বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

মানুষের জীবনে বিপদ-আপদ আসা স্বাভাবিক ঘটনা। কখনো শারীরিক কষ্ট, কখনো আর্থিক সংকট, আবার কখনো মানসিক অশান্তি আমাদের গ্রাস করে। ইসলামে বলা হয়েছে, বিপদের সময় আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা ঈমানের একটি বড় নিদর্শন। কুরআন ও সহিহ হাদিসে এমন অনেক দোয়া বর্ণিত হয়েছে যা বিপদ থেকে মুক্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমত লাভের পথ উন্মুক্ত করে।


বিপদে দোয়ার গুরুত্ব

বিপদের সময় দোয়া করা শুধু মানসিক প্রশান্তি দেয় না, বরং এটি আল্লাহর সাহায্য ও রহমত পাওয়ার অন্যতম মাধ্যম। কুরআনে আল্লাহ তাআলা বলেছেন — তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন — দোয়া ইবাদতের মূল। অর্থাৎ দোয়া একটি ইবাদত, যা বান্দাকে তার রবের সাথে সরাসরি সংযুক্ত করে।


সহিহ হাদিসে বর্ণিত বিপদ থেকে মুক্তির দোয়া

সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিমে বর্ণিত একটি দোয়া আছে যা হযরত ইউনুস (আ.) বিপদের সময় পড়েছিলেন। এটি “ইউনুস আলাইহিস সালামের দোয়া” নামে পরিচিত।

আরবি:
لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ

বাংলা উচ্চারণ:
লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ-জ্বালিমীন।

অর্থ:
আপনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই, আপনি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি অন্যায়কারীদের অন্তর্ভুক্ত।

রেফারেন্স:
কুরআন: সূরা আম্বিয়া 21:87
তিরমিজি, হাদিস: 3505

রাসূল ﷺ বলেছেন — যে কোনো মুসলিম এই দোয়া দিয়ে আল্লাহকে ডাকলে, আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দেন।


বিপদে পড়লে সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার

এটি একটি শ্রেষ্ঠ ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া যা বিপদে মুক্তি এবং গুনাহ মাফের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

আরবি:
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي، فَاغْفِرْ لِي، فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ

বাংলা উচ্চারণ:
আল্লা-হুম্মা আন্তা রব্বি লা ইলা-হা ইল্লা আনতা, খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা, ওয়া আনা ‘আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাতু, আউযু বিকা মিন শার্রি মা সনাতু, আবু’উ লাকা বি নি’মাতিকা ‘আলাইয়া, ওয়া আবু’উ বি-যাম্বি ফাগফিরলি ফা-ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয-যুনুবা ইল্লা আনতা।

অর্থ:
হে আল্লাহ! আপনি আমার রব্ব, আপনি ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি আপনার বান্দা। আমি আপনার অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতির ওপর আছি যতটা সম্ভব। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে। আমি স্বীকার করছি আপনার দেয়া নেয়ামতের কথা এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। তাই আমাকে ক্ষমা করুন, কারণ আপনার ছাড়া কেউ পাপ ক্ষমা করতে পারে না।

রেফারেন্স:
সহিহ বুখারি, হাদিস: 6306


বিপদ থেকে মুক্তির জন্য আরও কিছু দোয়া

১. সংক্ষিপ্ত দোয়া

আরবি:
حَسْبُنَا اللَّهُ وَنِعْمَ الْوَكِيلُ

অর্থ:
আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনি শ্রেষ্ঠ কর্মবিধায়ক।
সূরা আলে ইমরান 3:173


২. ভয়ের সময় পড়ার দোয়া

আরবি:
اللَّهُمَّ اكْفِنِيهِمْ بِمَا شِئْتَ

অর্থ:
হে আল্লাহ! আপনি যেভাবে চান তাদের থেকে আমাকে রক্ষা করুন।
সহিহ মুসলিম, হাদিস: 3005


দোয়া কবুলের শর্ত

দোয়া কবুলের জন্য কিছু শর্ত রয়েছে:

  1. খাঁটি নিয়ত থাকা, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দোয়া করা।

  2. হারাম উপার্জন, হারাম খাদ্য ও পোশাক থেকে বিরত থাকা।

  3. ধৈর্য ও আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা।

  4. সুখ-দুঃখ উভয় সময়েই দোয়া করা।


অভিশাপ থেকে বাঁচার দোয়া

উপসংহার

বিপদের সময় দোয়া করা একজন মুসলিমের জন্য আধ্যাত্মিক শক্তির উৎস। উপরোক্ত দোয়াগুলো কুরআন ও সহিহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হওয়ায় এগুলো পড়া ও আমল করা আমাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ পথ। নিয়মিত এই দোয়াগুলো পড়লে শুধু বিপদ নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর রহমত ও সাহায্য লাভ করা সম্ভব।

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী

মাওলানা ফাহিমুদ্দীন আল কাসেমী একজন প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ও লেখক, যিনি দীর্ঘদিন ধরে কুরআন-হাদীসভিত্তিক দোয়া, আমল ও ইসলামিক জীবনদর্শন নিয়ে লেখালেখি করে আসছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহকে আল্লাহর সান্নিধ্যে আরও ঘনিষ্ঠ করার উদ্দেশ্যে বিশুদ্ধ সূত্রভিত্তিক দোয়া এবং আত্মিক উন্নতির পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাঁর লেখা প্রতিটি দোয়া দলিলসমৃদ্ধ, বাস্তবভিত্তিক এবং সহজবোধ্য ভাষায় উপস্থাপিত, যেন পাঠক সহজেই আমলে নিতে পারেন। তিনি বিশ্বাস করেন – “প্রত্যেক হৃদয়ের একমাত্র পরিপূর্ণ প্রশান্তি হচ্ছে আল্লাহর জিকিরে”। তাই তাঁর প্রতিটি লেখা এই লক্ষ্যে নিবেদিত যে, পাঠক যেন দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের জন্য উপকৃত হন। লেখার বিষয়: ইসলামিক দোয়া, আমল, ফজিলত, কুরআনিক আয়াতভিত্তিক দোয়া, হাদীস থেকে সংগৃহীত দোয়া এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজনীয় দোয়া।

Leave a Comment