বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া — সহিহ হাদিস, অর্থ ও আদব

ইসলাম শুধু ইবাদতের ক্ষেত্রেই নয়, বরং ব্যক্তিগত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের জন্যও দিকনির্দেশনা দিয়েছে। শৌচাগারে প্রবেশ ও বের হওয়া একটি দৈনন্দিন কাজ, কিন্তু ইসলামে এটিও আদব ও দোয়া সহকারে করতে বলা হয়েছে। কারণ বাথরুম এমন একটি জায়গা যেখানে শয়তান ও অপবিত্র জিনের বসবাস বেশি থাকে, তাই সেখানে প্রবেশের সময় আল্লাহর কাছে সুরক্ষা চাওয়া সুন্নত।

রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের বাথরুমে প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট দোয়া শিখিয়েছেন, যা সহিহ হাদিসে বর্ণিত।


বাথরুমে প্রবেশ করার দোয়া

আরবি:
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبُثِ وَالْخَبَائِثِ

বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল খুবুছি ওয়াল খাবায়িছ।

অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই সব অপবিত্র জিন এবং অপবিত্র জিন্নিদের থেকে।

রেফারেন্স:
সহিহ বুখারি: হাদিস ১৪২, সহিহ মুসলিম: হাদিস ৩৭৫


দোয়ার তাৎপর্য

  • শয়তান থেকে সুরক্ষা — বাথরুম এমন একটি স্থান যেখানে শয়তান ও অপবিত্র আত্মারা থাকে, তাই দোয়া পড়লে তাদের অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
  • আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা — এই দোয়া আমাদের শারীরিক পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি আত্মিক সুরক্ষাও নিশ্চিত করে।
  • সুন্নত অনুসরণ — রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর শিক্ষা মেনে চলা আল্লাহর সন্তুষ্টি আনে।

বাথরুমে প্রবেশের সুন্নতি আদব

  1. বাম পা আগে প্রবেশ করা — সুন্নত অনুযায়ী বাথরুমে প্রবেশের সময় বাম পা আগে দেওয়া।
  2. দোয়া পড়ে প্রবেশ করা — প্রবেশের সময় উপরের দোয়াটি পড়া।
  3. অতিরিক্ত কথা না বলা — বাথরুমে প্রবেশের পর কথা বলা, সালাম দেওয়া বা জবাব দেওয়া মাকরুহ।
  4. কিবলামুখী বা পিঠ করে না বসা — প্রস্রাব বা পায়খানা করার সময় কিবলার দিকে মুখ বা পিঠ করা উচিত নয়।
  5. পোশাক যথেষ্ট পরিমাণে ঢাকা রাখা — গোপনাঙ্গ ঢাকা রাখা ফরজ।
  6. তাড়াহুড়ো না করা — ভালোভাবে পরিষ্কার হওয়া এবং পানি ব্যবহার করা।

বাথরুম থেকে বের হওয়ার দোয়া (বোনাস)

আরবি:
غُفْرَانَكَ

বাংলা উচ্চারণ:
গুফরানাকা।

অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাই।

রেফারেন্স:
সহিহ আবু দাউদ: হাদিস ৩০


বাথরুমে প্রবেশের দোয়ার উপকারিতা

  • শয়তান ও ক্ষতিকর জিন থেকে সুরক্ষা।
  • অপবিত্র পরিবেশে আধ্যাত্মিক নিরাপত্তা।
  • সুন্নত পালনের মাধ্যমে সওয়াব লাভ।
  • দৈনন্দিন জীবনে ইসলামি শৃঙ্খলা বজায় রাখা।

সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

দোয়া পড়তে ভুলে গেলে কি হবে?

ভুলে গেলে মনে পড়ার সাথে সাথে পড়তে হবে, তবে বাথরুমের ভিতরে মুখে উচ্চারণ না করে মনে মনে পড়া উত্তম।

দোয়া কি বাংলায় পড়া যাবে?

আরবিতে পড়া উত্তম, তবে অর্থ মনে রেখে বাংলায় বললেও আল্লাহ কবুল করবেন।

দোয়া কি উচ্চস্বরে পড়তে হবে?

না, বাথরুমে প্রবেশের আগে মুখে বা মনে মনে আস্তে পড়তে হবে।


উপসংহার

বাথরুমে প্রবেশ করা একটি দৈনন্দিন কাজ হলেও ইসলামে এটিও সুন্নত ও দোয়ার সাথে করতে বলা হয়েছে। এটি শুধু শারীরিক পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, বরং আধ্যাত্মিক সুরক্ষার জন্যও জরুরি।

আজ থেকেই বাথরুমে প্রবেশের দোয়া মুখস্থ করুন এবং আপনার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদেরও শেখান, যাতে তারাও আল্লাহর এই বরকতময় সুরক্ষার অংশীদার হতে পারে।

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুরআন-হাদীসভিত্তিক দোয়া, আমল ও ইসলামিক জীবনদর্শন নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সান্নিধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ সূত্রভিত্তিক দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা প্রতিটি দোয়া দলিলসমৃদ্ধ, বাস্তবভিত্তিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপিত, যেন পাঠক সহজেই আমলে নিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন – “প্রত্যেক হৃদয়ের একমাত্র পরিপূর্ণ প্রশান্তি হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে”। তাই তাঁর প্রতিটি লেখা এই লক্ষ্যে নিবেদিত যে, পাঠক যেন দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকৃত হন। লেখার বিষয়: ইসলামিক দোয়া, আমল, ফজিলত, কুরআনিক আয়াতভিত্তিক দোয়া, হাদীস থেকে সংগৃহীত দোয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া।

Leave a Comment