প্রত্যেকের জীবনে এমন কেউ থাকে, যাকে মনে হলেই চোখে জল চলে আসে, হৃদয়টা ভারী হয়ে ওঠে। ভালোবাসার মানুষকে মিস করার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। আজ আমি এমনই এক গল্প বলব একটা গল্প, যেখানে দূরত্ব শুধু মাইলেই নয়, হৃদয়ের গভীরেও দাগ কেটে যায়।
এখানে আপনি পাবেন:
শুরুটা ছিলো অন্যরকম
সে ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে সুন্দর সকাল। তার হাসি, কথার ভঙ্গি, এমনকি নিশ্বাসের গন্ধটাও মনে গেঁথে ছিলো। আমরা একসাথে সময় কাটাতাম, ছোট ছোট মুহূর্তগুলোকে বিশাল করে তুলতাম। কিন্তু জীবনের নিয়মে একদিন দূরত্ব চলে এলো—কাজের প্রয়োজনে তাকে চলে যেতে হলো অন্য শহরে।
প্রথম দিনগুলোতে মনে হচ্ছিল, কিছুই বদলায়নি। ফোনে কথা, ভিডিও কল, মেসেজ—এগুলো দিয়েই সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখবো। কিন্তু দিন যত গড়ালো, ততই বুঝতে পারলাম, শারীরিক উপস্থিতির অভাবটা কত বড়।
যখন মিস করা অসহ্য হয়ে ওঠে
রাতের নীরবতা সবচেয়ে কষ্ট দিত। বিছানায় একা শুয়ে তার কথা ভাবতাম। তার পাশে থাকার অনুভূতি, হাত ধরে হাঁটার স্মৃতি—সবই যেন স্বপ্ন হয়ে গিয়েছিল। কখনো কখনো ফোনে তার কণ্ঠ শুনেও চোখে জল চলে আসত। মনে হতো, শুধু একবার তাকে জড়িয়ে ধরতে পারলেই সব কষ্ট মিটে যেত।
মিস করার এই যন্ত্রণা শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই নয়, স্বামী-স্ত্রী, বাবা-মা, সন্তান বা বন্ধুরাও অনুভব করে। দূরত্ব যখন ভালোবাসার মানুষকে ছিনিয়ে নেয়, তখন প্রতিটি মুহূর্ত যেন একাকীত্বের গল্প বলে।
গল্প ১: রিয়া ও আরিয়ানের দূরত্বের ভালোবাসা
রিয়া এবং আরিয়ানের প্রেমের গল্প শুরু হয়েছিল কলেজের গণ্ডিতে। রিয়ার উজ্জ্বল হাসি আর আরিয়ানের গিটারের সুর তাদের কাছাকাছি এনেছিল। প্রতি সন্ধ্যায় তারা ক্যাম্পাসের পুরনো বটগাছের নিচে বসে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখত। কিন্তু জীবনের এক অপ্রত্যাশিত মোড়ে আরিয়ানকে চাকরির জন্য বিদেশে যেতে হয়।
দূরত্ব তাদের শারীরিকভাবে আলাদা করলেও তাদের হৃদয়ের বন্ধন অটুট রইল। রিয়া প্রতি রাতে আরিয়ানের পাঠানো চিঠিগুলো পড়ে। আরিয়ানের প্রিয় নীল রঙের কফির মগটা দেখলেই তার চোখে জল চলে আসে। আরিয়ানও বিদেশের মাটিতে বসে রিয়ার সেই হাসির কথা ভাবে, যা তাকে সবসময় শান্তি দিত। প্রতি ভিডিও কলে তারা একে অপরকে বলে, “আমরা আবার একসঙ্গে হব, এই দূরত্ব শুধুই অস্থায়ী।”
এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভালোবাসা দূরত্বের বাধা মানে না। রিয়া ও আরিয়ানের মতো অনেকেই তাদের ভালোবাসার মানুষকে মিস করে, তবু প্রতিশ্রুতি আর আশায় বেঁচে থাকে।
গল্প ২: মেঘলা ও রাহাতের অপেক্ষার কাহিনী
মেঘলা একজন স্কুল শিক্ষিকা, আর রাহাত একজন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা। তাদের বিয়ের পর মাত্র কয়েক মাস একসঙ্গে কাটানোর সুযোগ হয়েছিল। রাহাতের কাজের জন্য তাকে সমুদ্রে দীর্ঘ সময় কাটাতে হয়। মেঘলা বাড়িতে বসে রাহাতের ফিরে আসার অপেক্ষায় দিন গোনে।
প্রতি সন্ধ্যায় মেঘলা রাহাতের পাঠানো একটি শুকনো গোলাপের পাপড়ি হাতে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়ায়। এই গোলাপটি রাহাত তাকে তাদের প্রথম দেখার দিন উপহার দিয়েছিল। রাহাতও সমুদ্রের মাঝে তার জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে মেঘলার পাঠানো ছবি দেখে। তারা ফোনে কথা বলার সময় পায় না প্রায়ই, কিন্তু প্রতিটি চিঠি, প্রতিটি বার্তায় তারা একে অপরকে মনে করিয়ে দেয় যে তাদের ভালোবাসা অটুট।
মেঘলা বলে, “রাহাতকে মিস করা আমার জীবনের একটি অংশ হয়ে গেছে। কিন্তু এই মিস করার মধ্যেই আমি আমাদের ভালোবাসার শক্তি খুঁজে পাই।” এই গল্প আমাদের শেখায় যে অপেক্ষা কঠিন হলেও ভালোবাসা তাকে সহজ করে দেয়।
গল্প ৩: তানিয়া ও সৌরভের চিরস্থায়ী স্মৃতি
তানিয়া ও সৌরভের গল্প একটু ভিন্ন। তাদের ভালোবাসা ছিল গভীর, কিন্তু ভাগ্য তাদের চিরতরে আলাদা করে দেয়। সৌরভ একটি দুর্ঘটনায় চলে যায়, তানিয়াকে একা ফেলে। তানিয়ার জন্য সৌরভকে মিস করা এখন তার জীবনের একটি অংশ।
তানিয়া প্রতিদিন সৌরভের পুরনো ডায়েরিটা খুলে পড়ে, যেখানে সৌরভ তাদের একসঙ্গে কাটানো মুহূর্তগুলো লিখে রেখেছিল। সৌরভের প্রিয় গান শুনলে তানিয়ার মনে পড়ে তাদের একসঙ্গে হেঁটে বেড়ানো সন্ধ্যাগুলো। তানিয়া বলে, “সৌরভ চলে গেছে, কিন্তু তার ভালোবাসা আমার মধ্যে বেঁচে আছে। তাকে মিস করা আমাকে তার স্মৃতির কাছাকাছি রাখে।”
এই গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, এমনকি যখন প্রিয় মানুষ আমাদের কাছে শারীরিকভাবে থাকে না। তানিয়ার মতো অনেকেই তাদের প্রিয়জনের স্মৃতিকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে।
গল্প ৪: প্রথমবারের মতো দূরে যাওয়া
রিদয়ের সঙ্গে কলেজ লাইফ থেকে প্রেম। দিনগুলো কাটে গল্পে, হাসিতে, ক্যাম্পাসের মাঠে ঘুরে বেড়ানোতে। তারপর চাকরির জন্য দিল্লি চলে গেল সে। প্রথম দিনই মনে হলো, শহরটা যেন হঠাৎ নিঃশব্দ হয়ে গেছে।
ফোনে বললাম, “কেমন লাগছে?”
সে হেসে উত্তর দিল, “ভালো… শুধু তোমার জন্য মন কেমন করে।”
রাতের বেলায় তার পুরানো হুডিটা গায়ে জড়িয়ে নিই। গন্ধটা এখনও তার মতো। চোখ বুজলেই মনে হয়, সে পাশেই আছে।
গল্প ৫: বিয়ের পর দূরে থাকার কষ্ট
শামীম আর রিতু বিয়ের মাত্র ছয় মাস পরই সুইডেন চলে যায় কাজের সূত্রে। রিতু বলত, “ফোনে দেখলেও জড়িয়ে ধরতে পারি না—এটাই সবচেয়ে কঠিন।”
একদিন রাত তিনটায় ফোন বেজে উঠল। শামীমের জ্বর, একা একা অসুস্থ শরীরে কেউ নেই দেখাশোনা করার। রিতুর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। “ওই মুহূর্তে শুধু একটিবার পাশে থাকতে ইচ্ছা করেছিলাম,”—বলার সময় এখনও তার গলায় কাঁপুনি।
গল্প ৬: মায়ের জন্য ছেলের মিস করা
নয় বছর বয়সে আবরার হোস্টেলে ভর্তি হলো। প্রথম রাতে মা ফোন করে কেঁদে ফেললেন। আবরার বলল, “মা, আমি ঠিক আছি।” কিন্তু বিছানায় শুয়ে মায়ের হাতের রান্নার গন্ধ মনে করে সে চুপিচুপি কেঁদেছে।
মাসখানেক পর মা তাকে সুরপ্রাইজ দিতে হোস্টেলে এলেন। আবরার দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ল। “মা, তোমার হাতের খাবার মিস করছিলাম,”—বলতে বলতে তার চোখে আবার জল।
গল্প ৭: বন্ধুকে হারানোর বেদনা
আদিত্য আর রাহুল স্কুলজীবন থেকে বেস্টফ্রেন্ড। কলেজে ভিন্ন শহরে চলে যাওয়ার পর আদিত্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হলো। রাহুল প্রতিদিন ফোন করত, “ভাই, তুই ঠিক হয়ে যাবি।”
একদিন ফোন এলো—আদিত্য চলে গেছে। রাহুলের কথাই, “সবচেয়ে কঠিন হলো ফোনটা আর কখনো বেজে উঠবে না জেনেও প্রতিদিন তার নাম্বারে মিসড কল দেওয়া।”
গল্প ৮: দূরদেশে প্রিয়তমার জন্য আকুলতা
মালদ্বীপে কাজ করে সাকিব। স্ত্রী সুমাইয়া বাংলাদেশে। রাতের শিফট শেষে সে সুমাইয়ার ছবি দেখে দেখে কাটায়। একবার ছুটিতে এসে সুমাইয়া বলেছিল, “তোমার জন্য এত কষ্ট করি, কিন্তু ফিরে এলে সব ভুলে যাই।”
সাকিবের ডায়েরিতে লেখা—”প্রতিদিন সাগর দেখি, কিন্তু তোমার চোখের নীলে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে।”
শেষ কথা: মিস করাই ভালোবাসার প্রমাণ
ভালোবাসার মানুষকে মিস করা মানেই হলো, সে আপনার হৃদয়ে গভীরভাবে জায়গা করে নিয়েছে। এই বেদনা যতই কষ্টদায়ক হোক, এটাই প্রমাণ করে যে আপনার ভালোবাসা সত্যি। দূরত্ব হয়তো আপনাকে আলাদা রাখে, কিন্তু হৃদয় কখনোই দূরে থাকে না।
আপনিও কি কাউকে খুব মিস করেন? নিচে কমেন্টে আপনার গল্পটি শেয়ার করুন। 💖

