চর্মরোগ বা ত্বকের অসুখ একধরনের দেহগত কষ্ট, যা কেবল বাহ্যিক সৌন্দর্য হ্রাস করে না, বরং মানসিক অস্থিরতা এবং সামাজিক দুর্দশার কারণও হতে পারে। ইসলাম স্বাস্থ্য রক্ষাকে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের অংশ হিসেবে গণ্য করে, এবং শরীরিক রোগ থেকে মুক্তির জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।
বিশেষ করে চর্মরোগ—যেমন সোরিয়াসিস, একজিমা, খোস-পাঁচড়া, ফাঙ্গাস, বা লিউকোডার্মার মতো কঠিন ত্বকজনিত রোগ—এর জন্য কুরআন ও হাদীসে কিছু উপকারী দোয়া রয়েছে।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দোয়া চর্মরোগে
হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে অসুস্থ হলে দোয়া করতেন, এবং সাহাবাদেরও তা শিখিয়েছেন।
দোয়া ১: সব ধরনের রোগ, বিশেষত ত্বকজনিত রোগ থেকে মুক্তির জন্য
আরবি:
اللَّهُمَّ رَبَّ النَّاسِ، أَذْهِبِ الْبَأْسَ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِي، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা রাব্বান্-নাস, আযহিবিল-বা’স, ইশফি আনতা আশ-শাফি, লা শিফা’ ইল্লা শিফাউক, শিফাআন লা ইউগাদিরু সাকামা
অর্থ:
হে আল্লাহ! মানুষের পালনকর্তা, আপনি কষ্ট দূর করুন। আপনি হচ্ছেন একমাত্র চিকিৎসক। আপনার শিফা ছাড়া আর কোনো শিফা নেই। আপনি এমন শিফা দিন, যাতে কোনো অসুখ না থাকে।
রেফারেন্স:
সহীহ বুখারী: হাদীস ৫৭৪৩, সহীহ মুসলিম: ২১৯১
দোয়া ২: বাহ্যিক রোগ, বিশেষ করে ত্বকের ফোস্কা, ক্ষত বা কাটা স্থান নিরাময়ে
আরবি:
بِسْمِ اللَّهِ، تُرْبَةُ أَرْضِنَا، بِرِيقَةِ بَعْضِنَا، يُشْفَى سَقِيمُنَا، بِإِذْنِ رَبِّنَا
বাংলা উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহ, তুরবাতু আরদিনা, বিরিকাতি বা’দিনা, ইউশফা সাকীমুনা, বি-ইذن রাব্বিনা
অর্থ:
আল্লাহর নামে (পড়ছি), আমাদের মাটির মাধ্যমে, আমাদের এক অংশের লালার মাধ্যমে, আমাদের অসুস্থ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠুক, আমাদের রবের হুকুমে।
রেফারেন্স:
সহীহ মুসলিম: হাদীস ২১৯৪
দোয়া ৩: রোগমুক্তির জন্য ছোট দোয়া
আরবি:
اللَّهُمَّ اشْفِنِي
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাশফিনী
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমাকে আরোগ্য দান করুন।
রেফারেন্স:
ছোট দোয়া — নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বহুবার এভাবে সংক্ষিপ্ত দোয়া করতেন (মুয়াত্তা মালিক, হাদীস ৪৮২)
চর্মরোগ থেকে মুক্তির জন্য কিছু আমল ও পরামর্শ
১. তাহাজ্জুদে উঠে দোয়া করা: রাতে নির্জনে দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
২. সদকা দেয়া: হাদীসে আছে, “রোগ ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে সদকা করো।” (আল-বায়হাকি)
৩. সুরা ফাতিহা ও আয়াতুল কুরসি পড়া: এগুলো রূহানী শিফার জন্য বহু সাহাবি ব্যবহার করতেন।
৪. পানি বা অলিভ অয়েলে দম করে আক্রান্ত স্থানে লাগানো — এটি ইবনে কাইয়্যিম রহ. সহ অনেক ইসলামী চিকিৎসাবিদের মতে উপকারী।
উপসংহার
চর্মরোগ যতটাই বাহ্যিক, ততটাই মানসিক দুঃখের কারণ হতে পারে। ইসলামে এ অবস্থায় ধৈর্য ধারণ করে দোয়া করা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। আল্লাহ তাআলা বলেছেন, “আমি অসুস্থ হই, আর তিনিই আমাকে আরোগ্য দান করেন” (সূরা আশ-শু’আরা: ৮০)। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি আল্লাহর কাছে শিফার জন্য দোয়া করা আমাদের কর্তব্য। আল্লাহ যেন আমাদের সকল প্রকার চর্মরোগ এবং শারীরিক কষ্ট থেকে মুক্তি দেন — আমিন।

