ইসলাম শান্তি, করুণা ও ক্ষমার ধর্ম। জীবনে আমরা নানা সময়ে ভুল করি, পাপ করি — তখনই আমাদের দরকার হয় আল্লাহর দরবারে ফিরে যাওয়া ও ক্ষমা চাওয়া। এই ক্ষমা চাওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম হলো সাইয়েদুল ইস্তেগফার (Sayyidul Istighfar)। রাসূলুল্লাহ (সা.) এই দোয়াকে ইস্তেগফারের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। এই প্রবন্ধে আমরা জানব এর অর্থ, ফজিলত, আরবি দোয়া, বাংলা উচ্চারণ।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার – দোয়া আরবি পাঠ
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَىٰ عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বি, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, খালাকতানি ওয়া আনা আবদুক, ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাত’তু, আউযু বিকা মিন শার্রি মা সানা’তু, আবু’উ লাকা বিনি’মাতিকা ‘আলাইয়্য, ওয়া আবু’উ বিধানবি, ফাগফিরলি, ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনূবা ইল্লা আন্তা।
সাইয়েদুল ইস্তেগফার বাংলা অনুবাদ
“হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ব্যতীত আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার দাস। আমি যথাসাধ্য আপনার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী থাকার চেষ্টা করছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আপনার পক্ষ থেকে আমার প্রতি প্রাপ্ত নিয়ামতের স্বীকৃতি দিচ্ছি এবং আমার গুনাহ স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন, কেননা আপনি ব্যতীত কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না।”
হাদীসের উৎস (সহিহ রেফারেন্স)
এই দোয়াটি এসেছে:
সহিহ বুখারি,
- কিতাবুদ দাওয়াত
- হাদীস নম্বর: ৬৩০৬
- বর্ণনাকারী: শাদদাদ ইবনে আওস (রাঃ)
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন: “সাইয়েদুল ইস্তেগফার হলো— বান্দা যদি এই দোয়া দিনভর পাঠ করে এবং সন্ধ্যার আগে মারা যায়, তাহলে সে জান্নাতবাসী হবে। আর যদি রাতের বেলা পড়ে এবং ফজরের আগেই মারা যায়, তাহলে সেও জান্নাতবাসী হবে।”
— [সহিহ বুখারি, হাদীস: ৬৩০৬]
দোয়াটির গুরুত্ব
১. এটি রাসূল (সা.) এর ঘোষণাকৃত “সর্বশ্রেষ্ঠ ইস্তেগফার”
এই দোয়াটিকে নিজে নবীজি (সা.) “سَيِّدُ الاسْتِغْفَار” বা ইস্তেগফারের সর্দার বলে উল্লেখ করেছেন। এটি কোনো সাধারণ দোয়া নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ ও গভীর আত্মসমর্পণের দোয়া।
২. আল্লাহর একত্ব, সৃষ্টিকর্তা ও দাসত্বের স্বীকৃতি
এই দোয়াতে আল্লাহর রব্ব (প্রতিপালক) হওয়ার স্বীকৃতি, নিজেকে দাস হিসেবে মেনে নেওয়া এবং পাপ স্বীকার করে অনুতপ্ত হওয়া— তিনটি বিষয় খুব শক্তভাবে উচ্চারিত হয়।
৩. নিঃস্বার্থ অনুতাপ ও আত্মসমর্পণ
ব্যক্তি আল্লাহর নিয়ামত স্বীকার করে, এবং নিজের পাপ স্বীকার করে যেন একেবারে নিজেকে আল্লাহর দয়ায় সমর্পণ করে দেন।
কখন ও কতবার পড়তে হয়?
- প্রতিদিন সকাল (ফজরের পর) এবং রাত (মাগরিব বা এশার পর) পড়া উত্তম।
- চাইলে নিয়মিত যেকোনো সময় ইস্তেগফার করতে গিয়ে এই দোয়াটি ব্যবহার করা যায়।
- হাদীসে সকাল ও সন্ধ্যায় পাঠের ফজিলতের কথা নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে।
এই দোয়া পড়ার উপকারিতা
| উপকারিতা | ব্যাখ্যা |
|---|---|
| পাপ মোচন | আল্লাহ নিজে বলেছেন, তিনি তাওবাকারী বান্দাকে ক্ষমা করে দেন। |
| জান্নাতের নিশ্চয়তা | রাসূল (সা.) বলেছেন, এই দোয়া পাঠ করে মৃত্যু হলে সে জান্নাতে যাবে। |
| আত্মশুদ্ধি | এটি আত্মা ও হৃদয়কে পরিশুদ্ধ করে। |
| আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন | অনুতপ্ত অন্তর আল্লাহর কাছে প্রিয়। |
উপসংহার
“সাইয়েদুল ইস্তেগফার” একটি অনন্য ও পরিপূর্ণ দোয়া— যা একজন মুমিনের জন্য আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার চাবিকাঠি। এটি শুধু একটি দোয়া নয়, বরং আমাদের অন্তরের গভীরতম অনুশোচনা ও আশ্রয় চাওয়ার প্রকাশ। প্রতিদিন সকালে ও রাতে এ দোয়াটি পাঠ করা উচিত, যেন আমরা আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হই।
সূত্র:
- সহিহ বুখারি, হাদীস: ৬৩০৬
- ইমাম আন-নববী, আল-আযকার
- আল-আদ্’ইয়াহ্ আল-মাআসুরাহ্ (বিশ্ববিদ্যালয় পাঠ্যসূত্র)

