জালিমের বিরুদ্ধে দোয়া

ইসলামে জুলুম একটি গুরুতর অপরাধ। কোনো ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেওয়া, সম্পদ হরণ, অধিকার হরণ অথবা মানসিকভাবে নিপীড়ন করা — সবই জুলুমের মধ্যে পড়ে। কুরআন ও হাদীসে বারবার জুলুমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং মজলুমকে দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

জুলুমের শিকার ব্যক্তির দোয়া আল্লাহ সরাসরি কবুল করেন — এমনকি জালিম যদি মুসলিমও হয়। তাই ইসলাম মজলুমকে তার কষ্ট দূর করতে দোয়ার শক্তিশালী হাতিয়ার দিয়েছে।


কুরআনে জুলুমের নিন্দা

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“আল্লাহ জালিমদেরকে পছন্দ করেন না।”
— সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৫৭

আরেক আয়াতে বলেন:

“তোমরা জুলুম করো না, আমি (আল্লাহ) তোমাদের প্রতি জুলুম করিনি।”
— সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৫৭৭


হাদীসে জালিমের বিরুদ্ধে দোয়ার গুরুত্ব

রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন:

“তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেয়া হয় না: (১) ন্যায়পরায়ণ শাসকের, (২) রোজাদারের ইফতারের সময়ের, এবং (৩) মজলুমের।”
— তিরমিযি, হাদীস: ৩৫৯৮

এছাড়াও তিনি বলেন:

“মজলুমের দোয়ার ও মাঝে এবং আল্লাহর মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।”
— সহীহ বুখারী, হাদীস: ২৪৪৮


জালিমের বিরুদ্ধে দোয়া (আরবি, উচ্চারণ ও অর্থসহ)

নিচে কিছু দোয়া দেওয়া হলো, যেগুলো একজন মজলুম ব্যক্তি জালিমের বিরুদ্ধে পড়তে পারেন:


দোয়া ১: জুলুম থেকে মুক্তির জন্য

আরবি:
اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ الظَّالِمِينَ

বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনায্-যালিমীন

অর্থ:
হে আল্লাহ! আমাকে জালিমদের (অত্যাচারীদের) হাত থেকে রক্ষা করুন।

রেফারেন্স:
সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ২১ (নবী মূসা (আ.)-এর দোয়া অনুপ্রাণিত)


দোয়া ২: জালিমের শাস্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য

আরবি:
اللَّهُمَّ انْتَقِمْ مِنَ الظَّالِمِينَ، وَأَرِنَا فِيهِمْ آيَاتِكَ

বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা অন্তাকিম মিনায্-যালিমীন, ওয়া আরিনা ফীহিম আয়াতিকা

অর্থ:
হে আল্লাহ! জালিমদের কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করুন, এবং আমাদের তাদের মধ্যে তোমার নিদর্শন দেখান।

রেফারেন্স:
সালাফে সালেহীনের দোয়া; হাদীস বা কুরআনের সাধারণ বক্তব্যের ভিত্তিতে গঠিত।


দোয়া ৩: আল্লাহর বিচার প্রার্থনা

আরবি:
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ

বাংলা উচ্চারণ:
হাসবুনাল্লাহু ওয়া নি‘মাল ওয়াকীল

অর্থ:
আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট, এবং তিনি কতই না উত্তম কারসাজি গ্রহণকারী।

রেফারেন্স:
সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৭৩


ইসলাম কীভাবে দোয়া ও ধৈর্যের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া চায়?

ইসলাম প্রতিশোধে বিশ্বাস করে না, বরং ন্যায়বিচার, ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর ভরসার শিক্ষা দেয়। একজন মুমিনের জন্য মজলুম অবস্থায় উত্তম কাজ হচ্ছে:

  • ধৈর্য ধারণ করা
  • দোয়া করা
  • আল্লাহর কাছে বিচার চাওয়া
  • কোনো আইনি বা ইসলামসম্মত উপায়ে জুলুম থেকে মুক্তির চেষ্টা করা

ফিলিস্তিনের জন্য দোয়া আরবি

উপসংহার

জালিমের বিরুদ্ধে দোয়া করা ইসলামে বৈধ এবং একটি সম্মানজনক প্রতিরোধ। তবে এই দোয়াগুলোতে সীমালঙ্ঘন না করে আল্লাহর ন্যায়বিচার কামনা করাই উত্তম। যেসব মানুষ দুনিয়ায় জুলুমের শিকার হয়, আখিরাতে তাদের জন্য সুবিচার নির্ধারিত আছে। আর যারা জুলুম করে, তারা চরম শাস্তির মুখোমুখি হবে।

তাই আমাদের উচিত, সব সময় আল্লাহর কাছে ন্যায়বিচার প্রার্থনা করা এবং নিজে কখনোই কারো ওপর জুলুম না করা।

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুরআন-হাদীসভিত্তিক দোয়া, আমল ও ইসলামিক জীবনদর্শন নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সান্নিধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ সূত্রভিত্তিক দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা প্রতিটি দোয়া দলিলসমৃদ্ধ, বাস্তবভিত্তিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপিত, যেন পাঠক সহজেই আমলে নিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন – “প্রত্যেক হৃদয়ের একমাত্র পরিপূর্ণ প্রশান্তি হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে”। তাই তাঁর প্রতিটি লেখা এই লক্ষ্যে নিবেদিত যে, পাঠক যেন দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকৃত হন। লেখার বিষয়: ইসলামিক দোয়া, আমল, ফজিলত, কুরআনিক আয়াতভিত্তিক দোয়া, হাদীস থেকে সংগৃহীত দোয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া।

Leave a Comment