প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষ করে বন্যা, মানব জীবনের এক কঠিন বাস্তবতা। বন্যা যেমন ঘরবাড়ি, সম্পদ ও ফসল ধ্বংস করে, তেমনি মানুষের মনেও এক ভয়াবহ আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে—প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বাঁচতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে এবং পাশাপাশি সচেতন ও প্রস্তুত থাকতে হবে।
কোরআন থেকে বন্যা বা প্রাকৃতিক বিপদে পাঠযোগ্য দোয়া
১. نوح (আ.) এর দোয়া (সূরা আল-মুমিনূন ২৩:২৬)
رَبِّ لَا تَذَرْ عَلَى الْأَرْضِ مِنَ الْكَافِرِينَ دَيَّارًا
উচ্চারণ:
রব্বি লা তাযার ‘আলাল আরদে মিনাল কাফিরিনা দাইয়্যারা
অর্থ:
হে আমার প্রতিপালক! আপনি পৃথিবীতে কাফেরদের কাউকেই অবশিষ্ট রাখবেন না।
এই দোয়াটি মূলত হযরত নূহ (আ.) এর সময়ের মহাপ্লাবনের প্রেক্ষিতে। এটা আমাদের শেখায় যে, যখন প্রকৃতি রুদ্র রূপ নেয়, তখন আল্লাহর প্রতি ভয় ও ক্ষমা প্রার্থনা জরুরি।
২. বিপদ থেকে বাঁচার জন্য একটি সংক্ষিপ্ত ও মাকবুল দোয়া (হাদীস ভিত্তিক)
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ وَالْغَرَقِ
উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাদমি ওয়াল গারাক
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে ধ্বংস এবং ডুবে মৃত্যুর (বিপদ) থেকে আশ্রয় চাই।
রেফারেন্স:
মুসলিম শরীফ, হাদীস: ২৭০৬
এই দোয়াটি বিশেষভাবে বন্যা, জলঢল বা নদীর ভয়াবহ রূপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য উপযুক্ত ও বিশুদ্ধ।
৩. তওবা ও ইস্তেগফার – দুর্যোগ থেকে মুক্তির বড় হাতিয়ার
رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ
উচ্চারণ:
রব্বিগফির লি ওয়ালি-ওয়ালিদাইয়া ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব
অর্থ:
হে আমার রব! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সকল মু’মিনকে ক্ষমা করুন সেই দিনে, যেদিন হিসাব কায়েম হবে।
সূত্র: সূরা ইব্রাহিম – ১৪:৪১
আমাদের কৃত গুনাহ ও সীমালঙ্ঘনের কারণেই অনেক সময় দুর্যোগ আসে। তাই তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা দুর্যোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
ইসলামের নির্দেশিত আমল
১. নিয়মিত সালাত আদায় – আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের প্রথম ধাপ
২. ইস্তেগফার ও তাওবা – নিজের গুনাহর জন্য মাফ চাওয়া
৩. সদকা ও দান করা – দুর্যোগ থেকে মুক্তির জন্য সদকা এক মহৌষধ
৪. আযান দেওয়া – কষ্ট বা দুর্যোগে বাড়িতে আযান দিলে শয়তানের প্রভাব কমে এবং রাহমত আসে
বাস্তবিক করণীয়
ইসলাম শুধুমাত্র দোয়ার উপর নির্ভর করতে বলেনি—বরং সচেতন হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে। তাই আমাদের উচিত:
- নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়া
- সরকারি সতর্কতা মেনে চলা
- পানি, খাবার, ওষুধ প্রস্তুত রাখা
- বিপদে ধৈর্য ও সহানুভূতির সাথে চলা
উপসংহার
বন্যা একটি কঠিন পরীক্ষা। এটা আমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে সতর্ক সংকেতও হতে পারে। তাই একদিকে যেমন আমাদের সতর্ক থাকা উচিত, অন্যদিকে আল্লাহর কাছে শরণাপন্ন হওয়াও ফরজ দায়িত্ব। দোয়া, ইস্তেগফার, দান ও সচেতনতা—এই চারটি অস্ত্রই আমাদের বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারে।

