তাহাজ্জুদ নামাজ হলো রাতের শেষ ভাগে পড়া নফল নামাজ, যা আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় ইবাদতগুলোর একটি। এ সময় আল্লাহ তাআলার রহমত, বরকত ও সাড়া দেওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি থাকে। সহিহ হাদিসে এসেছে, রাতের শেষ তৃতীয়াংশে আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার আকাশে অবতরণ করেন এবং ডাক দেন:
“কে আছে যে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব? কে আছে যে আমার কাছে চাইবে, আমি তাকে দেব? কে আছে যে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব?”
(সহিহ বুখারি: হাদিস ১১৪৫, সহিহ মুসলিম: হাদিস ৭৫৮)
তাহাজ্জুদে মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য দোয়া করা সবচেয়ে উত্তম, কারণ এটি দোয়া কবুলের সময়।
এখানে আপনি পাবেন:
তাহাজ্জুদের সময় পড়ার দোয়া (সহিহ হাদিস থেকে)
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাহাজ্জুদের সময় এই দোয়া বেশি পড়তেন:
আরবি:
اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ أَنْتَ قَيِّمُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَنْ فِيهِنَّ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ مَلِكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ…
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মা রাব্বানা লাকাল হামদ, আন্তা কাইয়্যিমুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়া মান ফীহিন্না, ওয়া লাকাল হামদ, আন্তা নূরুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি ওয়া মান ফীহিন্না, ওয়া লাকাল হামদ, আন্তা মালিকুস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি… (পূর্ণ দোয়া সহিহ বুখারি ১১২০-এ রয়েছে)
অর্থ (সংক্ষিপ্ত):
হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা আপনার জন্য। আপনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী এবং যা কিছু তাতে আছে তার তত্ত্বাবধায়ক। আপনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আলো। সমস্ত প্রশংসা আপনার জন্য। আপনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর মালিক।
মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য দোয়ার পদ্ধতি তাহাজ্জুদে
- রাতের শেষ তৃতীয়াংশে উঠা — ফজরের সময়ের প্রায় ১.৫ ঘণ্টা আগে।
- অযু করা — পবিত্রতা অর্জন করা।
- ২ বা তার বেশি রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা — রাসূলুল্লাহ ﷺ ৮–১৩ রাকাত পর্যন্ত পড়তেন।
- সিজদায় দোয়া করা — সিজদা হলো বান্দার আল্লাহর কাছে সবচেয়ে নিকটবর্তী সময়। এখানে মনের ইচ্ছা, প্রয়োজন ও দুঃখ-কষ্ট খুলে বলুন।
- হাত তুলে দোয়া করা — নামাজ শেষ করে হাতে তুলে আল্লাহর কাছে চাওয়া।
তাহাজ্জুদের সময় বিশেষ দোয়া (সিজদায় পড়া যায়)
আরবি:
اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ذَنْبِي، وَوَسِّعْ لِي فِي دَارِي، وَبَارِكْ لِي فِيمَا رَزَقْتَنِي
বাংলা উচ্চারণ:
আল্লাহুম্মাগফিরলি জানবি, ওয়া ওয়াসসি’ লি ফি দারি, ওয়া বারিক লি ফিমা রাযাক্তানি।
অর্থ:
হে আল্লাহ! আমার গুনাহ মাফ করুন, আমার গৃহে প্রশস্ততা দিন, এবং যা রিজিক দিয়েছেন তাতে বরকত দিন।
(সুনান ইবনে মাজাহ: হাদিস ৩৮৪৬)
তাহাজ্জুদের দোয়ার উপকারিতা
- মনের ইচ্ছা পূরণের সম্ভাবনা সর্বোচ্চ।
- গুনাহ মাফ হওয়ার সুযোগ।
- অন্তরের প্রশান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ।
- জীবনে বরকত ও রহমত বৃদ্ধি।
কিছু বাস্তব টিপস মনের ইচ্ছা পূরণের জন্য
- দোয়ায় নির্দিষ্টভাবে প্রয়োজন উল্লেখ করা।
- নিজের ও পরিবারের জন্য কল্যাণ চাওয়া।
- দোয়ার আগে ও পরে আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফ পড়া।
- হারাম আয় ও কাজ থেকে বিরত থাকা।
খারাপ মানুষ থেকে বাঁচার দোয়া
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
তাহাজ্জুদের সময় কত রাকাত পড়া যায়?
কমপক্ষে ২ রাকাত, তবে ৮–১৩ রাকাত উত্তম।
শুধু দোয়া করলেই হবে, নামাজ না পড়লেও?
তাহাজ্জুদের আসল আমল হলো নামাজ, তবে নামাজ ছাড়াও এ সময় দোয়া করা কবুলের সম্ভাবনা রাখে।
মনের ইচ্ছা কি একবারেই পূরণ হয়?
আল্লাহ যেভাবে ভালো মনে করেন সেভাবেই কবুল করেন—তা তাৎক্ষণিক হতে পারে, দেরিতে হতে পারে, অথবা বদলে আরও ভালো কিছু দিতে পারেন।
উপসংহার
তাহাজ্জুদ নামাজ এমন এক ইবাদত, যেখানে বান্দা তার রবের কাছে সবচেয়ে নিকটে থাকে। এ সময়ের দোয়া খুব দ্রুত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তাই যে কোনো প্রয়োজন, স্বপ্ন বা ইচ্ছা পূরণের জন্য তাহাজ্জুদের সময় নামাজ ও দোয়া করা উচিত।
আজ থেকেই রাতের শেষ ভাগে উঠে তাহাজ্জুদ পড়া শুরু করুন এবং আপনার মনের ইচ্ছা আল্লাহর কাছে তুলে ধরুন — নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা।

