বদনজর বা “ঈর্ষার দৃষ্টি” এমন এক আধ্যাত্মিক ক্ষতি, যা হক এবং সহিহ হাদিসে প্রমাণিত। এটি মানুষের ঈর্ষা, হিংসা বা অতিরিক্ত প্রশংসার কারণে হতে পারে, যা আল্লাহর ইচ্ছায় অন্যের ক্ষতি ডেকে আনে। বদনজর শারীরিক অসুস্থতা, মানসিক অশান্তি এমনকি আর্থিক ক্ষতিরও কারণ হতে পারে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন —
“বদনজর সত্য, এবং যদি কিছু আল-কদর (তাকদির) এর আগে ঘটতে পারত, তবে তা বদনজর হত।”
(সহিহ মুসলিম, হাদিস: ২১৮৮)
ইসলামে বদনজর থেকে বাঁচার জন্য কিছু সহিহ দোয়া ও আমল শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে। আসুন সেগুলো বিস্তারিত জেনে নেই।
এখানে আপনি পাবেন:
বদনজর থেকে বাঁচার জন্য সহিহ দোয়া
১. বদনজরের সময় পড়ার দোয়া
আরবি:
أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
বাংলা উচ্চারণ:
আউযু বিকালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাতি মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি আ’ইনিল্লা-ম্মাহ।
অর্থ:
আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার মাধ্যমে আশ্রয় চাই প্রতিটি শয়তান ও বিষধর প্রাণী থেকে এবং প্রতিটি কুদৃষ্টির অনিষ্ট থেকে।
রেফারেন্স:
সহিহ বুখারি: হাদিস ৩৩৭১, সহিহ মুসলিম: হাদিস ২১৮৬
২. বদনজর থেকে বাঁচার জন্য সন্তানদের ওপর দোয়া
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযি.) বলেন — রাসূলুল্লাহ ﷺ হাসান ও হুসাইন (রাযি.)-এর জন্য এ দোয়া পড়তেন:
আরবি:
أُعِيذُكُمَا بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
বাংলা উচ্চারণ:
উ’ঈযুকুমা বিকালিমাতিল্লাহিত্তাম্মাতি, মিন কুল্লি শাইতানিন ওয়া হাম্মাতিন, ওয়া মিন কুল্লি আ’ইনিল্লা-ম্মাহ।
অর্থ:
আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমার মাধ্যমে তোমাদেরকে আশ্রয় দিচ্ছি, প্রতিটি শয়তান, বিষধর প্রাণী এবং প্রতিটি কুদৃষ্টি থেকে।
রেফারেন্স:
সহিহ বুখারি: হাদিস ৩৩৭১
বদনজর থেকে বাঁচার জন্য কুরআনের আয়াত
১. সূরা ফালাক (সূরা ১১৩)
অর্থ:
বলুন, আমি আশ্রয় নিচ্ছি প্রভাতের প্রভুর কাছে— সৃষ্ট সব কিছুর অনিষ্ট থেকে, অন্ধকার নেমে এলে তার অনিষ্ট থেকে, গিঁটে ফুঁ দেয়া জাদুকারিণীদের অনিষ্ট থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।
২. সূরা নাস (সূরা ১১৪)
অর্থ:
বলুন, আমি আশ্রয় নিচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের কাছে— মানুষের অধিপতি, মানুষের উপাস্যের কাছে, সেই ফিসফিসকারীর অনিষ্ট থেকে, যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়— সেটা হতে পারে জিন বা মানুষ।
বদনজর থেকে বাঁচার সুন্নতি পদ্ধতি
- নিয়মিত সকাল-সন্ধ্যার যিকির ও দোয়া পড়া।
- সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস — প্রতিদিন সকালে ও রাতে তিনবার পড়া।
- আয়াতুল কুরসি — ফজর ও মাগরিবের পর পড়া, বিশেষত ঘুমের আগে।
- নিজে ও পরিবারের ওপর দোয়া ফুঁ দেওয়া।
- অন্যকে প্রশংসা করার সময় “মাশাআল্লাহ” বলা, যাতে বদনজর না লাগে।
বদনজরের লক্ষণ (ইসলামি দৃষ্টিতে)
- হঠাৎ অসুস্থ হয়ে যাওয়া, চিকিৎসায় কাজ না হওয়া।
- আচমকা মানসিক অস্থিরতা বা দুশ্চিন্তা।
- ব্যবসা বা কাজে হঠাৎ ক্ষতি হওয়া।
- কোনো কারণ ছাড়াই অবসাদ বা ঘুম ঘুম ভাব।
(তবে এসব লক্ষণ থাকলেই যে বদনজর লেগেছে, তা নিশ্চিত নয়। চিকিৎসা ও দোয়া একসাথে করা উচিত।)
বদনজর থেকে বাঁচার উপকারিতা
- আল্লাহর সুরক্ষা লাভ করা।
- মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি।
- পরিবার ও সন্তানদের আধ্যাত্মিক সুরক্ষা।
- ঈর্ষা ও হিংসার প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
বদনজর কি সত্যি?
হ্যাঁ, সহিহ হাদিসে বদনজরের অস্তিত্ব প্রমাণিত।
বদনজর হলে কি শুধু দোয়াই পড়তে হবে?
দোয়া ও রুকইয়া শারইয়া পড়া সুন্নত, পাশাপাশি প্রয়োজনে চিকিৎসা নেয়া যাবে।
বদনজর থেকে বাঁচার জন্য কি কাউকে গিয়ে তাবিজ নিতে হবে?
না, বরং কুরআন ও সহিহ দোয়া পড়াই সর্বোত্তম পদ্ধতি।
উপসংহার
বদনজর থেকে সুরক্ষা পাওয়া শুধু শারীরিক নয়, বরং আধ্যাত্মিক প্রয়োজনও বটে। রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের এমন দোয়া ও আমল শিখিয়েছেন, যা বদনজরের অনিষ্ট থেকে রক্ষা করে। নিয়মিত এসব দোয়া পড়া এবং পরিবারের সবাইকে শেখানো প্রতিটি মুসলিমের কর্তব্য।
আজ থেকেই বদনজর থেকে বাঁচার দোয়া মুখস্থ করুন এবং আপনার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদেরও শেখান, যাতে তারাও আল্লাহর এই বরকতময় সুরক্ষার অংশীদার হতে পারে।

