মৃত সন্তানের জন্য বাবা মায়ের দোয়া

ইসলামে সন্তান একটি বড় নিয়ামত এবং পরীক্ষা। কেউ যখন সন্তান লাভ করে, তখন তা আল্লাহর পক্ষ থেকে রহমত হিসেবে বিবেচিত হয়; আবার কেউ যদি সন্তান হারায়, সেটাও তার জন্য একটি ইমতিহান বা পরীক্ষার মাধ্যম।

অনেক সময় এমন হয়, সন্তান জন্মের আগে বা কিছুদিন পর মৃত্যুবরণ করে। এই দুঃখজনক ঘটনার পরও ইসলাম বাবা-মায়ের জন্য সান্ত্বনা, সওয়াব ও দোয়ার পথ খুলে রেখেছে।


মৃত সন্তানের মর্যাদা

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

“যে মুসলমানের তিনটি সন্তান মারা যায় এবং সে (আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য) তাদের মৃত্যুতে ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।”
সহীহ বুখারী, হাদীস: ১২৪৯; সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৬৩২

অন্য এক হাদীসে এসেছে:

“তিনটি শিশু মারা গেলে তারা তাদের মায়ের জন্য জান্নাতে টান দেবে।”
মুসলিম, হাদীস: ২৬৩৫

এই হাদীসগুলো থেকে বোঝা যায়, মৃত শিশু যদি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই মৃত্যুবরণ করে, তবে তারা কিয়ামতের দিন তাদের বাবা-মায়ের জন্য সুপারিশকারী হবে এবং জান্নাতে নিয়ে যাবে।


মৃত সন্তানের জন্য বাবা-মায়ের করণীয়

১. ধৈর্য ও সবর করা

সন্তান হারানো যে কোনো বাবা-মায়ের জন্য হৃদয়বিদারক। তবে ইসলাম এই দুঃখে ধৈর্য ও আল্লাহর ফয়সালায় রাজি থাকার শিক্ষা দেয়।

আল-কুরআনে আল্লাহ বলেন:

“নিশ্চয়ই আমি তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ, জান-মাল ও ফল-ফসলের ক্ষতির মাধ্যমে; আর ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।”
সূরা আল-বাকারা, আয়াত: ১৫৫

২. দোয়া করা

মৃত সন্তানের জন্য দোয়া করা বাবা-মায়ের অন্যতম করণীয়। যদিও মৃত সন্তান তার বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করতে পারবে, তবুও জীবিত অবস্থায় পিতা-মাতার উচিত তার জন্য দোয়া করা।

উদাহরণস্বরূপ:

“হে আল্লাহ! আমাদের সন্তানকে জান্নাতুল ফিরদাউসে স্থান দিন। তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী করুন এবং আমাদের ধৈর্যশীল বানান।”

৩. সদকা করা

কেউ কেউ সন্তান হারানোর পর তাদের পক্ষ থেকে সদকা করে থাকেন। এটি একটি নেক আমল। এটি সরাসরি মৃত সন্তানের আমলনামায় যুক্ত না হলেও পিতা-মাতার পক্ষ থেকে সদকার সওয়াব আশা করা যায়।

৪. আখিরাতে পুনর্মিলনের আশা রাখা

হাদীসে এসেছে, শিশু মৃত্যুবরণ করার পর জান্নাতে খেলাধুলা করে এবং বলবে:

“হে আল্লাহ! যতক্ষণ না তুমি আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে আমাকে পুনর্মিলিত করছো, আমি শান্ত হব না।”
মুসনাদ আহমাদ, হাদীস: ১৯০৯৬


মাথা থেকে বাজে চিন্তা দূর করার দোয়া জেনে নিন

উপসংহার

একটি মৃত সন্তান তার পিতা-মাতার জন্য কষ্টের কারণ হলেও, ইসলামে এটি জান্নাতের এক বড় মাধ্যম হতে পারে যদি তারা ধৈর্য ধারণ করে এবং আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখে।

এজন্য প্রতিটি বাবা-মার উচিত আল্লাহর এই ফয়সালাকে মেনে নেওয়া এবং মৃত সন্তানের জন্য নিয়মিত দোয়া করা।

আখিরাতে পবিত্র মিলনের আশায়, এই ছোট্ট আত্মাটি জান্নাতে এক ফুল হয়ে ফুটে থাকবে।

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুরআন-হাদীসভিত্তিক দোয়া, আমল ও ইসলামিক জীবনদর্শন নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সান্নিধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ সূত্রভিত্তিক দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা প্রতিটি দোয়া দলিলসমৃদ্ধ, বাস্তবভিত্তিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপিত, যেন পাঠক সহজেই আমলে নিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন – “প্রত্যেক হৃদয়ের একমাত্র পরিপূর্ণ প্রশান্তি হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে”। তাই তাঁর প্রতিটি লেখা এই লক্ষ্যে নিবেদিত যে, পাঠক যেন দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকৃত হন। লেখার বিষয়: ইসলামিক দোয়া, আমল, ফজিলত, কুরআনিক আয়াতভিত্তিক দোয়া, হাদীস থেকে সংগৃহীত দোয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া।

Leave a Comment