এই পোস্টে মৃত্যু নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের বাণী বা উক্তিগুলি দেওয়া হলো, যা ভগবদ্গীতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এগুলো আত্মা, মৃত্যু, পুনর্জন্ম ও জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের মহাজ্ঞান তুলে ধরে।
মৃত্যু নিয়ে শ্রীকৃষ্ণের বাণী (ভগবদ্গীতা থেকে)
১. আত্মা কখনো মরে না
শ্লোক (ভগবদ্গীতা, অধ্যায় ২, শ্লোক ২০):
“ন জায়তে ম্রিয়তে বা কদাচিত্
নায়ং ভূত্বা ভবিতা বা ন ভূয়ঃ।
অজো নিত্যঃ শাশ্বতঃ অয়ং পুরাণঃ
ন হন্যতে হন্যমানে শরীরে॥”
বাংলা অনুবাদ:
আত্মা কখনো জন্ম নেয় না বা কখনো মারা যায় না। এটি কখনো ছিল না বা ভবিষ্যতে হবে এমন নয়। এটি জন্মহীন, চিরন্তন, অবিনাশী ও প্রাচীন। শরীর নষ্ট হলেও আত্মা কখনো ধ্বংস হয় না।
২. দেহ বদলের মতো আত্মা দেহ পরিবর্তন করে
শ্লোক (অধ্যায় ২, শ্লোক ২২):
“যথা জীর্ণানি বস্রাণি বিহায়
নবানি গৃহ্ণাতি নরঃ অপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্
অন্যানি সংযাতি নবানি দেহী॥”
বাংলা অনুবাদ:
যেমন একজন মানুষ পুরনো কাপড় ফেলে দিয়ে নতুন কাপড় পরে, তেমনিভাবে আত্মাও পুরনো দেহ ত্যাগ করে নতুন দেহ গ্রহণ করে।
৩. জন্ম ও মৃত্যু একটি চক্র
শ্লোক (অধ্যায় ২, শ্লোক ১৩):
“দেহিনঃ অস্মিন্যথা দেহে
কৌমারं যৌবনं জরা।
তথা দেহান্তর প্রাপ্তির
ধীরস্তত্র ন মুহ্যতি॥”
বাংলা অনুবাদ:
এই দেহে যেমন শিশুকাল, যৌবন ও বার্ধক্য আসে, তেমনি আত্মা এক দেহ ত্যাগ করে অন্য দেহ ধারণ করে। জ্ঞানীরা এতে বিচলিত হন না।
৪. মৃত্যু ভয় নয়, জ্ঞানহীনতার ফল
শ্লোক (অধ্যায় ২, শ্লোক ১১):
“অশোচ্যান্ অন্বশোচস্ত্বং
প্রজ্ঞাবাদাংশ্চ ভাষসে।
গতাসূন্ অগতাসুঁশ্চ
নানুশোচন্তি পণ্ডিতাঃ॥”
বাংলা অনুবাদ:
তুমি যাদের জন্য শোক করছ, তারা শোকযোগ্য নয়। জ্ঞানীরাজনেরা জীবিত কিংবা মৃত—কাউকেই শোক করেন না।
৫. মৃত্যুর পরে মোক্ষ লাভ সম্ভব
শ্লোক (অধ্যায় ৮, শ্লোক ১৬):
“আব্রহ্মভুবনাল্লোকাঃ
পুনরাবর্তিনো অর্জুন।
মামুপ্ত্য তু কৌন্তেয়
পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে॥”
বাংলা অনুবাদ:
হে অর্জুন, ব্রহ্মলোক পর্যন্ত সব লোকেই পুনর্জন্ম হয়, কিন্তু যে আমার কাছে আসে, সে আর জন্মগ্রহণ করে না।
উপসংহার
শ্রীকৃষ্ণের এই বাণীগুলো আমাদের শেখায়—মৃত্যু কোনো ভয়ানক পরিণতি নয়, বরং এটি আত্মার নতুন যাত্রা। তিনি বলেন, আত্মা অমর, অবিনশ্বর এবং মোক্ষই আমাদের চূড়ান্ত গন্তব্য। তাই মৃত্যু নয়, আত্মার জ্ঞানই আমাদের মুক্তি এনে দিতে পারে।

