১৬ ডিসেম্বর—বাঙালির ইতিহাসে এক অনন্য মহাকাব্যিক দিন। গৌরব, আনন্দ, আর ত্যাগের আবেগ একসাথে মিশে আছে এই দিনের প্রতিটি মুহূর্তে। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ, অগণিত শহীদের আত্মদান এবং মা-বোনের অপরিসীম কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা ও লাল-সবুজের পতাকা। তাই বিজয় দিবস আসলেই আমাদের হৃদয়ে ফিরে আসে কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা এবং নিজেদের আরও ভালো বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার।
বিজয় দিবসের মর্মবাণী সবার জন্য এক হলেও মানুষের অবস্থান, আদর্শ ও দায়বদ্ধতার ভিন্নতায় বক্তব্যের ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গিতে আসে নানা রূপ। স্কুলের মঞ্চ, কলেজের অনুষ্ঠান, অফিসের সভা কিংবা রাজনৈতিক সমাবেশ—প্রতিটি জায়গায় প্রয়োজন হয় সময়োপযোগী, সংক্ষিপ্ত অথচ হৃদয়ছোঁয়া বক্তব্য। সেই প্রয়োজনকে মাথায় রেখেই এখানে সর্বসাধারণ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক চেতনার আলোকে সাজানো হয়েছে বিজয় দিবসের কয়েকটি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য, যাতে যে কেউ নিজের প্রেক্ষাপট ও শ্রোতা অনুযায়ী উপযুক্ত বক্তব্য বেছে নিতে পারেন।
এখানে আপনি পাবেন:
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস বক্তব্য
প্রিয় শিক্ষকবৃন্দ/অতিথিবৃন্দ, সম্মানিত অভিভাবক, আমার প্রিয় সহপাঠী/বন্ধুগণ, এবং উপস্থিত সকল শ্রোতা—
আসসালামু আলাইকুম/সুপ্রভাত।
আজ আমরা দাঁড়িয়ে আছি বাঙালি জাতির ইতিহাসের সবচেয়ে গৌরবময় ও আবেগঘন দিন—১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে। এই দিন বাংলাদেশের মানচিত্র রক্তে লেখা এক দীপ্তিমান সত্যের নাম, আত্মত্যাগে ভেজা এক মহান উপলব্ধির নাম, মুক্তির সুবাসে ভরা এক চূড়ান্ত অর্জনের নাম। আজকের এই দিনে আমরা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি সেই কোটি মানুষের স্বপ্নকে, যাদের অশ্রু, কান্না, লড়াই ও জীবনদানের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
বিজয় দিবস কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
বিজয় দিবস শুধু একটি তারিখ নয়—এটি আমাদের জাতীয় সত্তার পুনর্জন্মের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছিল। ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে জন্ম নিয়েছিল নতুন এক রাষ্ট্র—বাংলাদেশ। এই বিজয় ছিল শুধু সামরিক জয় নয়; এটি ছিল অন্যায়ের ওপর ন্যায়ের, শোষণের ওপর মুক্তির, অন্ধকারের ওপর আলোর বিজয়।
মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি ও সংগ্রাম
আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন একদিনে জন্ম নেয়নি। ১৯৪৭ সালের দেশভাগের পর থেকে বাঙালির ভাষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি ও রাজনৈতিক অধিকার বারবার পদদলিত হয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান, ৭০’র নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয়—সবই ছিল স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে যাওয়া পদক্ষেপ। এরপর ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে ঐতিহাসিক আহ্বান জানিয়েছিলেন—
“এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”—
এই আহ্বানই পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার সাহস দিয়েছিল।
২৫শে মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনীর ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নৃশংস হামলা শুরু হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ, পিলখানা—সহ নানা স্থানে নির্বিচারে হত্যা চালানো হয়। সেই রাত ছিল বাঙালির জীবনের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর রাত। কিন্তু সেই অন্ধকার রাতের বুকে জ্বলে উঠেছিল প্রতিরোধের আগুন। ছাত্র, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, চিকিৎসক, নারী-পুরুষ—সবাই একসাথে দাঁড়িয়েছিল স্বাধীনতার পক্ষে।
শহীদদের রক্ত ও নারীদের ত্যাগ
এই বিজয় এসেছে ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে। এসেছে দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর আর্তনাদ পেরিয়ে। এসেছে এক কোটির বেশি মানুষের শরণার্থী জীবনের কষ্ট সয়ে। যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন, যারা তথ্য দিয়ে, চিকিৎসা দিয়ে, খাবার দিয়ে, আশ্রয় দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তা করেছেন—সবার সম্মিলিত ত্যাগেই আমাদের এই স্বাধীনতা।
সেইসব শহীদদের নাম হয়তো আমরা সবাই জানি না, কিন্তু তাদের আত্মত্যাগই আমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাসের ভিত্তি। শহীদদের প্রতি আমাদের দায় শুধু শোক প্রকাশে সীমাবদ্ধ নয়—তাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার মাধ্যমে আমরা প্রকৃত শ্রদ্ধা জানাতে পারি।
বিজয়ের অর্থ ও দায়িত্ব
প্রিয় উপস্থিতজন, বিজয় মানে কেবল পতাকা উড়ানো বা র্যালি করা নয়। বিজয় মানে নিজের দেশের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা। স্বাধীনতা মানে শুধু কথা বলার অধিকার নয়; এটি হলো সত্য বলার সাহস, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর শক্তি, এবং মানুষের পাশে থাকার মানসিকতা।
আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্য, অশিক্ষা, দুর্নীতি, সাম্প্রদায়িকতা, মাদক, বেকারত্ব—এমন অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের শিখিয়েছে ঐক্যবদ্ধ হলে অসম্ভবকেও সম্ভব করা যায়। তাই আমাদের দায়িত্ব হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জীবন্ত রাখা এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করা।
নতুন প্রজন্মের কাছে আহ্বান
আমরা যারা নতুন প্রজন্ম, আমাদের কাঁধেই ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের দায়িত্ব। আমরা যদি ইতিহাস না জানি, তবে স্বাধীনতার মূল্য বুঝতে পারব না। ইতিহাস জানা মানে অতীতে আটকে থাকা নয়; ইতিহাস জানা মানে ভবিষ্যৎকে সঠিক পথে এগোনোর শক্তি অর্জন করা।
আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত—
- সৎ ও মানবিক মানুষ হওয়া
- শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে দক্ষ হয়ে উঠা
- ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণি নির্বিশেষে সকলের প্রতি সম্মান দেখানো
- দেশের আইন মেনে চলা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা
- দেশকে ভালোবাসা—শুধু আবেগে নয়, কাজে
বাংলাদেশকে আমরা এমন একটি দেশে পরিণত করতে চাই যেখানে ন্যায়, মানবতা, উন্নয়ন ও শান্তি থাকবে; যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না; যেখানে সবাই নিরাপদ ও সম্মানিত জীবন পাবে। এটাই ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্ন—এটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
শেষকথা
আজকের এই মহান দিনে আমরা আবারও শ্রদ্ধা জানাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, তাঁর নেতৃত্বকে; শ্রদ্ধা জানাই চার জাতীয় নেতাকে; শ্রদ্ধা জানাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের; এবং গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সকল শহীদ ও নির্যাতিত মা-বোনদের।
আসুন আমরা শপথ করি—
আমরা স্বাধীনতার চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করব, দেশকে ভালোবাসব, দেশের জন্য কাজ করব, এবং এমন বাংলাদেশ গড়ব যেখানে মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
সবাইকে বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা।
স্কুল/কলেজের জন্য ছোট বক্তব্য
প্রিয় সম্মানিত প্রধান শিক্ষক/অধ্যক্ষ মহোদয়, সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, প্রিয় সহপাঠী ও উপস্থিত সবাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজ ১৬ ডিসেম্বর—বিজয় দিবস। এই দিনটি আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবময় ও আনন্দের দিন।
১৯৭১ সালের দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর আজকের এই দিনে আমরা পেয়েছিলাম কাঙ্ক্ষিত বিজয়। লাখো শহীদের আত্মত্যাগ, অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধার সাহসিকতা এবং সাধারণ মানুষের সীমাহীন ত্যাগের বিনিময়ে জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। তাই বিজয়ের আনন্দের পাশাপাশি আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সেই সব শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাকে, যাদের কারণে আমরা আজ স্বাধীন দেশের নাগরিক।
বিজয় দিবস আমাদের শেখায়—অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে এবং দেশকে ভালোবেসে কাজ করতে। আমরা নতুন প্রজন্ম—আমাদের দায়িত্ব দেশকে আরও সুন্দর, মানবিক ও উন্নত করে গড়ে তোলা। পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়া, শৃঙ্খলাবোধ তৈরি করা, সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে এগিয়ে যাওয়াই হবে শহীদদের প্রতি আমাদের প্রকৃত শ্রদ্ধা।
চলুন, বিজয় দিবসে আমরা শপথ করি—মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে সৎ মানুষ হবো, দেশের কল্যাণে কাজ করবো, এবং বাংলাদেশের মান-সম্মান সর্বদা উঁচুতে রাখবো।
সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
অফিস/কমিউনিটি অনুষ্ঠানের জন্য বক্তব্য
সম্মানিত সভাপতি/সঞ্চালক মহোদয়, প্রিয় সহকর্মীবৃন্দ, সম্মানিত অতিথি ও উপস্থিত সবাইকে বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আজ ১৬ ডিসেম্বর—মহান বিজয় দিবস। বাংলাদেশ জাতির জীবনে এটি এক অমলিন গৌরব, আত্মমর্যাদা ও অর্জনের দিন।
১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা পেয়েছিলাম চূড়ান্ত বিজয়। লাখো শহীদের রক্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসিকতা, আর এ দেশের সাধারণ মানুষের ত্যাগের বিনিময়ে জন্ম নিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ। আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সেই সকল শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা, মা-বোন ও নির্যাতিত মানুষের অশেষ ত্যাগকে—যাঁদের কারণে আমরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারি।
বিজয় দিবস শুধু একটি ঐতিহাসিক দিন নয়; এটি আমাদের মূল্যবোধের কেন্দ্রবিন্দু। এই দিন আমাদের মনে করিয়ে দেয়—স্বাধীনতা মানে দায়িত্ব, দেশপ্রেম মানে শুধু অনুভূতি নয়, কাজেও তার প্রমাণ রাখতে হয়। কর্মক্ষেত্র, সমাজ বা কমিউনিটি—সব জায়গাতেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের সুযোগ আছে। সততা, শৃঙ্খলা, ন্যায়বোধ, মানবিকতা এবং দেশকে ভালোবেসে নিজের কাজকে সর্বোচ্চ মানে নিয়ে যাওয়াই হবে বিজয়ের প্রকৃত সম্মান।
আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগোচ্ছে। এই অগ্রযাত্রায় আমাদের প্রত্যেকের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। কর্মক্ষেত্রে নিষ্ঠা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখা, সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন করা, অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া এবং পরস্পরের প্রতি সম্মান ও সহযোগিতার মনোভাব গড়ে তোলাই একটি শক্তিশালী, সুন্দর ও আত্মমর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশ নির্মাণের পথ।
চলুন, এই মহান দিনে আমরা শপথ করি—
আমরা আমাদের কাজ ও আচরণে দেশপ্রেমের পরিচয় দেব,
মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে ধারণ করব,
এবং ব্যক্তিগত ও সামষ্টিক উদ্যোগে বাংলাদেশকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে সকলে একসাথে কাজ করব।
সবাইকে আবারও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
বিজয় দিবস ছোট বক্তব্য: ছাত্রছাত্রীদের জন্য
সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, প্রিয় সহপাঠী ও বন্ধুগণ—আপনাদের সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
আজ ১৬ ডিসেম্বর, আমাদের গৌরবের বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের পর বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়েছিল। লাখো শহীদের আত্মত্যাগ আর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসে আমরা পেয়েছি স্বাধীন লাল-সবুজের দেশ। তাই আজকের এই আনন্দের দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি শহীদদের এবং কৃতজ্ঞতা জানাই মুক্তিযোদ্ধাদের।
বিজয় দিবস আমাদের শেখায়—দেশকে ভালোবাসতে, সত্য ও ন্যায়ের পথে চলতে, আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাহস নিয়ে দাঁড়াতে। আমরা যারা ছাত্রছাত্রী, আমাদের সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো ভালো মানুষ হওয়া, মন দিয়ে পড়াশোনা করা, শৃঙ্খলা ও সততা ধরে রাখা এবং দেশের উন্নয়নে নিজেকে তৈরি করা। কারণ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ আমাদের হাতেই গড়বে।
চলুন, আজ আমরা শপথ করি—মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে হৃদয়ে ধারণ করে আমরা সৎ, দেশপ্রেমিক ও মানবিক নাগরিক হব, এবং বাংলাদেশের সুখ-সমৃদ্ধির জন্য কাজ করব।
সবাইকে বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
প্রাথমিক/মাধ্যমিক পর্যায়ের জন্য বিজয় দিবস বক্তব্য
সম্মানিত প্রধান শিক্ষক/শিক্ষকবৃন্দ, প্রিয় বন্ধুরা এবং উপস্থিত সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
আজ ১৬ ডিসেম্বর—আমাদের বিজয় দিবস। এই দিনটি আমাদের দেশের জন্য খুবই গর্বের দিন। ১৯৭১ সালে নয় মাস যুদ্ধের পর আজকের এই দিনে বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করেছিল। অনেক মানুষ, অনেক মুক্তিযোদ্ধা আমাদের দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন। তাঁদের ত্যাগের কারণেই আমরা আজ স্বাধীন দেশে বাস করছি, নিজের ভাষায় কথা বলছি, লাল-সবুজ পতাকা নিয়ে গর্ব করতে পারছি।
বিজয় দিবস আমাদের শেখায়—দেশকে ভালোবাসতে, সাহসী হতে, সত্য কথা বলতে এবং সবাইকে সম্মান করতে। আমরা যারা ছোট, আমাদের কাজ হলো মন দিয়ে পড়াশোনা করা, ভাল মানুষ হওয়া, শৃঙ্খলা মানা এবং ভবিষ্যতে দেশের উপকার করা। আমরা যদি সৎ, পরিশ্রমী ও দেশপ্রেমিক হই, তাহলে শহীদদের ত্যাগ সার্থক হবে।
চলুন, আজ আমরা শপথ করি—
আমরা দেশকে ভালোবাসব,
ভালভাবে পড়াশোনা করব,
সৎ ও সহায়ক মানুষ হব,
এবং বাংলাদেশকে আরও সুন্দর করে গড়ব।
সবাইকে আবারও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা।
বিজয় দিবসের বক্তব্য আওয়ামী লীগ-এর জন্য
ম্মানিত সভাপতি, প্রিয় সহযোদ্ধা ও দলীয় নেতৃবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধা ভাই-বোনেরা, তরুণ প্রজন্ম, এবং উপস্থিত সকলকে মহান বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আজ ১৬ ডিসেম্বর—আমাদের জাতীয় জীবনের সবচেয়ে গৌরবোজ্জ্বল দিন, মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনেই বাঙালি জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত করেছিল, এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বিশ্বের মানচিত্রে স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই বিজয় কোনো এক দিনের ঘটনা নয়—এটি দীর্ঘ লড়াই, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের ফল। স্বাধীনতার সংগ্রামে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ছিল জাতির নেতৃত্বদানকারী শক্তি, যে দল বাঙালির অধিকার, ভাষা ও স্বাধিকার আন্দোলনকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে নিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের রাজনৈতিক নেতৃত্ব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ডাক, এবং “জয় বাংলা” স্লোগানের অনুপ্রেরণায় বাঙালি জাতি অস্ত্র হাতে নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। “জয় বাংলা” ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণার প্রতীক এবং আওয়ামী লীগের ঐতিহাসিক স্লোগান, যা যুদ্ধকালীন সময়ে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল।
প্রিয় উপস্থিতি,
আজকের এই বিজয়ের দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি ৩০ লক্ষ শহীদকে, দুই লক্ষ নির্যাতিত মা-বোনকে, এবং সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের—যাঁরা জীবন বাজি রেখে লাল-সবুজ পতাকাকে মুক্ত আকাশে তুলে ধরেছেন। তাঁদের ত্যাগের বিনিময়েই আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা, পেয়েছি একটি নিজস্ব জাতীয় পতাকা, নিজস্ব পরিচয়, এবং নিজেদের ভাষায় কথা বলার অধিকার।
বিজয় দিবস আমাদের শেখায়—স্বাধীনতা শুধু অর্জন নয়, স্বাধীনতা রক্ষারও নাম। আমরা যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী, আওয়ামী লীগের কর্মী ও সমর্থক—আমাদের দায়িত্ব আরও বড়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানে সত্য, ন্যায়, মানবতা, সাম্য এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। এই চেতনা বুকে ধারণ করে আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে চাই—ব্যক্তিগত জীবনে সততা, কর্মক্ষেত্রে নিষ্ঠা, সমাজে মানবিকতা, এবং রাষ্ট্রে উন্নয়নের পথে অবিচল থেকে।
আজকের বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে—মানুষের জীবনমান বদলাচ্ছে, অবকাঠামো গড়ে উঠছে, শিক্ষা-স্বাস্থ্য-প্রযুক্তির নতুন দ্বার খুলছে। এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে হলে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, দেশপ্রেমকে কাজে রূপ দিতে হবে, এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে যেকোনো ধ্বংসাত্মক অপপ্রচারের মোকাবিলায় সচেতন থাকতে হবে।
বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের প্রতি আমার আহ্বান—তোমরা মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানবে, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের কথা পড়বে, দেশের জন্য স্বপ্ন দেখবে এবং সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে দক্ষতা, শিক্ষা ও মানবিকতা দিয়ে নিজেদের তৈরি করবে। কারণ বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার মূল শক্তি তোমরাই।
প্রিয় সহকর্মী ও সহযোদ্ধারা,
আসুন আজকের এই মহান দিনে আমরা শপথ করি—
- আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নিজেদের সর্বোচ্চ দিয়ে কাজ করব।
- আমরা সাম্প্রদায়িকতা, ঘৃণা ও বিভেদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকব।
- আমরা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে রক্ষা করব এবং দেশের অগ্রযাত্রায় অংশ নেব।
সবশেষে, মহান বিজয় দিবসে আবারও জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
শহীদদের প্রতি অশেষ শ্রদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞতা।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক—উন্নত, শান্তিপূর্ণ, মানবিক ও আত্মমর্যাদার বাংলাদেশ।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।
জয় বাংলাদেশ।
বিজয় দিবসের বক্তব্য BNP-এর জন্য
সম্মানিত সভাপতি, প্রিয় দলীয় নেতৃবৃন্দ ও কর্মীসমর্থকগণ, মুক্তিযোদ্ধা ভাই-বোনেরা, তরুণ প্রজন্ম এবং উপস্থিত সকলকে মহান বিজয় দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।
আজ ১৬ ডিসেম্বর—বাংলাদেশের মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি জাতি নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করেছিল এবং স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এই বিজয় আমাদের জাতীয় জীবনে গৌরব, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনতার সর্বোচ্চ প্রতীক।
প্রিয় উপস্থিতি,
এই বিজয়ের পেছনে আছে অপরিসীম ত্যাগের ইতিহাস। লাখো শহীদের রক্ত, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস, এবং এ দেশের সাধারণ মানুষের অদম্য প্রত্যয়ের ফলেই আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। আজকের দিনে আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি শহীদদের, কৃতজ্ঞতা জানাই সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাকে, এবং বিনম্র সম্মান জানাই সেইসব মা-বোনকে যারা যুদ্ধের নির্মমতা সহ্য করেও জাতির বিজয়ের পথ মসৃণ করেছেন।
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল—বিএনপি—মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার সার্বভৌমত্বকে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে রাজনীতি করে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার; যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন—যা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বলে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত।
পরবর্তীতে তিনি বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র, জাতীয় ঐক্য ও রাষ্ট্র গঠনের পথে গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নেন এবং তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তিতেই বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়।
প্রিয় সহযোদ্ধারা,
বিজয় দিবস আমাদের শেখায়—স্বাধীনতা শুধু অর্জন নয়, স্বাধীনতা রক্ষা ও উন্নয়নের দায়িত্বও। স্বাধীনতা মানে মতপ্রকাশের অধিকার, ন্যায়বিচার, মানবিক মর্যাদা এবং গণতন্ত্রের নিশ্চয়তা। সেই লক্ষ্যই ছিল মুক্তিযুদ্ধের অন্তর্নিহিত প্রেরণা। তাই বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার হওয়া উচিত—
- দেশপ্রেমকে কাজে রূপ দেওয়া,
- সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকা,
- স্বৈরাচার, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকা,
- এবং গণতান্ত্রিক চেতনা শক্তিশালী করে একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা।
আজকের বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের সবাইকে—বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে—ইতিহাস জানতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে বিশ্বাস রাখতে হবে, এবং শিক্ষা, দক্ষতা ও সততার মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তুলতে হবে। আমরা এমন বাংলাদেশ চাই যেখানে মানুষের ভোটে সরকার হবে, সকল নাগরিক ন্যায়বিচার পাবে, এবং রাষ্ট্র পরিচালিত হবে জবাবদিহিতা ও মানবিক মূল্যবোধের ভিত্তিতে।
আসুন, এই মহান দিনে আমরা শপথ করি—
আমরা শহীদদের স্বপ্নের বাংলাদেশ রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ থাকব,
গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপসহীন থাকব,
এবং ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনে সততা, শৃঙ্খলা ও দেশপ্রেমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেব।
সবশেষে, মহান বিজয় দিবসে আবারও জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
শহীদদের অমর স্মৃতির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি চিরকৃতজ্ঞতা।
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক—গণতান্ত্রিক, মানবিক, উন্নত ও আত্মমর্যাদাশীল বাংলাদেশ।
উপসংহার
বিজয় দিবস শুধু স্মরণ করার দিন নয়—এটি শপথ নেওয়ার দিন। যে স্বাধীনতা আমরা ত্যাগের বিনিময়ে অর্জন করেছি, তাকে অর্থবহ রাখতে হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, দেশপ্রেম, মানবিকতা, ন্যায়বিচার এবং ঐক্যের মূল্যবোধকে আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে ধারণ করতে হবে। বিজয়ের প্রকৃত সম্মান তখনই পূর্ণ হয়, যখন আমরা একটি বৈষম্যহীন, উন্নত, শান্তিপূর্ণ ও সম্মানজনক বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাজে নিজেদের যুক্ত করি।
এই আর্টিকেলে দেওয়া বক্তব্যগুলো নানা আদর্শ ও পরিসরের হলেও তাদের মূল সুর একটাই—বাংলাদেশের প্রতি ভালোবাসা ও মুক্তিযুদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধা। আশা করি, এখানকার বক্তব্যগুলো আপনার অনুষ্ঠান, ক্লাস, সভা বা সমাবেশে সুন্দরভাবে কাজে লাগবে এবং বিজয়ের দিনটিকে আরও অর্থবহ করে তুলতে সহায়তা করবে।
জয় বাংলা—বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

