মাথা ব্যথা একটি সাধারণ শারীরিক সমস্যা, যা মাঝে মাঝে বা নিয়মিতভাবে হতে পারে। কারো ক্ষেত্রে এটি সামান্য অস্বস্তি সৃষ্টি করে, আবার কারো জন্য প্রচণ্ড যন্ত্রণাদায়ক হয়ে ওঠে। ইসলাম একজন মুসলিমকে শুধু চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শই দেয় না, বরং রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য দোয়া করারও শিক্ষা দেয়। রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم অসুস্থ হলে বা অন্যকে অসুস্থ দেখলে কুরআন ও দোয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা করতেন।
এই আর্টিকেলে আমরা মাথা ব্যথার জন্য সহিহ হাদিসে বর্ণিত দোয়া, এর অর্থ, পড়ার নিয়ম, এবং মাথা ব্যথায় ইসলামি দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
এখানে আপনি পাবেন:
মাথা ব্যথায় দোয়া করার গুরুত্ব
দোয়া করা মানে শুধু আধ্যাত্মিক চিকিৎসা নয়, বরং এটি মানসিক শান্তি এবং আল্লাহর ওপর ভরসার প্রতীক।
- দোয়া আল্লাহর রহমত পাওয়ার একটি মাধ্যম।
- মাথা ব্যথার মতো কষ্টও গুনাহ মাফের কারণ হতে পারে।
- চিকিৎসার পাশাপাশি দোয়া করলে আল্লাহ তাআলার বরকত লাভ হয়।
মাথা ব্যথার দোয়া — সহিহ হাদিসের আলোকে
১. মাথা ব্যথার সময় পড়ার দোয়া
হযরত উসমান ইবনে আবুল আস رضي الله عنه বর্ণনা করেছেন, তিনি রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم-এর কাছে শরীরের ব্যথার অভিযোগ করেন। তখন তিনি বললেন —
আরবি:
ضَعْ يَدَكَ عَلَى الَّذِي تَأَلَّمَ مِنْ جَسَدِكَ وَقُلْ: بِسْمِ اللَّهِ ثَلاثًا، وَقُلْ سَبْعَ مَرَّاتٍ: أَعُوذُ بِاللَّهِ وَقُدْرَتِهِ مِنْ شَرِّ مَا أَجِدُ وَأُحَاذِرُ
বাংলা উচ্চারণ:
দা’ ইয়াদাকা ‘আলাল্লাধি তা-আল্লামা মিন জাসাদিকা ওয়াকুল: বিসমিল্লাহ (৩ বার), ওয়াকুল সাবআ মাররাতিন: আউযু বিল্লাহি ওয়া কুদরাতিহি মিন শার্রি মা আজিদু ওয়া উহা-জিরু।
অর্থ:
তোমার শরীরের যেখানে ব্যথা আছে সেখানে হাত রাখো এবং বলো: “আল্লাহর নামে” (৩ বার), তারপর ৭ বার বলো: “আমি আল্লাহ ও তাঁর ক্ষমতার আশ্রয় নিচ্ছি, যা কষ্ট আমি অনুভব করছি এবং যা থেকে আমি আশঙ্কা করছি তার অনিষ্ট থেকে।”
রেফারেন্স:
সহিহ মুসলিম: হাদিস ২২০২
২. মাথা ব্যথায় সূরা ফাতিহা পাঠ
সাহাবায়ে কেরাম অনেক সময় ব্যথা বা অসুস্থতার সময় সূরা ফাতিহা পাঠ করে রুকইয়া করতেন। সূরা ফাতিহা পাঠ করে মাথায় হাত রাখা এবং আল্লাহর কাছে আরোগ্য প্রার্থনা করাও প্রমাণিত আমল।
পড়ার নিয়ম
- মাথা ব্যথার স্থানে হাত রাখা।
- “বিসমিল্লাহ” তিনবার বলা।
- উল্লিখিত দোয়া সাতবার পাঠ করা।
- মনোযোগ সহকারে আরোগ্যের জন্য দোয়া করা।
- চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি দোয়া করা — কারণ ইসলাম চিকিৎসা বর্জনের অনুমতি দেয় না।
মাথা ব্যথার আধ্যাত্মিক চিকিৎসা (রুকইয়া)
ইসলামে রোগ নিরাময়ের জন্য রুকইয়া শারইয়া নামে একটি পদ্ধতি আছে, যা কুরআন ও সহিহ হাদিসে বর্ণিত দোয়া দ্বারা করা হয়। মাথা ব্যথায় রুকইয়া করার কিছু পদ্ধতি—
- সূরা ফাতিহা ৭ বার পড়ে মাথায় হাত বুলানো।
- সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক, সূরা নাস পড়ে ফুঁ দেওয়া।
- “আউযু বিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজিম” বেশি বেশি পড়া।
ইসলামি দৃষ্টিতে অসুস্থতা ও ধৈর্য
রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم বলেছেন — কোনো মুসলিমের ওপর যে কষ্টই আসে, এমনকি কাঁটার খোঁচাও, আল্লাহ তার কিছু গুনাহ মাফ করে দেন। তাই মাথা ব্যথার মতো ছোট অসুস্থতাতেও ধৈর্য ধারণ করা এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা জরুরি।
মাথা ব্যথায় করণীয় ও পরামর্শ
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া।
- পর্যাপ্ত পানি পান করা।
- চোখের চাপ কমানো।
- অতিরিক্ত শব্দ ও আলো থেকে দূরে থাকা।
- প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
- দোয়া ও কুরআন তিলাওয়াত করা।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
শুধু দোয়া পড়ে চিকিৎসা বাদ দেওয়া যাবে কি?
না, ইসলাম চিকিৎসা গ্রহণের পাশাপাশি দোয়া করার নির্দেশ দিয়েছে।
মাথা ব্যথায় এই দোয়া দিনে কতবার পড়া যাবে?
যতবার প্রয়োজন মনে হয়, ততবার পড়া যাবে।
অন্যের মাথা ব্যথায় এই দোয়া পড়ে ফুঁ দেওয়া যাবে কি?
হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه وسلم অন্যের জন্য রুকইয়া করতেন।
উপসংহার
মাথা ব্যথা একটি সাধারণ অসুস্থতা হলেও এটি জীবনের কাজকর্ম ব্যাহত করে দেয়। সহিহ হাদিসে বর্ণিত দোয়া ও কুরআনের আয়াত পড়ে আল্লাহর কাছে আরোগ্য প্রার্থনা করলে ইনশাআল্লাহ উপকার পাওয়া যায়। তবে দোয়ার পাশাপাশি চিকিৎসা গ্রহণ করাও জরুরি। মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত শারীরিক কষ্টে ধৈর্য ধারণ করা, আল্লাহর ওপর ভরসা রাখা এবং দোয়া ও ইবাদতের মাধ্যমে তাঁর সাহায্য চাওয়া।

