং জীবনে অনুপ্রেরণা হিসেবে গ্রহণ করুন। বিদ্রোহী কবির এই কালজয়ী বাণী আমাদের চিরকাল পথ দেখাবে।

Ayan

আয়ান, বাংলা ভাষার প্রেমে পড়া একজন সৃজনশীল লেখক, যিনি মনোমুগ্ধকর ক্যাপশন, স্ট্যাটাস ও উক্তি লিখে পাঠকদের মন জয় করেন। শব্দের মাধ্যমে আবেগ প্রকাশ করাই তাঁর অন্যতম নেশা। ভালোবাসা, অনুপ্রেরণা, বন্ধুত্ব, হাসি-মজা—সব ধরনের ক্যাপশন লেখার ক্ষেত্রে তাঁর দক্ষতা অসাধারণ। পছন্দের বিষয়: ক্যাপশন রচনা, সাহিত্য, উক্তি ও জীবন দর্শন।

Leave a Comment