গোসল ইসলামি পবিত্রতার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। শরীরকে শারীরিকভাবে পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি এটি আধ্যাত্মিক পবিত্রতাও আনে। কিছু বিশেষ অবস্থায় মুসলিমদের জন্য গোসল ফরজ হয়ে যায়। এই ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম না জানলে নামাজ, তাওয়াফসহ অনেক ইবাদত গ্রহণযোগ্য হয় না। তাই একজন মুসলিমের জন্য ফরজ গোসলের নিয়ম, দোয়া ও সুন্নতি পদ্ধতি জানা অত্যন্ত জরুরি।
এখানে আপনি পাবেন:
ফরজ গোসল কার উপর ফরজ হয়
ইসলামি শরিয়তে কয়েকটি অবস্থায় গোসল ফরজ হয়ঃ
- যৌন মিলনের পর — বীর্যপাত হোক বা না হোক, স্বামী-স্ত্রীর মিলনের সময় গোসল ফরজ হয়।
- বীর্যপাত হলে — স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনার কারণে বীর্যপাত হলেও গোসল ফরজ হয়।
- ঋতুস্রাব শেষ হলে — নারীর মাসিক ঋতুস্রাব শেষ হওয়ার পর গোসল ফরজ।
- নিফাস শেষ হলে — সন্তান জন্মের পর চলমান রক্তস্রাব বন্ধ হলে।
- ইসলাম গ্রহণের পর — কেউ ইসলাম গ্রহণ করলে গোসল করা উত্তম, তবে বাধ্যতামূলক নয়; তবে যদি অপবিত্র অবস্থায় থাকে, তবে ফরজ হবে।
ফরজ গোসলের শর্ত (ফরজ অংশ)
ফরজ গোসলের সময় তিনটি কাজ অবশ্যই করতে হবে, এগুলো বাদ দিলে গোসল সম্পূর্ণ হবে না—
- মুখ ধোয়া — পানি মুখের ভিতরে নিয়ে ভালোভাবে কুলকুচি করা।
- নাক ধোয়া — পানি নাকে টেনে ভিতরের অংশ ধোয়া।
- সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো — মাথার চুলের গোড়া থেকে পায়ের আঙুল পর্যন্ত, শরীরের কোনো অংশ শুকনো না থাকা।
ফরজ গোসলের নিয়ম (সহিহ সুন্নতি পদ্ধতি)
রাসূলুল্লাহ ﷺ যেভাবে গোসল করতেন, তা অনুসরণ করাই উত্তম।
ধাপে ধাপে গোসলের নিয়মঃ
- নিয়ত করা
মনে মনে নিয়ত করবেন যে, ফরজ গোসল করে পবিত্র হচ্ছেন। মুখে নিয়ত বলা জরুরি নয়। - বিসমিল্লাহ পড়া
শুরুতে بِسْمِ اللّٰهِ বলা। - হাত ধোয়া
দু’হাত কবজি পর্যন্ত ধোয়া। - গোপনাঙ্গ পরিষ্কার করা
ডান হাতে পানি নিয়ে বাম হাত দিয়ে গোপনাঙ্গ ভালোভাবে ধোয়া। - অযু করা
নামাজের অযুর মতো সম্পূর্ণ অযু করা। তবে পা ধোয়া পরে করলেও হয়। - মাথা ধোয়া
মাথায় তিনবার পানি ঢেলে চুলের গোড়া পর্যন্ত পানি পৌঁছানো। - ডান ও বাম দিক ধোয়া
প্রথমে শরীরের ডান দিক, তারপর বাম দিক ধোয়া। - সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছানো
শরীরের এমন কোনো অংশ শুকনো না থাকে, তা নিশ্চিত করা। - পা ধোয়া
শেষে পা ধোয়া (যদি আগে না ধোয়া হয়)।
গোসলের সময় পড়ার দোয়া
গোসলের শুরুতে নিয়ত করা এবং বিসমিল্লাহ পড়া সুন্নত।
আরবি:
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ
বাংলা উচ্চারণ:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
অর্থ:
করুণাময় ও দয়ালু আল্লাহর নামে।
গোসলের পর দোয়া
গোসল শেষ করে অযুর মতোই এই দোয়া পড়া উত্তম—
আরবি:
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلَّا اللّٰهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
বাংলা উচ্চারণ:
আশহাদু আল্লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু, ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু।
অর্থ:
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তাঁর কোনো শরিক নেই, এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল।
গোসলের সময় ভুল এড়াতে হবে
- মুখ বা নাকে পানি না দেওয়া।
- চুলের গোড়ায় পানি না পৌঁছানো।
- শরীরের ভাঁজ বা আঙুলের ফাঁকে পানি না পৌঁছানো।
- শুধু পানিতে ডুব দিয়ে নিয়ম অনুযায়ী না ধোয়া।
ফরজ গোসলের উপকারিতা
- শরীরের পরিচ্ছন্নতা — জীবাণু ও ময়লা দূর হয়।
- ইবাদতের গ্রহণযোগ্যতা — নামাজ, তাওয়াফ ইত্যাদি শুদ্ধ হয়।
- মানসিক প্রশান্তি — সতেজ ও হালকা অনুভূতি আসে।
- আল্লাহর নৈকট্য — পবিত্রতা আল্লাহর কাছে প্রিয়।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)
শুধু পানিতে ডুব দিলেই কি গোসল হবে?
হ্যাঁ, যদি মুখ, নাক ও সমস্ত শরীরে পানি পৌঁছে যায়।
গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করা কি জরুরি?
না, তবে পরিচ্ছন্নতার জন্য ব্যবহার করা ভালো।
গোসলের আগে অযু করা কি ফরজ?
ফরজ নয়, তবে সুন্নত এবং উত্তম পদ্ধতি।
উপসংহার
ফরজ গোসল ইসলামে একটি গুরুত্বপূর্ণ পবিত্রতার আমল। এটি শুধু শারীরিক নয়, বরং আধ্যাত্মিকভাবে পরিষ্কার হওয়ারও উপায়। সহিহ হাদিসে বর্ণিত পদ্ধতিতে গোসল করলে নামাজ, তাওয়াফসহ সব ইবাদত সঠিকভাবে আদায় করা সম্ভব।
আজ থেকেই ফরজ গোসলের সঠিক নিয়ম শিখে নিন এবং পরিবার ও বন্ধুদেরও শেখান, যাতে সবাই সঠিকভাবে পবিত্র থেকে ইবাদত করতে পারে।

