ইসলামে চোখ একটি মহান নিয়ামত এবং দায়িত্ব। এ চোখ দ্বারা যদি কেউ হারাম দেখা করে, তবে তা চোখের গুনাহে পরিণত হয়। কুরআন ও হাদীসে চোখকে হেফাজতের নির্দেশ রয়েছে এবং চোখের গুনাহ থেকে বাঁচতে বিশেষ দোয়া ও আমলের কথা বলা হয়েছে।
চোখের গুনাহ কী কী?
চোখের গুনাহ বলতে বোঝানো হয়:
- নারীর প্রতি কু-দৃষ্টিতে তাকানো
- অশ্লীল ছবি বা ভিডিও দেখা
- হারাম ও নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে আগ্রহী হয়ে তাকানো
- কাউকে অবজ্ঞা করে তাকানো
- রিয়া বা লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে তাকানো
এই গুনাহগুলো নফস ও অন্তরকে দুর্বল করে এবং আল্লাহর গজবের কারণ হয়।
কুরআনে চোখ হেফাজতের নির্দেশ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
“মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তাদের লজ্জাস্থানকে হেফাজত করে। এটা তাদের জন্য উত্তম।”
—সূরা আন-নূর: ৩০
এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, চোখকে সংযত রাখা ফরজ বিধানের অন্তর্ভুক্ত।
চোখের গুনাহ থেকে মুক্তির দোয়া
১. চোখ ও অন্তরের গুনাহ থেকে মুক্তির দোয়া
আরবি:
اللَّهُمَّ طَهِّرْ قَلْبِي وَنَقِّ بَصَرِي
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা তাহ্হির ক্বালবি ওয়া নাক্ক্বি বাসারি
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমার অন্তরকে পবিত্র করুন এবং আমার দৃষ্টিকে বিশুদ্ধ করুন।
এই দোয়া চোখ ও হৃদয়কে হারাম ও অশুদ্ধতা থেকে মুক্ত রাখার জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
২. চোখের হেফাজতের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দোয়া
আরবি:
اللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي قَلْبِي نُورًا، وَفِي بَصَرِي نُورًا
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাজআল ফি ক্বালবি নূরা, ওয়া ফি বাসারি নূরা
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমার অন্তরে নূর দিন এবং আমার চোখে নূর দিন।
(সহীহ বুখারী: ৬৩১৮)
এই দোয়াটি প্রমাণ করে যে, চোখকে নূরের পথের দিকে পরিচালিত করা এবং গুনাহ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
৩. ক্ষমা চাওয়ার সাধারণ দোয়া (গোপন ও প্রকাশ্য গুনাহসহ)
আরবি:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي كُلَّهُ، دِقَّهُ وَجِلَّهُ، وَأَوَّلَهُ وَآخِرَهُ، وَعَلانِيَتَهُ وَسِرَّهُ
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাগফির লি যানবী কুল্লাহু, দিক্কাহু ওয়া জিল্লাহু, ওয়া আওয়্বালাহু ওয়া আখিরাহু, ওয়া ‘আলানিয়াতাহু ওয়া সিররাহু
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দিন—ছোট হোক বা বড়, প্রথম হোক বা শেষ, প্রকাশ্য হোক বা গোপন।
(সহীহ মুসলিম: ২৭১৯)
এই দোয়াটি চোখের গুনাহসহ সব ধরণের গুনাহ থেকে মুক্তির জন্য উপকারী।
চোখের গুনাহ থেকে বাঁচার করণীয়
১. চোখ সংযত রাখা (غض البصر)
চোখকে অবৈধ জিনিসের দিকে তাকানো থেকে বিরত রাখা। রাসূল (সা.) বলেছেন:
“হারাম দিকে প্রথম তাকানোটা মাফ, কিন্তু দ্বিতীয়টা গুনাহ।”
—(তিরমিযী: ২৭৭৭)
২. পরিপূর্ণ তাকওয়া ও লজ্জাশীলতা অর্জন করা
লজ্জাশীলতা ঈমানের অংশ। চোখের হেফাজতে এটি অপরিহার্য।
৩. পরিবেশ থেকে বিরত থাকা
যে পরিবেশে বারবার হারাম জিনিস চোখে পড়ে, তা এড়িয়ে চলা।
৪. ইনটারনেট ও প্রযুক্তির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ
ইসলামবিরোধী কনটেন্ট থেকে চোখ হেফাজতে মোবাইল, টিভি, ওয়েবসাইট ব্যবহারে সতর্কতা জরুরি।
উপসংহার
চোখের গুনাহ একটি মারাত্মক গোপন পাপ, যা অজান্তেই মানুষের ঈমান দুর্বল করে দেয়। কুরআন-হাদীসে চোখ হেফাজতের প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। উপরে উল্লেখিত দোয়াগুলো নিয়মিত পড়লে এবং সতর্ক জীবন যাপন করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা চোখের গুনাহ মাফ করে দিবেন এবং হেফাজত করবেন।

