স্ট্রোক থেকে বাঁচার দোয়া

স্ট্রোক একটি হঠাৎ ঘটা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি, যা মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালনে বাধা বা রক্তপাতের ফলে ঘটে। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোগ-ব্যাধি আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি পরীক্ষা। তবে প্রতিরোধ, সতর্কতা ও দোয়ার মাধ্যমে মুসলমান আল্লাহর সাহায্য চাইতে পারে। নিচে স্ট্রোকসহ অন্যান্য গুরুতর রোগ থেকে বাঁচতে সহায়ক দোয়া ও কুরআনের আয়াত দেওয়া হলো।


১. রোগ থেকে নিরাপদ থাকার জন্য রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ زَوَالِ نِعْمَتِكَ، وَتَحَوُّلِ عَافِيَتِكَ، وَفُجَاءَةِ نِقْمَتِكَ، وَجَمِيعِ سَخَطِكَ

উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিন জাওয়ালি নি’মাতিকা, ওয়া তাহাওউলি ‘আফিয়াতিকা, ওয়া ফুজা-আতি নিকমাতিকা, ওয়া জামি-ই সাখাতিকা।

অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার নেয়ামত অপসারণ, আপনার প্রদানকৃত সুস্থতা পরিবর্তন, আকস্মিক শাস্তি এবং আপনার সকল ক্রোধ থেকে আশ্রয় চাই।

সূত্র: সহিহ মুসলিম – হাদীস: ২৭৩৯

এই দোয়া আকস্মিক বিপদ, রোগ, শাস্তি ও স্ট্রোকের মতো হঠাৎ বিপর্যয় থেকে আল্লাহর আশ্রয় কামনার জন্য উপযুক্ত।


২. সব ধরনের রোগ ও বিপদ থেকে বাঁচার দোয়া

اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَدَنِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي سَمْعِي، اللَّهُمَّ عَافِنِي فِي بَصَرِي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ

উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ‘আফিনি ফি বাদানি, আল্লাহুম্মা ‘আফিনি ফি সাম’ই, আল্লাহুম্মা ‘আফিনি ফি বাসারি, লা ইলাহা ইল্লা আনতা।

অর্থ:
হে আল্লাহ! আমার দেহে আমাকে আরোগ্য দিন, আমার শ্রবণে আমাকে আরোগ্য দিন, আমার দৃষ্টিতে আমাকে আরোগ্য দিন। আপনি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই।

সূত্র: আবু দাউদ – হাদীস: ৫০৯০, তিরমিযি – হাদীস: ৩৪০১

এটি প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার পড়া সুন্নত। নিয়মিত পাঠ করলে দেহে বড় কোনো রোগ হানা দেওয়ার আগেই আল্লাহর হেফাজত লাভ করা যায়।


৩. আকস্মিক মৃত্যু ও ধ্বংস থেকে বাঁচার দোয়া

اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَدْمِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي، وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْغَرَقِ وَالْحَرَقِ وَالْهَرَمِ

উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযু বিকা মিনাল হাদমি, ওয়া আউযু বিকা মিনাত তরাদ্দি, ওয়া আউযু বিকা মিনাল গারাকি ওয়াল হারাকি ওয়াল হারামি।

অর্থ:
হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ধ্বংসপ্রাপ্তি, পতন, ডুবে যাওয়া, আগুনে পুড়ে যাওয়া এবং বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা থেকে।

সূত্র: আবু দাউদ – হাদীস: ১৫৫২, নাসাঈ – হাদীস: ৫৫২৫

এই দোয়াটি সব আকস্মিক দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য এবং স্ট্রোকের মতো হঠাৎ বিপদের ক্ষেত্রে খুবই কার্যকর।


অতিরিক্ত আমল ও করণীয়

১. সকাল-সন্ধ্যার যিকির

স্ট্রোকের মতো হঠাৎ শারীরিক বিপদ থেকে রক্ষা পেতে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নিয়মিত পড়া যিকির ও দোয়াগুলো পালন করা দরকার। বিশেষ করে:

  • আয়াতুল কুরসী (সূরা বাকারা – আয়াত ২৫৫)

  • তিন কুল (সূরা ইখলাস, ফালাক ও নাস)

২. আত্মবিশ্বাস ও তাওয়াক্কুল

মানসিক চাপ স্ট্রোকের বড় কারণ। আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ তাওয়াক্কুল এবং দুআর মাধ্যমে আত্মিক প্রশান্তি অর্জন করলে মানসিক চাপ কমে যায়।

৩. তিনবার এই দোয়া

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
এটি সকালে ও সন্ধ্যায় তিনবার পড়লে কোনো ক্ষতি হতে পারে না (তিরমিযি – হাদীস: ৩৩৮৮)।


মাথা থেকে বাজে চিন্তা দূর করার দোয়া জেনে নিন

উপসংহার

স্ট্রোক একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি হলেও একজন মুমিন সব সময় আল্লাহর উপর ভরসা করে এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শেখানো দোয়া ও আমলের মাধ্যমে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সচেষ্ট থাকে। উপরোক্ত দোয়াগুলো নিয়মিত পাঠ করলে ইনশাআল্লাহ, স্ট্রোকসহ সব প্রকার বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুরআন-হাদীসভিত্তিক দোয়া, আমল ও ইসলামিক জীবনদর্শন নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সান্নিধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ সূত্রভিত্তিক দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা প্রতিটি দোয়া দলিলসমৃদ্ধ, বাস্তবভিত্তিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপিত, যেন পাঠক সহজেই আমলে নিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন – “প্রত্যেক হৃদয়ের একমাত্র পরিপূর্ণ প্রশান্তি হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে”। তাই তাঁর প্রতিটি লেখা এই লক্ষ্যে নিবেদিত যে, পাঠক যেন দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকৃত হন। লেখার বিষয়: ইসলামিক দোয়া, আমল, ফজিলত, কুরআনিক আয়াতভিত্তিক দোয়া, হাদীস থেকে সংগৃহীত দোয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া।

Leave a Comment