অভিশাপ থেকে বাঁচার দোয়া

অভিশাপ বা বদদোয়া এক প্রকার মানসিক ও আধ্যাত্মিক আঘাত, যা কারো কষ্ট, অন্যায় বা গোপন বিদ্বেষ থেকে উৎসারিত হয়ে মুমিনকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কেউ যদি অন্যায়ভাবে অভিশপ্ত বা বদদোয়ার শিকার হয়, তবে ইসলামic দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী সে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে পারে। নিচে কুরআন ও হাদীসের আলোকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও দিকনির্দেশনা দেওয়া হলো।


১. বদদোয়া বা অভিশাপ থেকে বাঁচার জন্য কুরআনের আয়াত

সূরা আল-মুমিনুন (২৩:৯৭-৯৮)

وَقُلْ رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ، وَأَعُوذُ بِكَ رَبِّ أَنْ يَحْضُرُونِ

উচ্চারণ:
ওয়া কুল রাব্বি আউযু বিকা মিন হামাযাতিশ শাইয়াতীন, ওয়া আউযু বিকা রাব্বি আন ইয়াহদুরূন

অর্থ:
বলুন, হে আমার রব! আমি আপনার নিকট আশ্রয় চাই শয়তানদের কুমন্ত্রণা থেকে। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই যাতে তারা আমার কাছে না আসে।

সূত্র: সূরা আল-মুমিনুন – আয়াত ৯৭-৯৮

এই আয়াত দুটি অভিশাপ, জিনের কুমন্ত্রণা বা মানুষের অপকারমূলক বদদোয়া থেকে বাঁচতে সহায়ক।


২. যেকোনো ক্ষতি বা অভিশাপ থেকে রক্ষার দোয়া

হাদীসভিত্তিক দোয়া:

بِسْمِ اللهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ

উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়াদুররু মা’আ স্মিহি শাইউন ফিল আরদি ওলা ফিস সামা, ও হুয়াস সামিয়ুল আলিম

অর্থ:
আল্লাহর নামে শুরু করছি, যার নামে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না, না জমিনে, না আকাশে। আর তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।

সূত্র: আবু দাউদ – হাদীস: ৫০৮৮, তিরমিযি – হাদীস: ৩৩৮৮

রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এই দোয়া সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার পড়বে, কোনো ক্ষতি তার কাছে আসবে না।”


৩. অপদ্রব্য, অভিশাপ ও হিংসা থেকে বাঁচার জন্য তিনটি সূরা

সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস

রাসূল (সা.) প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে এই তিনটি সূরা পড়ে নিজ দেহে ফুঁ দিতেন।
এগুলো কালো জাদু, হিংসা, বদদোয়া ও শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করে।

সূত্র: সহিহ বুখারি – হাদীস: ৫০১৭


৪. প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এই দোয়া

حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ، وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ

উচ্চারণ:
হাসবিয়াল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুয়া, আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আযীম

অর্থ:
আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। আমি তাঁরই উপর ভরসা করি। তিনি মহা আরশের অধিপতি।

সূত্র: সূরা তাওবা – আয়াত ১২৯


করণীয়

১. অত্যধিক দোয়া ও যিকির করা
বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যার মাসনূন যিকিরগুলো পড়লে অভিশাপ, জাদু ও দুষ্ট লোকদের প্রভাব থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

২. অত্যাচারিত হলে আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করা
যদি কেউ অন্যায়ভাবে অভিশাপ দেয়, তাহলে জুলুমের শিকার ব্যক্তির দোয়া ফেরানো হয় না।

৩. ক্ষমা, ধৈর্য ও উত্তম আচরণ
কুরআনে বলা হয়েছে, “ভালোর দ্বারা মন্দকে প্রতিহত করো।” (সূরা ফুসসিলাত – আয়াত ৩৪)


খারাপ মানুষ থেকে বাঁচার দোয়া

উপসংহার

ইসলামে বদদোয়া বা অভিশাপের ব্যাপারে সতর্কতা আছে, এবং অন্যায়ভাবে কারো অভিশাপ গ্রহণযোগ্য নয়। একজন মুমিন সব সময় আল্লাহর স্মরণে থাকে, দোয়া ও কুরআনের আয়াত দ্বারা নিজেকে সুরক্ষিত রাখে। উপরোক্ত দোয়া ও আয়াত নিয়মিত পাঠ করলে, ইনশাআল্লাহ, আল্লাহ অভিশাপ ও ক্ষতি থেকে হেফাজত করবেন।

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুরআন-হাদীসভিত্তিক দোয়া, আমল ও ইসলামিক জীবনদর্শন নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সান্নিধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ সূত্রভিত্তিক দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা প্রতিটি দোয়া দলিলসমৃদ্ধ, বাস্তবভিত্তিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপিত, যেন পাঠক সহজেই আমলে নিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন – “প্রত্যেক হৃদয়ের একমাত্র পরিপূর্ণ প্রশান্তি হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে”। তাই তাঁর প্রতিটি লেখা এই লক্ষ্যে নিবেদিত যে, পাঠক যেন দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকৃত হন। লেখার বিষয়: ইসলামিক দোয়া, আমল, ফজিলত, কুরআনিক আয়াতভিত্তিক দোয়া, হাদীস থেকে সংগৃহীত দোয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া।

Leave a Comment